ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত: যুক্তরাষ্ট্রকে নিন্দা চীনের

ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের মধ্যকার সাম্প্রতিক দ্বন্দ্বে ইসরায়েলের প্রতি পক্ষপাতিত্বের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের নিন্দা করেছে চীন। দীর্ঘ কয়েক দশকজুড়ে চলা এই দ্বন্দ্ব নিরসনে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে আহ্বান জানিয়েছে দেশটি।
এতদিন পর্যন্ত জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ যে এই সংকট সমাধান করতে পারেনি, তার দায়ও যুক্তরাষ্ট্রের বলে মনে করে চীন।
রোববার চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত্ব বার্তাসংস্থা সিনহুয়াকে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রী ওয়াং ই বলেন, ‘ওই অঞ্চলে যে সংকট চলছে, দু’পক্ষের মধ্যে সমঝোতার মাধ্যমে অনেক আগেই তা সমাধান করতে পারত নিরাপত্তা পরিষদ। দুঃখজনক হলেও সত্য, তা এখনও করা যায়নি, আর এর প্রধান কারণ— যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচারের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে।’
‘চীন মনে করে, সেখানকার পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়া বা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আগেই নিরাপত্তা পরিষদের (এ বিষয়ে) উদ্যোগী হওয়া উচিত।’
ফিলিস্তিনের গাজা অঞ্চলে ইসরায়েলি বসতকারীদের অবৈধ দখলদারিত্ব ও স্থানীয় ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদের প্রতিবাদে গত কয়েক মাস ধরে আন্দোলন করে আসছিলেন গাজা অঞ্চলে বসবাসরত ফিলিস্তিনিরা। তবে বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে যে সংঘাত চলছে, তার সূত্রপাত ঘটে গত ০৯ মে।
ওই দিন ছিল ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের জন্য পবিত্র শবে কদরের (লায়লাতুল কদর) রাত। ০৯ মে রাতে জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদে শবে কদরের (লায়লাতুল কদর) নামাজ আদায় শেষে মসজিদ চত্বরে বিক্ষোভ শুরু করেন সেখানে উপস্থিত ফিলিস্তিনি মুসল্লিরা। স্বাভাবিকভাবেই তা দমাতে তৎপর হয়ে ওঠে ইসরায়েলের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এ সময় বিক্ষোভকারী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যকার সংঘাতে আহত হন অন্তত ৯০ জন ফিলিস্তিনি। সংঘাতের পর থেকে আল-আকসা মসজিদ ও এর সংলগ্ন এলাকা ঘিরে রেখেছিল ইসরায়েলি পুলিশ।
এর জেরে ফিলিস্তিনের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল হামাস হুমকি দেয় ইসরায়েলের ক্ষমতাসীন সরকারকে। হামাসের পক্ষ থেকে আল্টিমেটাম দিয়ে বলা হয়, ১০ মে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে মসজিদ চত্বর থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের প্রত্যাহার না করা হলে তার পরিণতির জন্য ইসরায়েল সরকার দায়ী থাকবে।
ইসরায়েল এই হুমকিকে আমল না দেওয়ায় ১০ মে সন্ধ্যার পর গাজা থেকে ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে রকেট হামলা শুরু করে হামাস। সেই হামলা এখনও অব্যাহত আছে। ফরাসী বার্তা সংস্থা এএফপি বলছে, সোমবার থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলে দেড় হাজারের বেশি রকেট নিক্ষেপ করেছে হামাস।
এদিকে, হামাস রকেট হামলা শুরু করার অল্প কিছু সময় পর থেকেই গাজায় ফিলিস্তিনি ঘণবসতিপূর্ণ এলাকাগুলো লক্ষ্য করে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী, যা এখনও চলছে।
গাজার স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বিমান হামলা ও আর্টিলারি গোলার আঘাতে এ পযর্ন্ত নিহত হয়েছেন অন্তত দেড়শ ফিলিস্তিনি, যার মধ্যে ৪১ জন শিশুও আছে। আহত হয়েছেন ৯৫০ জনেরও বেশি।
অন্যদিকে, ইসরায়েল সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, হামাসের ছোড়া রকেটে এ পর্যন্ত প্রাণ গেছে ১০ ইসরায়েলি নাগরিকের।
আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০১৪ সালে গাজায় ইসরায়েলিদের সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের সাত সপ্তাহের যুদ্ধের পর এবারই সবচেয়ে বড় ধরনের সংঘাত হচ্ছে।
সূত্র: আল জাজিরা
এসএমডব্লিউ