রাজস্থানের ‘এডুকেশন হাব’ কেন আত্মহত্যার কেন্দ্র হয়ে উঠছে?

উত্তর ভারতের রাজস্থানে ‘এডুকেশন হাব’ নামে খ্যাতি পাওয়া একটি শহর কোটা। তবে সম্প্রতি এই শহর আলোচনায় এসেছে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার জন্য। প্রশ্ন উঠেছে কেন এই শহরে দেশের শীর্ষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ার স্বপ্ন নিয়ে আসা শিক্ষার্থীরা একের পর এক আত্মহত্যা করছেন?
এই শহরে গত ১০ বছরে একশোর বেশি শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। এরমধ্যে শুধু এ বছরই মারা গেছেন ২৫ জন; যা এক বছরে সর্বোচ্চ আত্মহত্যার ঘটনা।
এ শহরে সফলতা খুব ভালোভাবে উদযাপন করা হয়। কিন্তু ব্যর্থতার গ্লানি কোনো শিক্ষার্থীকে ঠেলে দিতে পারে অন্ধকার গহ্বরে। এমন একজন শিক্ষার্থী হলেন বিজয়। তিনি বলেন, আপনি যখন দেখবেন আপনার সাথের প্রতিযোগীরা টেস্ট পরীক্ষায় আপনার চেয়ে ভালো নম্বর পাচ্ছে সেটা আপনার ওপর চাপ সৃষ্টি করবে। আপনি টেনশন করবেন, উদ্বেগ বাড়বে, বুকে ব্যথা হবে এবং আত্মহত্যার চিন্তাও আসবে।
বিজয় মানসিক চিকিৎসা নিয়েছেন এবং এখন আগের চেয়ে ভালো আছেন। কিন্তু সবার সেই সৌভাগ্য হয় না।
এই শহরেই আত্মহত্যা করা ১৫ বছরের এক কিশোরীর বাবা বলেন, সে পড়াশোনা নিয়ে কিছু বলেনি। কিন্তু কেউ আত্মহত্যা করেছে এরকম কিছু বলছিল। আমি তাকে বলি সব বাদ দিয়ে পড়াশোনায় মন দিতে। আমার দুইটা মেয়ে ছিল তাদের একজন এখন আর নেই।
আত্মহত্যা করা আরেক শিক্ষার্থী আদর্শ রাজ। তিনি ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু তার পরিবার জানায় কোচিং সেন্টারের একটা টেস্ট পরীক্ষায় কম নম্বর পাওয়ায় তিনি আত্মহত্যা করেন।
আদর্শের চাচা হরিশংকর প্রসাদ সিং বলেন, আমাদের ধারণা সে খারাপ ফলাফল করায় হতাশা থেকে এমন করেছে। কিন্তু আত্মহত্যা কখনোই কোনো সমস্যার সমাধান নয়।
একা একা থাকার কষ্ট, বাবা-মায়ের অতিরিক্ত প্রত্যাশা, পারিপার্শ্বিক চাপ এসব কিছুই কোটায় বসবাসকারী তরুণ ছেলে-মেয়েদের জীবন কঠিন করে দিয়েছে।
ডাক্তার হওয়ার আশা নিয়ে সম্প্রতি কোটায় থাকতে এসেছেন আয়নভ অনুরাগ নামে এক শিক্ষার্থী। শহরের অন্যান্য জায়গার চেয়ে ভাড়া কম এমন একটি জায়গায় তিনি থাকতে শুরু করেছেন। তিনি বলেন, এখানে বেশ চাপাচাপি করে থাকতে হয়। কিন্তু যখন আমি সফল হবো আমি এই রুমে আবারও ফেরত আসবো এবং হয়তো ভাববো এক সময় আমি এখানেই থেকেই পড়েছি ও কঠোর পরিশ্রম করেছি।
তরুণরা যাতে চাপ সামলাতে পারে সে জন্য রাজ্য সম্প্রতি বেশ কিছু বিধান চালু করেছে। কোচিং সেন্টারগুলোকে বলা হয়েছে যারা বেশি নম্বর পায় তাদের আলাদা করে তুলে না ধরতে এবং একই সাথে নবম গ্রেডের নিচের শিক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষা নিতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
এ রকম আইন কানুন প্রণয়ন ছাড়াও বিশেষজ্ঞরা মনে করেন এমন অনেক শিক্ষার্থীই আছেন যাদের এই মুহূর্তে জরুরি সাহায্যের প্রয়োজন।
সূত্র : বিবিসি।
এনএফ