জ্বালানির দাম ৫০০ শতাংশ বৃদ্ধি করল কিউবা

ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি আর পণ্যের সরবরাহ সংকটে বিপর্যস্ত কিউবায় এক লাফে জ্বালানির দাম ৫০০ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। আর এতে কিউবানদের কপালে পড়েছে চিন্তার ভাঁজ, কীভাবে সামলাবেন জ্বালানির ব্যয়।
কমিউনিস্ট শাসিত এই দ্বীপ রাষ্ট্র নগদ অর্থ সংকটে ধুঁকছে। এর মাঝেই দেশটির সরকার বাজেট ঘাটতি কাটানোর জন্য কয়েকটি পদক্ষেপের অংশ হিসেবে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে জ্বালানির নতুন দাম নির্ধারণ করেছে। সোমবার দেশটির সরকার আগামী মাস থেকে জ্বালানির দাম পাঁচগুণ বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছে।
কিউবার সরকার বলেছে, নতুন মূল্য অনুযায়ী এক লিটার সাধারণ পেট্রোলের দাম ২৫ পেসো থেকে বেড়ে ১৩২ পেসো হবে। আর প্রিমিয়াম পেট্রোলের দাম ৩০ থেকে বেড়ে ১৫৬ পেসো হবে।
ডোমিঙ্গো ওং নামে দেশটির একজন বাসিন্দা ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, তার মোটরবাইকের জন্য সপ্তাহে দশ লিটার জ্বালানির প্রয়োজন। জ্বালানি কেনার জন্য তাকে এখন মাসিক বেতনের প্রায় অর্ধেকই ব্যয় করতে হবে।
পেশায় ভবনের নিরাপত্তা কর্মী ৫৭ বছর বয়সী এই কিউবান বলেছেন, বিশেষ কিছু না করেই এক সপ্তাহে আমার দশ লিটার পেট্রোলের ব্যবহার হয়। প্রত্যেক দিন কেবল কাজে যাওয়া, মেয়েকে স্কুলে পৌঁছে দেওয়া এবং আমার বোনের সাথে দেখা করা ছাড়া মোটরবাইকের ব্যবহার করি না। এএফপির সাথে কথা বলার সময় নিজের মোটরবাইকে জ্বালানি নেওয়ার জন্য একটি ফিলিং স্টেশনের লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি।
মঙ্গলবার দেশটির পরিবহন মন্ত্রী এডুয়ার্ডো রদ্রিগেজ বলেছেন, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এবং বেসরকারি কোম্পানিগুলো পাইকারি দামে জ্বালানি কিনতে পারবে। তাদেরকে ৫০ শতাংশ বেশি দামে জ্বালানি কিনতে হবে।
তিনি বলেন, বেশিরভাগ গণপরিহনের ভাড়া বর্তমানে যা রয়েছে, তাই থাকবে। তবে অভ্যন্তরীণ সব বিমানের টিকিট এবং আন্তঃপ্রদেশ বাস ভাড়ায় বিপুল বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
গত কয়েক বছরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞা ও সাম্প্রতিক করোনাভাইরাস মহামারির প্রভাব আর অর্থনৈতিক কাঠামোগত দুর্বলতার কারণে এক কোটি ১০ লাখ মানুষের এই দেশটি বর্তমানে সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি হয়েছে। ১৯৯০ এর দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকে এমন কঠিন অর্থনৈতিক সংকটে পড়েনি দেশটি।
কিউবার সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩ সালে দেশটির অর্থনীতি দুই শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। ওই বছর দেশটিতে মুদ্রাস্ফীতি ৩০ শতাংশে পৌঁছেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা সম্ভবত বাস্তবতার চেয়ে কম।
অর্থনীতিবিদ ওমর এভারলেনি পেরেজ এএফপিকে বলেছেন, বাকি বিশ্বের তুলনায় কিউবায় জ্বালানি সম্ভবত সস্তা। তবে দেশটির নাগরিকদের মাসিক বেতনের সাথে তুলনা করলে, তা অত্যন্ত ব্যয়বহুল।
জুয়ান আন্তোনিও ক্রুজাটা নামে দেশটির এক নাগরিক বলেন, ‘‘আমাদের ক্রয় ক্ষমতা ভালো নয়। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি আমাদের সবার ওপর প্রভাব ফেলবে।’’
কিউবার নাগরিকদের মাসিক গড় বেতন প্রায় ৪০ মার্কিন ডলারের সমান।
সূত্র: এএফপি।
এসএস