গাড়ি চুরি থেকে ভুয়া বিচারক, ভারতের ‘মাস্টার চোরের’ জীবনের গল্প
৮৫ বছর বয়সে মারা গেছেন ভারতের ‘মাস্টার চোর’ খ্যাত ধনীরাম মিত্তাল। জীবনে ১ হাজারের বেশি অপরাধ করা ধনীরাম গত ১৮ এপ্রিল শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মারা যাওয়ার পর আবারও সামনে এসেছে ধনীরামের অপরাধ, জালিয়াতি এবং তার জীবনের গল্প।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, ১৯৩৯ সালে ভিওয়ানি জেলায় জন্মগ্রহণে করেন ধনীরাম। তিনি জীবনের শুরু থেকেই জালিয়াতিকে বেঁছে নেন। ১৯৬৮ সালে জালিয়াতির মাধ্যমে রেলের স্টেশন মাস্টারের চাকরি নেন তিনি। যা ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত করেন।
স্টেশন মাস্টারের চাকরি করা অবস্থায় হরিয়ানা আদালতে গাড়ি চুরি শুরু করেন তিনি। গাড়ি চুরি মূলত তার একটি নেশা ছিল। আদালত চত্বর থেকে গাড়ির চুরি করার সময় আদালত সম্পর্কে বেশ ভালো ধারণা তৈরি হয় তার। এরপর ১৯৭০ সাল থেকে ১৯৭৫ সালের যে কোনো একটি সময়ে তিনি ভুয়া চিঠি তৈরি করে হরিয়ানার ঝাজ্জার আদালতের অতিরিক্ত বিচারককে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠান। এরপর আরেকটি চিঠি নকল করে নিজে বিচারক হিসেবে আদালতে যোগ দেন।
ধনীরাম চোর ও প্রতারক হলেও তিনি শিক্ষিত ছিলেন। তার ছিল আইনের ডিগ্রি। ওই ডিগ্রিকে কাজে লাগিয়ে প্রায় দুই মাসের মতো বিচারকের কাজ করেন তিনি। এ সময় কয়েক হাজার মামলার রায় এবং অনেক অপরাধীকে জামিন দিয়ে দেন তিনি। এছাড়া অনেককে আবারও জেলেও পাঠান। রায় দেওয়ার মধ্যে তার বিরুদ্ধে হওয়া মামলাও ছিল।
তবে ধনীরাম বুঝতে পারেন ভুয়া বিচারক হিসেবে বেশিদিন আগাতে পারবেন না। এরপর তিনি সেখান থেকে সরে আসেন এবং হরিয়ানার পরিবহন বিভাগে ক্লার্ক হিসেবে যোগ দেন। সেখানে নকল লাইসেন্স বিক্রি করতেন তিনি।
তবে ভুয়া বিচারক ও ক্লার্ক পেশা ভালো না লাগায় একটা সময় কলকাতায় চলে যান। সেখানে গিয়ে গ্রাফোলোজির ওপর ডিগ্রি নেন। কিন্তু কোনো কিছুতেই মন না বসায় তিনি রোহতাকে ফিরে যান এবং আইন পেশায় মনোনিবেশ করেন।
১৯৬০ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত হরিয়ানা, পাঞ্জাব এবং রাজস্থানে ১৫০টি গাড়ি চুরির সঙ্গে সরাসরি তার নাম জড়িত ছিল। পুলিশ জানিয়েছে, ধনীরাম জীবনে এক হাজারের বেশি অপরাধ করেছেন।
ধনীরামের অপরাধের মাত্রা কমে আসতে থাকে ২০১৪ সাল থেকে ২০১৫ সাল থেকে। ওই সময় বৃদ্ধ হয়ে যান তিনি। কিন্তু তার অপরাধ করার প্রবনতা কমেনি। তবে জীবনের শেষ সময়ে এসে বয়স্ক হওয়ার কারণে বেশিদিন আর জেলে থাকতে হতো না তাকে।
সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস, টাইমস অব ইন্ডিয়া