দ্বিতীয় দফায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি এ মাসেই হতে পারে

গাজায় বন্দী ৫০ জিম্মির বিনিময়ে ইসরায়েলের কারাগার থেকে ১৫০ ফিলিস্তিনিকে মুক্তির শর্তে হামাস-ইসরায়েলের চারদিনের যুদ্ধবিরতির চুক্তি হয়েছে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) স্থানীয় সময় সকাল ১০টা থেকে এই চুক্তির বাস্তবায়ন শুরু হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে গাজার ক্ষমতাসীন শাসকগোষ্ঠী হামাস। এই যুদ্ধবিরতি চুক্তির মতোই চলতি মাসের শেষের দিকে হামাস-ইসরায়েলের মাঝে আরেক দফায় বন্দী বিনিময় চুক্তি হতে পারে বলে বুধবার ফিলিস্তিনের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ফিলিস্তিনি ওই কর্মকর্তা বলেছেন, দ্বিতীয় দফার বন্দী বিনিময়ের মাধ্যমে গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামলা চালিয়ে হামাস যে ২৪০ জনকে ধরে নিয়ে জিম্মি করেছে তার মধ্যে প্রায় ১০০ জন মুক্ত হবেন।
দুই দফায় ইসরায়েল মোট ৩০০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেবে। আর যে ৩০০ ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেবে ইসরায়েল বুধবার তার একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এই তালিকার সবাই ফিলিস্তিনের নারী এবং কিশোর।
বর্তমান চুক্তির আওতায় গাজা উপত্যকায় প্রায় সাত সপ্তাহ ধরে চলমান যুদ্ধে চার দিনের জন্য বিরতি দেবে ইসরায়েল। হামাসের কর্মকর্তা মুসা আবু মারজুক বলেছেনম হামাসের সাথে ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি চুক্তির বাস্তবায়ন আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) স্থানীয় সময় সকাল ১০টা থেকে শুরু হবে।
তিনি বলেছেন, হামাস এবং ইসরায়েলের মাঝে সাময়িক যুদ্ধবিরতি চুক্তি আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) সকাল ১০টা থেকে কার্যকর হবে। গাজায় বন্দী ৫০ জিম্মির মুক্তি ও চারদিনের যুদ্ধবিরতির শর্তে ইসরায়েল চুক্তিতে পৌঁছানোর ঘোষণা দেওয়ার পর হামাসের পক্ষ থেকে চুক্তিটি কার্যকরের সময় জানানো হয়েছে। হামাস যে জিম্মিদের মুক্তি দেবে, তাদের সবাই নারী এবং শিশু। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর কোনও সদস্যকে মুক্তি দেবে না হামাস।
হামাসের বিবৃতিতে যুদ্ধবিরতি চুক্তি কেমন হতে পারে সেই সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, প্রথমত গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলের আকাশে ইসরায়েলের সব ধরনের ড্রোন এবং যুদ্ধবিমানের কার্যক্রম চারদিনের জন্য পুরোপুরি বন্ধ থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। আর উত্তর গাজার আকাশে ইসরায়েলি ড্রোন ও বিমানের কার্যক্রম চুক্তির মেয়াদকালে প্রত্যেকদিন স্থানীয় সময় সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।
যুদ্ধবিরতির সময় গাজায় থাকা ইসরায়েলি সব সৈন্য এবং ট্যাংক তাদের অবস্থানে থাকবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। তবে বিরতি চলাকালে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী কারও ওপর হামলা অথবা কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারবে না। চুক্তি চলাকালে প্রত্যেকদিন মিসরের রাফাহ সীমান্ত ক্রসিং দিয়ে ত্রাণবাহী ২০০ লরি, চারটি জ্বালানি ট্যাংকার এবং চারটি গ্যাস বহনকারী লরি গাজায় প্রবেশের অনুমতি পাবে।
ফিলিস্তিনের ওই কর্মকর্তা বলেছেন, প্রথম দফার বন্দী বিনিময়ের পরপরই দ্বিতীয় দফার কার্যক্রম শুরু হবে। ১৫০ ফিলিস্তিনি (বন্দীর) বিনিময়ে ৫০ ইসরায়েলির (জিম্মি) মুক্তির ব্যবস্থা করতে তাদের চার থেকে পাঁচ দিন সময় লাগবে। তিনি বলেছেন, বন্দীদের মধ্যে বৃদ্ধ, নারী ও শিশু থাকবে এবং শর্ত একই থাকবে।
ইসরায়েলি কর্মকর্তারা তাৎক্ষণিকভাবে এই বিষয়টি নিশ্চিত করেননি। তবে ইসরায়েলের মন্ত্রিসভার এক বিবৃতিতে হামাসের হাত থেকে অতিরিক্ত ১০ জিম্মির মুক্তির জন্য যুদ্ধবিরতি এক দিন করে বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে ঢুকে শত শত ইসরায়েলিকে হত্যা এবং ২৪০ জনকে ধরে নিয়ে গাজায় জিম্মি করে রেখেছে হামাসের যোদ্ধারা। ওই দিন শুরু হওয়া যুদ্ধে ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় গাজায় ১৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনির প্রাণহানি ঘটেছে। আর হামাসের হামলায় ইসরায়েলে নিহত হয়েছেন ১ হাজার ২০০ জনের বেশি।
সূত্র: রয়টার্স, টাইমস অব ইসরায়েল।
এসএস