টিকার রমরমা বাণিজ্যে নতুন ৯ বিলিয়নিয়ার পেল বিশ্ব

বিশ্বজুড়ে করোনা টিকার বাণিজ্যে ব্যাপকভাবে লাভবান হয়েছে টিকার ডোজ প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলো। গত বছরের শেষ থেকে শুরু হওয়া এই বাণিজ্য অন্তত ৯ জনকে বিলিয়নিয়ারে পরিণত করেছে।
মেধাস্বত্ত্ব আইনের আওতায় টিকার ডোজ উৎপাদনের ওপর কোম্পানিগুলোর একক কর্তৃত্ব বাতিল এবং বিশ্বের সব মানুষকে টিকার ডোজ বিতরণের দাবি তোলা জোট পিপল’স ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স বুধবার এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ম্যাগাজিন ফোর্বসের সাম্প্রতিক ধনী ব্যক্তিদের তালিকার বরাত দেয়ে বিবৃতিতে পিপল’স ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্সের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘এই ৯ ধনী ব্যক্তির সম্মিলিত অর্থের পরিমাণ ১৯ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার (১৫ দশমিক ৮ মিলিয়ন ইউরো)। এই পরিমাণ অর্থে বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোতে বসবাস করা সব মানুষকে অনায়াসে ১ দশমিক ৩ বার করোনা টিকার দুই ডোজ দেওয়া সম্ভব।’
পিপল’স ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্সের বিবৃতিতে ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় টিকা প্রস্তুতকারী কোম্পানি মডার্নার প্রধান নির্বাহী স্টেফান ব্যানসেল ও বায়োএনটেকের প্রধান নির্বাহী উগুর সাহিনের নাম আছে। এছাড়া চীনের করোনা টিকা সিনোভ্যাক প্রস্তুতকারী কোম্পানি ক্যানসিনোর প্রধান তিন নির্বাহীর নামও উল্লেখ করা হয়েছে নব্য বিলিয়নিয়ার হিসেবে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক বৈশ্বিক দাতব্য সংস্থা অক্সফাম পিপল’স ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স নামের এই জোটটির অন্যতম সদস্য। অক্সফামের কর্মকর্তা আন্না ম্যারিয়ট ফ্রান্সের বার্তাসংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘টিকা কোম্পানিগুলো এক বছরে কী পরিমাণ মুনাফা করেছে, এই নয় জন হচ্ছেন তার একটি ছোট্ট প্রমাণ। যদি টিকা প্রস্তুতের ওপর কোম্পানিগুলোর একক কৃর্তৃত্ব বজায় থাকে, অদূর ভবিষ্যতে এই সংখ্যা আরো বাড়বে।’
আন্না ম্যারিয়ট আরও বলেন, ‘যখন ভারতে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ করোনায় মারা যাচ্ছে, তখন টিকার মেধাস্বত্বকে রক্ষা করে ওষুধ কোম্পানির মালিকদের বিলিয়নিয়ার হওয়ার সুযোগ দেওয়া খুবই দুঃখজনক ও অবান্তর একটি ব্যাপার।’
বিবৃতিতে বলা হয়, এই ৯ বিলিওনিয়ারের মধ্যে আটজনই সম্পদশালী হয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর।
জি২০ বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সম্মেলন শেষ হওয়ার পর টিকার বাণিজ্যের মাধ্যমে বনে যাওয়া বিলিয়নারদের নাম ও সম্পদের পরিমাণ প্রকাশ করেছিল ফোর্বস। বিশ্বজুড়ে করোনা টিকা উৎপাদনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা মেধাস্বত্ব আইনের (পেটেন্ট ল) বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলাই ছিল এই তালিকা প্রকাশের পরোক্ষ উদ্দেশ্য।
করোনা টিকা আবিষ্কারের পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তা উৎপাদনের অনুমোদন দেওয়ার জন্য ছয় মাস আগে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা বরাবর আবেদন করেছিল ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু এক্ষেত্রে তাদের প্রয়োজন ছিল বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) প্রভাবশালী সদস্যরাষ্ট্রগুলোর অনুমোদন।
গত ৫ মে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, টিকার মেধাস্বত্ব ছাড় বিষয়ক ডব্লিউটিওর কার্যতালিকায় উঠলে তাতে সম্মতি ও সমর্থন দেবে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বাণিজ্যিক প্রতিনিধি ক্যাথরিন তাই এক বিবৃতিতে বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি ও টিকার ডোজের ঘাটতি দেখা দেওয়ায় বাইডেন প্রশাসন এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে।
কিন্তু তার একদিন পর ৬ মে এই প্রস্তাবে আপত্তি জানায় ইউরোপের সবচেয়ে সমৃদ্ধ অর্থনীতির দেশ জার্মানি। দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, টিকার ডোজের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য মেধাস্বত্ব ছাড়ের প্রয়োজন নেই।
তবে জার্মানির প্রতিবেশী ও ইউরোপের অন্যতম প্রভাবশালী দেশ ফ্রান্স টিকার ডোজ উৎপাদনের ওপর থেকে মেধাস্বত্ত্ব প্রত্যাহারে সমর্থন দেবে বলে জানিয়েছে। প্যারিসে সদ্য শেষ হওয়া জি২০ বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সম্মেলনে দেশটির প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে করোনা টিকা উৎপাদনের ক্ষেত্রে যে বাধাগুলো রয়েছে সেগুলো দূর করা প্রয়োজন।’
সূত্র: এএফপি
এসএমডব্লিউ