টিকার মেধাস্বত্ব ছাড়ে আপত্তি জার্মানির

করোনা টিকার মেধাস্বত্ব ছাড়ে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) যে প্রস্তাবনা এসেছে, তাতে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন জানালেও আপত্তি জানিয়েছে জার্মানি। বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, টিকার ডোজের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য মেধাস্বত্ব ছাড়ের প্রয়োজন নেই।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বর্তমানে বিশ্বে করোনা টিকার ডোজের যে সংকট চলছে, তার সমাধান হচ্ছে টিকার উৎপাদান বাড়ানো। পেটেন্ট বা মেধাস্বত্ব ছাড় নয়। পেটেন্ট বা মেধাস্বত্ব নতুন আবিষ্কারের ক্ষেত্রে রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে এবং এটি যেমন রয়েছে, তেমনই থাকা উচিত।’
করোনা টিকা আবিষ্কারের পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তা উৎপাদনের অনুমোদন দেওয়ার জন্য ছয় মাস আগে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা বরাবর আবেদন করেছিল ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু এ ব্যাপারে এ দুটি রাষ্ট্রের প্রয়োজন ছিল যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ ডব্লিউটিওর সদস্যরাষ্ট্রগুলোর সম্মতি ও সুপারিশ।
সেই সুপারিশের জন্য ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকাসহ বিশ্বের প্রায় ৬০ দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অনুরোধ করেছিলেন; কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প এ বিষয়ে কোনো প্রকার সুপারিশ করতে তীব্র আপত্তি জানান।
তবে তার উত্তরসূরি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারে বলেছিলেন, তিনি ক্ষমতায় গেলে টিকা উৎপাদনে মেধাস্বত্ব ছাড়ে যতখানি সম্ভব বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহযোগিতা করবেন।
সেই অনুযায়ী টিকার মেধাস্বত্ব ছাড়ের ব্যাপারে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার প্রস্তাবনায় সমর্থন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বাইডেন প্রশাসন। বুধবার মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি ক্যাথরিন তাই এক বিবৃতিতে বাইডেন প্রশাসনের সাম্প্রতিক এই সিদ্ধান্ত জানান।
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের এই সিদ্ধান্ত সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেন বলেছিলেন, ইউরোপীয় করোনা টিকা উৎপাদনে মেধাস্বত্ব বা পেটেন্ট তুলে নেওয়া বিষয়ক আলোচনায় বসতে আগ্রহী।
ইইউ প্রেসিডেন্টের এই মন্তব্যের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বিবৃতি দিল ইউরোপীয় ইউনিয়নের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক শক্তি জার্মানি। ইইউয়ের অপর দুই প্রভাবশালী সদস্যরাষ্ট্র ফ্রান্স ও ইতালি অবশ্য জানিয়েছে, তারা টিকার মেধাস্বত্ব ছাড়ের প্রস্তাবনায় পূর্ণ সমর্থন দেবে। বিশ্বের বৃহত্তম দেশ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও জানিয়েছেন, মেধাস্বত্ব ছাড়ের প্রস্তাবনায় তার সমর্থন রয়েছে।
তুলনামূলকভাবে এই ইস্যুতে অনেকটা নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছে যুক্তরাজ্য। বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বর্তমান বিশ্বে যে সংকট দেখা দিয়েছে, তা সমাধানে সবার মিলিত প্রয়াস প্রয়োজন। এ কারণে ডব্লিউটিও যে সিদ্ধান্ত নেবে তা সমর্থন করবে যুক্তরাজ্য।
এদিকে, বুধবার যুক্তরাষ্ট্র যখন টিকার মেধাস্বত্ব ছাড়ে সমর্থন দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিল, তখনই হতাশা প্রকাশ করেছিল বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানিগুলোর ঐক্য সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব ফার্মাসিউটিক্যাল ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েশনন (আইএফএফএমএ)।
বৃহস্পতিবার সংস্থাটির প্রেসিডেন্ট টমান কুয়েনি বিবিসিকে জানান, যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তে ফেডারেশন গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তিনি আরো বলেন, টিকা উৎপাদনের পেটেন্ট বা মেধাস্বত্ব ছাড় নয়, বরং বিশ্বের উন্নত দেশগুলো টিকার যে বিপুল পরিমান ডোজ মজুত করেছে, সেগুলো বাইরে আনাই বর্তামন টিকার ডোজের সংকটের সমাধান।
বৃহস্পতিবার বিবিসিকে কুয়েনি বলেন, ‘উন্নত দেশগুলো যে পরিমাণ টিকার ডোজ মজুত করেছে, বর্তমান বিশ্বে টিকার ডোজের সংকটের প্রেক্ষিতে সেই ব্যাপারটি খুব হতাশাজনক। ওই ডোজগুলো বাইরে আনা প্রয়োজন। পাশাপাশি কোম্পানিগুলোর উৎপাদনও বাড়াতে হবে। এভাবেই টিকার ডোজের সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। মেধাস্বত্ব বা পেটেন্ট তুলে দেওয়া কোনো সমাধান নয়।
সূত্র: বিবিসি
এসএমডব্লিউ