তুরস্কের স্থানীয় নির্বাচনে এরদোয়ানবিরোধীদের বিশাল জয়
তুরস্কের স্থানীয় নির্বাচনে বিশাল জয় পেয়েছে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এবং দেশটির প্রধান বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টি (সিএইচপি)। এক প্রতিবেদনে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থা আনাদোলু এজেন্সি জানিয়েছে, তুরস্কের ৮১টি প্রদেশের মধ্যে ৩৬টিতেই জয় পেয়েছে সিএইচপি।
এই ৩৬টি প্রদেশের মধ্যে রাজধানী আঙ্কারা, ঐতিহাসিক শহর ইস্তাম্বুলসহ এরদোয়ানের রাজনৈতিক দল জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের পার্টি (একেপি) ঘাঁটি বলে পরিচিত কয়েকটি প্রদেশও রয়েছে। বস্তুত ২০০১ সালে গঠিত হওয়ার পর এই প্রথম এত বড় ভরাডুবি ঘটল একেপির।
এরদোয়ানের জন্ম ইস্তাম্বুল শহরে। ১৯৯৪ সালে এ শহরের মেয়র নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে উত্থান ঘটে এরদোয়ানের। সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে সেই ইস্তাম্বুলেই এরদোয়ানের প্রার্থীকে ১০ লাখ ভোটের ব্যবধানে হারিয়েছেন সিএইচপির প্রার্থী একরেম ইমামোগ্লু।
নির্বাচনে জয়ের পর রোববার সন্ধ্যায় এক প্রতিক্রিয়ায় একরেম ইমামোগ্লু বলেন, ‘যারা জাতির আকাঙ্ক্ষা বুঝতে ব্যর্থ হয়, তাদের এমন পরিণতি হওয়া খুবই স্বাভাবিক। আজ তুরস্কের ১ কোটি ৬০ লাখ বাসিন্দা প্রেসিডেন্ট ও তার সমর্থকদের জবাব দিয়েছে।’
প্রায় ৯৫ শতাংশ ভোট পেয়ে রাজধানী আঙ্কারার নতুন মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন সিএইচপির নেতা মানসুর ইয়াভাস। তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘আগামীতে তুরস্ককে কারা নেতৃত্ব দেবে— তার উত্তর মিলল এই নির্বাচন থেকেই।’
তুরস্কের তৃতীয় বৃহত্তম শহর ইজমিরেও জয় পেয়েছে সিএইচপি।
নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর বিভিন্ন প্রদেশে আনন্দ মিছিল-শোভাযাত্রা বের করেন সিএইচপি সমর্থকরা। সবচেয়ে বড় শোভাযাত্রাটি হয়েছে ইস্তাম্বুলে। কয়েক লাখ মানুষ তাতে যোগ দিয়েছিলেন।
নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানও। রোববার সন্ধ্যায় ফলাফল ঘোষণার পর আঙ্কারায় নিজের সরকারি বাসভবনের ব্যালকনি থেকে দেওয়া এক সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে এরদোয়ান বলেন, ‘আমরা জনগণের রায় মেনে নিচ্ছি। আমাদের কিছু ভুল-ঘাটতি ছিল…সেসব আমরা সংশোধন করব।’
দেশটির নির্বাচন কমিশনসূত্রে জানা গেছে, এবারের স্থানীয় নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন তুরস্কের ৮১টি প্রদেশের ৬ কোটি ১০ লাখ ভোটার।
তুরস্কের রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, ডলারের বিপরীতে তুরস্কের মুদ্রা লিরার দফায় দফায় দরপতন এবং তার জেরে দেশটিতে দ্রব্যমূল্যের আকাশছোঁয়া উল্লম্ফণের জেরে তুরস্কের জনগণ এরদোয়ানের নেতৃত্বাধীন সরকারের ওপর ব্যাপকভাবে বিরক্ত। সেই বিরক্তিরই প্রকাশ ঘটেছে নির্বাচনের ফলাফলে।
ইস্তাম্বুলভিত্তিক থিংকট্যাঙ্ক সংস্থা এদেমের পরিচালক সিনান উলগেন মার্কিন সংবাদমাধ্যম এসোসিয়েটেড প্রেসকে বলেন, ‘যদি শিগগিরই অর্থনীতির গতি স্বাভাবিক না হয়, তাহলে ভবিষ্যতে জাতীয় নির্বাচনেও তার প্রভাব পড়বে।’
সূত্র : আনাদোলু এজেন্সি/ আলজাজিরা
এসএমডব্লিউ