উত্তরপ্রদেশে মরদেহ সৎকার ব্যয় ১০ গুণ বেড়েছে

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে কাঁপছে ভারত। দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে প্রতিদিনই বাড়ছে সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা, সেই সঙ্গে বাড়ছে মরদেহ সৎকারের ব্যয়ও; তবে মরদেহ সৎকারে ব্যয়ের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি অরাজকতা চলছে উত্তরপ্রদেশে।
ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, পূর্বে যেখানে শ্মশানগুলোতে ৩ হাজার রুপিতে মৃতের সৎকার করা যেত, এখন সেই একই কাজে ৩০ হাজার রুপি পর্যন্ত দাবি করছে শ্মশান কর্তৃপক্ষ। পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন অবশ্য বলেছে, এই অরাজক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উত্তরপ্রদেশের অন্যতম প্রধান শহর বারানসীর সবচেয়ে বড় শ্মশানের নাম হরিশচন্দ্র ঘাট। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ভুক্তভোগী ভারতের দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেন, ‘গত ১৪ এপ্রিল আমার মাসি মারা গেছেন। হরিশচন্দ্র ঘাটে তার মরদেহ যখন সৎকারের জন্য নিয়ে এলাম, আমাকে সৎকার ব্যয় বাবদ গুনতে হয়েছে ২২ হাজার টাকা। শনিবার আমার নানি মারা যাওয়ার পর যখন তার দেহ সৎকারের জন্য নিয়ে এলাম, শ্মশান কর্তৃপক্ষ আমার কাছে ৩০ হাজার টাকা দাবি করেছে।’
‘আমি আপত্তি জানালে তারা বলেছে— আগের রেটের কথা ভুলে যান। দেখছেন না, কত মরদেহ পড়ে আছে এখনো?— অবশেষে আমাকে তাদের চাহিদা মতো টাকা দিতে হয়েছে।’
রাজেশ সিং নামের এক ব্যক্তির চাচা সম্প্রতি করোনায় মারা গেছেন। হরিশচন্দ্র ঘাটেই চাচার সৎকার করেছেন তিনি। টাইমস অব ইন্ডিয়াকে তিনি জানান, আগে শ্মশানে ৭/৮ হাজার রুপির মধ্যেই মরদেহ সৎকার করা যেত। সৎকারবাবদ দিতে হতো ৩ হাজার রুপি আর এ কাজে প্রয়োজনীয় সামগ্রী ক্রয়বাবদ খরচ হতো সাড়ে তিন থেকে ৪ হাজার রুপি।
কিন্তু সম্প্রতি সৎকার ব্যয়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে সামগ্রীর দামও। চার হাজার টাকার সামগ্রী এখন কিনতে হচ্ছে ১১ হাজার টাকায়।
টাইমস অব ইন্ডিয়াকে ক্ষোভ জানিয়ে রাজেশ বলেন, ‘তারপরও যদি ভালো জিনিস দিত, তাহলে শান্তি পেতাম। একে তো টাকা বেশি হাঁকছে, তার ওপর দিচ্ছে নিম্নমানের সামগ্রী। চাচার সৎকারের সময় এ নিয়ে আপত্তি জানালে তারা বলেছে— তাদের সামগ্রীতে আপত্তি থাকলে আমি যেন নিজে সামগ্রীর ব্যবস্থা করি কিংবা মরদেহ নিয়ে অন্য কোথাও চলে যাই।’
‘আমার কথা হচ্ছে— মরদেহ নিয়ে আমি কোথায় যাব? আর শুধু আমিই তো নই, আমার মতো আরো বহু মানুষ প্রতিদিন এই অরাজকতার শিকার হচ্ছেন।’
টাইমস অব ইন্ডিয়ার অনুসন্ধানে দেখা গেছে, উত্তর প্রদেশজুড়েই মরদেহ সৎকারে মৃতের আত্মীয়দের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছে শ্মশানগুলো। পাশপাশি গ্যাস সংকটের কারণে বেশিরভাগ ইলেকট্রিক ফার্নেস বন্ধ থাকা দিনকে দিন এই সংকট আরও ঘনীভূত হচ্ছে।
হরিশচন্দ্র ঘাট শ্মশান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, আগে প্রতিদিন শ্মশানে সর্বোচ্চ ২৫ থেকে ৩০ টি মরদেহ আসত। এখন প্রতিদিন আসছে ৫৫ থেকে ৬০ টি মরদেহ। কিন্তু শ্মশানে প্রয়োজনীয় লোকবল বাড়েনি, সামগ্রির যোগানও আগের মতোই আছে, ফলে সৎকার ব্যায় বৃদ্ধি পাওয়া ‘খুবই স্বাভাবিক’।
তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ইতোমধ্যে তৎপর হয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। বারানসি পুলিশের উপপরিদর্শক দীপক কুমার টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেন, ‘শ্মশানগুলোর কর্তৃপক্ষদের সঙ্গে সম্প্রতি স্থানীয় সরকার ও পৌরসভা কর্তৃপক্ষের বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে করোনায় আক্রান্ত মৃতদের সৎকারবাবদ ৭ হাজার টাকা ও সাধারণ মৃতদের সৎকারবাবদ ৫ হাজার টাকা প্রস্তাব করেছেন স্থানীয় সরকার ও পৌরসভার প্রতিনিধিরা।’
‘শ্মশান কর্তৃপক্ষরা এতে সম্মতিও দিয়েছে। খুব শিগগরই সৎকারব্যায়ের এই তালিকা শ্মশানগুলোতে টাঙিয়ে দেওয়া হবে।’
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
এসএমডব্লিউ