করোনা বিপর্যয়ের দায় ডব্লিউএইচও-বিশ্ব নেতাদের : আইপিপিপিআর

বিশ্বে মহামারি করোনাভাইরাস সংক্রমণের যে বিপর্যয় ঘটেছে চাইলে তা ঠেকানো যেত। বুধবার স্বতন্ত্র একটি বৈশ্বিক প্যানেল বিশ্বজুড়ে করোনার প্রকোপ নিয়ে এমন উপসংহারই টেনেছে। প্যানেলটি বলেছে, করোনার প্রকোপ সম্পর্কে বিশ্বকে সতর্ক করা হলেও দ্বিধান্বিত অবস্থান, সতর্কতাকে উপেক্ষা ও দুর্বল সমন্বয়ের মতো ‘বিষাক্ত ককটেলের’ কারণে বিশ্বজুড়ে ভাইরাসটির প্রকোপ ঠেকানো যায়নি।
দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট প্যানেল ফল প্যান্ডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস অ্যান্ড রেসপন্স (আইপিপিপিআর) বলেছে, দফায় দফায় অনেক ভুল সিদ্ধান্ত ও সতকর্তাকে উপেক্ষার দরুণ এখন পর্যন্ত অন্তত ৩৩ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন এবং বিশ্ব অর্থনীতি ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে।
আইপিপিপিআর-এর দীর্ঘ প্রতীক্ষিত চূড়ান্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে, মানুষকে রক্ষায় প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যর্থ হয়েছে এবং বিজ্ঞান উপেক্ষাকারী নেতাদের হস্তক্ষেপের কারণে এ বিপর্যয় বিশ্ববাসীকে মারাত্মক এক বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিয়েছে।
বৈশ্বিক এই প্যানেল বলছে, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে করোনার সংক্রমণ প্রথম শনাক্ত হয়েছিল তখন তা নিয়ে প্রাথমিক অবস্থায় যেসব জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা থাকলেও তার ঘাটতি ছিল। এরপর ফেব্রুয়ারিতে দেশে দেশে সতর্কতাকে আমলে নেওয়া হয়নি। ফলে সব মিলিয়ে বিশ্বজুড়ে এই ভাইরাস মহামারি প্রকোপ ছড়িয়েছে। অথচ চাইলে বিশ্বজুড়ে এর প্রাদুর্ভাব ঠেকানো যেত।
বর্তমানে মহামারি পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্যানেলটি ধনী দেশগুলোকে দরিদ্র দেশগুলোতে শত কোটি টিকার ডোজ দান করার আহ্বানও জানিয়েছে। এছাড়া আসন্ন মহামারির প্রস্তুতি নিতে বিশ্বের ধনী দেশগুলোকে নতুন করে বিকল্প কোন সংস্থা গঠনের পরামর্শও দিয়েছে।
গত মে মাসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সদস্য দেশগুলো রিপোর্টটি প্রকাশের অনুরোধ জানায়। যৌথভাবে প্যানেলটির প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন নিউজিল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী হেলেন ক্লার্ক ও লাইবেরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট এলেন জনসন সিরলেফ; যিনি ২০১১ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন।
‘কোভিড-১৯: মেক ইট দ্য লাস্ট প্যান্ডেমিক’ অর্থাৎ কোভিড-১৯-ই যেন হয় বিশ্বের সর্বশেষ মহামারি শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে এ রকম আরও কোনো বিপর্যয় ঠেকানোর জন্য বিশ্বের আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা জোরালো করার ওপর গুরুত্বারোপ করার দাবি তোলা হয়েছে।
প্যানেলটির প্রধান লাইবেরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট এলেন জনসন সিরলেফ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা আজকে যে এমন মহামারির মুখে পড়েছি তাই চাইলে ঠেকানো যেত। কিন্তু দেশে দেশে রাষ্ট্রনেতাদের ব্যর্থতা ও শূন্যতা এবং প্রস্তুতি ও মোকাবিলার মতো অগণিত পদক্ষেপ নিতে বিলম্বের কারণে গোটা বিশ্ববাসীকে আজ এই মহা বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে।’
মহামারি মোকাবিলায় এই প্যানেল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকেও ছাড় দেয়নি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই সংস্থাটি জানুয়ারির ২২ তারিখেই মহামারি নিয়ে তাদের সর্বোচ্চ সতর্কতা পাবলিক হেলথ ইমারজেন্সি অব ইন্টারন্যাশনাল কনসার্ন (পিএইচইআইসি) ঘোষণা করতে পারতো। কিন্তু তারা সেটা করেনি। বৈশ্বিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দেখভাল করা বিশেষজ্ঞ এই সংস্থাও এক্ষেত্রে বেশ কিছু দিন বিলম্ব করেছে।
এএস