গাজায় যুদ্ধবিরতি : প্রথম দফায় মুক্তি দেওয়া হবে ১৩ জিম্মিকে

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতির প্রথম দিনে হামাসের হাতে থাকা জিম্মিদের মধ্যে ১৩ জনকে মুক্তি দেওয়া হবে। এই ১৩ জনের সবাই নারী এবং শিশু।
শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকাল ৪টায়, অর্থাৎ বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় জিম্মিদশা থেকে তারা মুক্তি পাবেন বলে বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশ কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিরলস প্রচেষ্টা, মধ্যপ্রাচ্যের দুই দেশ কাতার এবং মিসরের মধ্যস্থতা-দূতিয়ালি এবং ইসরায়েলের জনগণ ও জিম্মিদের পরিবারের চাপের মুখে গত ২১ নভেম্বর গাজায় চারদিনের একটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা। নভেম্বরের মাঝামাঝি কাতার ও মিসরের মধ্যেমে ইসরায়েলের কাছে প্রস্তাবটি পাঠিয়েছিল গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রনকারী গোষ্ঠী হামাস।
প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, যদি ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় চার দিনের যুদ্ধবিরতি, কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিদের মুক্তি, উপত্যকায় ত্রাণপণ্যবাহী ট্রাকগুলোকে প্রবেশ এবং আহত বেসামরিকদের উপত্যকার বাইরে গিয়ে চিকিৎসা গ্রহণের অনুমতি দেয়— তাহলে নিজেদের হাতে থাকা জিম্মিদের মধ্যে ৫০ জনকে হামাস মুক্তি দেবে।
সেই প্রস্তাবের ভিত্তিতেই আজ শুক্রবার থেকে চার দিনের যুদ্ধবিরতি শুরু হয়েছে গাজা উপত্যকায়। বিরতির এই চারদিনে গাজা উপত্যকায় বোমা বর্ষণ বন্ধ রাখবে বিমান বাহিনী; তবে বিকাল ৪টার পর থেকে পরের দিন বেলা ১০ টার আগ পর্যন্ত উপত্যকায় টহল দেবে ইসরায়েলি স্থল ও বিমান বাহিনীর সেনারা। পাশাপাশি হামাসের সামরিক শাখা আল কাসেম ব্রিগেড এই সময়সীমায় কোনো প্রকার হামলা না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শুক্রবার স্থানীয় সময় সকাল ৭টায় (বাংলাদেশ সময় বেলা ১১টা) বিরতি কার্যকর হওয়ার পরপরই রাফাহ সীমান্ত ক্রসিংয়ে অপেক্ষারত ত্রাণ, জ্বালানি ও মানবিক সহায়তা পণ্যবাহী ট্রাকগুলোর প্রবেশ শুরু হবে গাজা উপত্যকায়।
সেই সঙ্গে ইসরায়েলের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি কয়েক জন ফিলিস্তিনি নারী ও শিশুকেও আজ মুক্তি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে কাতার, তবে কতজনকে মুক্তি দেওয়া হবে— সে বিষয়ক সুনির্দিষ্ট কোনো সংখ্যার উল্লেখ নেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে।
গত ৭ অক্টোবর ভোরে ইসরায়েলে অতর্কিত হামলা চালায় গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা। উপত্যকার উত্তরাঞ্চলীয় ইরেজ সীমান্ত বেড়া ভেঙে ইসরায়েলে প্রবেশ করে নির্বিচারে সামরিক-বেসামরিক লোকজনকে হত্যা করে তারা। সেই সঙ্গে জিম্মি হিসেবে গাজায় ধরে নিয়ে যায় ২৪২ জনকে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, এই জিম্মিদের মধ্যে ইসরায়েলিদের সংখ্যা ১০৪ জন। বাকি ১৩৮ জনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, থাইল্যান্ড, জার্মানি, ফ্রান্স, আর্জেন্টিনা, রাশিয়া ও ইউক্রেনের নাগরিকরা রয়েছেন।
হামাসের এই হামলার জবাবে ৭ অক্টোবর থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী। ১৬ অক্টোবর থেকে সেই অভিযানে যোগ দেয় স্থল বাহিনীও।
ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে গাজায় নিহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১৪ হাজার। আর গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ইসরায়েলে নিহত হয়েছিলেন ১ হাজার ২০০ জন।
যুদ্ধের শুরুর দিকে হামাসের সামরিক শাখা আল কাসেম ব্রিগেড জানিয়েছিল, তাদের জিম্মায় প্রায় ২৫০ জন ইসরায়েলি রয়েছে। তবে পরে হামাস ঘোষণা করে, ইসরায়েলি বাহিনীর বোমা হামলার কারণে নিহত হয়েছেন বেশ কয়েক জন জিম্মি।
আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, ১৯৫৩ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর এই প্রথম এত বড় মাত্রার যুদ্ধ দেখছে মধ্যপ্রাচ্যের আল আকসা অঞ্চলে।
সূত্র : দ্য ন্যাশনাল
এসএমডব্লিউ