সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ইন্দোনেশিয়ায় আরও ১৩০ রোহিঙ্গা
সমুদ্র পাড়ি দিয়ে আরও ১৩০ জনেরও বেশি জাতিগত রোহিঙ্গা শরণার্থী ইন্দোনেশিয়ায় পৌঁছেছেন। বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিপুল সংখ্যক এসব রোহিঙ্গা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটির আচেহ প্রদেশে পৌঁছায়।
বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার ১৩০ জনেরও বেশি রোহিঙ্গা ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশের উপকূলে পৌঁছেছে বলে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটিতে মিয়ানমারের মুসলিম সংখ্যালঘুদের আগমন ব্যাপকভাবে বেড়েছে।
রয়টার্স বলছে, মিয়ানমারের নির্যাতিত ধর্মীয় সংখ্যালঘু রোহিঙ্গারা আচেহ প্রদেশের উপকূলে নামার সময় আচেহের স্থানীয়দের কাছ থেকে উপেক্ষা এবং শত্রুতার সম্মুখীন হয়েছে। গত বছরের অক্টোবর থেকে প্রায় ২ হাজার রোহিঙ্গা দেশটিতে পৌঁছেছেন বলে ইউএনএইচসিআরের তথ্যে দেখা গেছে।
ইন্দোনেশিয়ার ইউএনএইচসিআর-এর সুরক্ষা সহযোগী ফয়সাল রহমান বলেছেন, বৃহস্পতিবার সকালে ১৩০ জনেরও বেশি রোহিঙ্গা পূর্ব আচেহ এলাকায় পৌঁছেছেন।
মূলত গত কয়েক বছর ধরে রোহিঙ্গারা মিয়ানমার ছেড়ে যাচ্ছে। নিজেদের দেশেই তাদেরকে নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে এবং তাদের সাধারণত দক্ষিণ এশিয়া থেকে মিয়ানমারে অনুপ্রবেশকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। নাগরিকত্ব হারানোর পাশাপাশি মিয়ানমারে রোহিঙ্গারা জাতিগত নির্যাতনেরও শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
আর তাই খারাপ অবস্থা থেকে বাঁচতে রোহিঙ্গারা প্রায়ই প্রতিবেশী বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে থাকে। কেউ কেউ আবার নভেম্বর থেকে এপ্রিলের মধ্যে ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়ার দিকেও যাওয়ার চেষ্টা করেন। মূলত এই সময়টাতেই সমুদ্র অনেকটা শান্ত থাকে।
— Reuters (@Reuters) February 1, 2024
যদিও ইন্দোনেশিয়াতেও রোহিঙ্গারা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়েছেন। গত বছরের ডিসেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের একটি দল বান্দা আচেহ শহরের একটি কনভেনশন সেন্টারে হামলা চালায় এবং সেখানে আশ্রয় নেওয়া শত শত রোহিঙ্গাকে বিতাড়নের দাবি জানায়।
ইউএনএইচসিআর এই ঘটনাটিকে ‘জনতার আক্রমণ’ বলে অভিহিত করে। একইসঙ্গে ভুল তথ্য এবং ঘৃণামূলক বক্তব্যের সমন্বিত অনলাইন প্রচারের ফলাফল হিসেবে এই ঘটনা ঘটে বলেও জানায় সংস্থাটি।
ইউএনএইচসিআর গত মাসে বলেছে, ২০২৩ সালে মিয়ানমার বা বাংলাদেশ থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় কমপক্ষে ৫৬৯ জন রোহিঙ্গা মারা গেছে বা নিখোঁজ হয়েছে। যা ২০১৪ সালের পর থেকে সর্বোচ্চ।
এর আগে গত বছরের ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে আরও প্রায় ৪০০ জন জাতিগত রোহিঙ্গা শরণার্থী ইন্দোনেশিয়ায় পৌঁছায়।
সেসময় রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানায়, ইন্দোনেশিয়া ১৯৫১ সালের ইউনাইটেড নেশনস কনভেনশন অন রিফিউজিতে স্বাক্ষরকারী দেশ নয়। কিন্তু দেশটির উপকূলে শরণার্থীরা এসে পৌঁছালে তাদের আশ্রয় দেওয়ার ইতিহাস দেশটির রয়েছে।
কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বিপুল সংখ্যায় শরণার্থীদের আগমন সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে এবং আচেহ প্রদেশের স্থানীয় বাসিন্দারা কিছু শরণার্থীকে ফেরতও পাঠিয়েছে। মূলত আচেহ হচ্ছে ইন্দোনেশিয়ার সবচেয়ে পশ্চিমাঞ্চলীয় অঞ্চল যেখানে শরণার্থীদের বহনকারী বেশিরভাগ নৌকা পৌঁছে থাকে।
আরও পড়ুন
বস্তুত, মিয়ানমারের সংখ্যালঘু জাতিসত্ত্বা রোহিঙ্গাদের বিশ্বের সবচেয়ে নিপীড়িত জনগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে একটি বলে বিবেচনা করা হয়। ২০১৭ সালের পর এই ধারণা আরও বেশি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
২০১৭ সালে মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে সেনাবাহিনীর হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগের সামনে টিকতে না পেরে লাখ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশসহ আশপাশের বিভিন্ন দেশে পালাতে শুরু করে।
বাংলাদেশ সরকারের হিসাব অনুযায়ী, প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন।
এছাড়া প্রতি বছর নভেম্বর থেকে এপ্রিলের মধ্যে যখন সমুদ্র শান্ত হয়, তখন মিয়ানমারের নির্যাতিত সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সদস্যরা কাঠের নৌকায় করে প্রতিবেশী থাইল্যান্ড এবং মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় পাড়ি জমিয়ে থাকে।
টিএম