ইউক্রেনের ২০১৪ থেকে হারানো এলাকা ফিরে পাওয়ার আশা ‘অবাস্তব’

ইউক্রেনের ২০১৪ সাল থেকে হারানো এলাকা ফিরে পাওয়ার আশাকে অবাস্তব বলে অভিহিত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ। তিনি বলেছেন, ইউক্রেন তার ২০১৪ সালের পূর্ববর্তী সীমান্ত ফিরে পাওয়ার যে আশা করছে, তা “অবাস্তব লক্ষ্য”।
এমনকি সামরিক জোট ন্যাটোতে কিয়েভের সদস্যপদ লাভ রাশিয়ার সাথে আলোচনার মাধ্যমে তিন বছর ধরে চলা যুদ্ধের সমাপ্তির কোনও “বাস্তবসম্মত ফলাফল” হতে পারে বলে যুক্তরাষ্ট্র মনে করে না বলেও জানিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) পৃথক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স এবং সংবাদমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকা।
ব্রাসেলসে ন্যাটো সদর দপ্তরে জোটের মিত্রদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখার সময় হেগসেথ অন্যান্য প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের বলেন, “আপনাদের মতো আমরাও একটি সার্বভৌম এবং সমৃদ্ধ ইউক্রেন দেখতে চাই। কিন্তু আমাদের শুরু করতে হবে এটা স্বীকার করে যে— ইউক্রেনের ২০১৪ সালের পূর্ববর্তী সীমান্তে ফিরে যাওয়া একটি অবাস্তব লক্ষ্য। এই মরীচিকার পেছনে ছুটলে যুদ্ধ শুধুই দীর্ঘায়িত হবে এবং কষ্ট আরও বাড়বে।”
এখনও কোন শান্তি আলোচনার আয়োজন করা হয়নি, তবে হেগসেথ বলেন— যুদ্ধের টেকসই সমাপ্তি টানতে হলে সেখানে “শক্তিশালী নিরাপত্তা গ্যারান্টি থাকতে হবে, যা নিশ্চিত করবে যে যুদ্ধ আবারও শুরু হবে না।”
তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে না যে, ন্যাটোতে কিয়েভের সদস্যপদ লাভ আলোচনার মাধ্যমে মীমাংসার একটি বাস্তবসম্মত ফলাফল হতে পারে”। এই ধরনের ফলাফল সামরিক এই জোটের পারস্পরিক প্রতিরক্ষার বিধান বাস্তবায়নের প্রয়োজন সৃষ্টি করবে, যার মাধ্যমে ন্যাটোর ৩২টি সদস্য রাষ্ট্রের যে কেউ আক্রান্ত হলে অন্যরা তাদের পক্ষে লড়াই করতে বাধ্য।
মূলত ইউক্রেন অনেক দিন ধরে ন্যাটোর সদস্য হতে চাইছে। জোটের অন্যান্য সদস্যরা বলছে, তারা কিয়েভের এই ইচ্ছার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ, কিন্তু সেটা যুদ্ধ চলাকালে নয়। তবে এই মতের পরিবর্তে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী হেগসেথ বলেন, ইউক্রেনের জন্য নিরাপত্তা গ্যারান্টি “শক্তিশালী ইউরোপিয়ান এবং ইউরোপিয়ান নয়, এমন সেনাদের মাধ্যমে” নিশ্চিত করা যায়।
আরও পড়ুন
তিনি বলেন, “এই সৈন্যদের যদি কোনও এক সময়ে ইউক্রেনে শান্তিরক্ষী হিসেবে মোতায়েন করা হয়, তাহলে তাদের একটি ন্যাটো-বহির্ভূত মিশনের অংশ হিসেবে মোতায়েন করা উচিত এবং তারা আর্টিকেল-৫ এর আওতায় পড়বে না”।
মূলত ন্যাটোর পারস্পরিক প্রতিরক্ষার বিধান আর্টিকল-৫ নামে পরিচিত।
উল্লেখ্য, রাশিয়া ২০১৪ সালে রুশপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমর্থনে ইউক্রেনের ক্রিমিয়া দখল করে নেয়। বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে কিয়েভের বাহিনীর সাথে লড়াই করছে। আর রাশিয়া ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পূর্ব ইউরোপের এই দেশটিতে সামরিক অভিযান শুরু করে।
রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর সর্বাত্মক হামলা শুরুর পর থেকে ইউক্রেনে হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। প্রায় তিন বছর ধরে চলা এই যুদ্ধে ইউক্রেনের দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, খেরসন ও জাপোরিঝিয়া— চারটি প্রদেশের আংশিক দখল নিয়েছে রুশ বাহিনী।
এই চার প্রদেশের রাশিয়ার দখলে যাওয়া অংশের সম্মিলিত আয়তন ইউক্রেনের মোট ভূখণ্ডের এক-পঞ্চমাংশ। অর্থাৎ রাশিয়া বর্তমানে ইউক্রেনের ২০ শতাংশ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে।
টিএম