ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর শীর্ষে বাংলাদেশিরা

অনিয়মিত পথে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে অভিবাসী আসার প্রবণতা গত বছরের প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে অন্তত ৩১ শতাংশ কমেছে। তবে সেন্ট্রাল ভূমধ্যসাগরীয় রুট হয়ে আসা অভিবাসীদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছেন বাংলাদেশিরা।
ইউরোপীয় সীমান্ত সংস্থা ফ্রন্টেক্স এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে। সংস্থাটি বলেছে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত সাতটি সীমান্ত দিয়ে ৪৪ হাজার ৭১৯ জন অনিয়মিত অভিবাসী ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এসেছেন। সংখ্যাটি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৩ হাজার ৬০০ বা ৩১ শতাংশ কম।
সাতটি অভিবাসন রুটের তথ্য নিয়ে পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে ফ্রন্টেক্স। রুটগুলো হলো: পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় রুট, পশ্চিম আফ্রিকান রুট, সেন্ট্রাল ভূমধ্যসাগরীয় রুট, পশ্চিম বলকান রুট, পশ্চিম ভূমধ্যসাগরীয় রুট, পূর্বাঞ্চলীয় স্থল রুট এবং যুক্তরাজ্যমুখী রুট।
— Frontex (@Frontex) April 11, 2025
ফ্রন্টেক্সের এমন পরিসংখ্যানে ইউরোপীয় দেশগুলো কিছুটা স্বস্তিতে থাকলেও ভিন্ন কথা বলছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো। ইইউ নীতিগুলোকে দায়ী করেছে তারা। বলছে, তিউনিশিয়া ও লিবিয়ার মতো দেশগুলোতে অভিবাসীদের ওপর যে অন্যায়, নিপীড়ন চলছে, তা জেনেও চোখ বন্ধ রেখেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
বছরের প্রথম তিন মাসে অভিবাসী আসার হার সবচেয়ে বেশি ৬৪ শতাংশ কমেছে পশ্চিম বলকান রুটে। আলবেনিয়া, সার্বিয়া, মন্টিনিগ্রো এবং উত্তর মেসিডোনিয়া মিলিয়ে পশ্চিম বলকান রুট হয়ে আসা অভিবাসীর সংখ্যা দুই হাজার ১১১।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে পূর্ব স্থল সীমান্ত অংশে অভিবাসী আসার সবচেয়ে কম কমেছে। তবে যুক্তরাজ্যমুখী অভিবাসীর সংখ্যা কমেছে মাত্র চার শতাংশ।
এ বছর এখন পর্যন্ত অনিয়মিত অভিবাসনের জন্য পূর্ব ভূমধ্যসাগর এবং পশ্চিম আফ্রিকান রুট দুটি সবচেয়ে বেশি সক্রিয় রয়েছে। পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অভিবাসন রুট হয়ে জানুয়ারী থেকে মার্চের মধ্যে সর্বোচ্চ নয় হাজার ৬৩০ জন অভিবাসী এসেছেন। এই পথে আসা অভিবাসীদের মধ্যে আফগানিস্তান, মিশর এবং সুদানের অভিবাসীদের সংখ্যা ছিল সবচেয়ে বেশি। তারপরও গত বছরের একই সময়ের তুলনায় সংখ্যাটি ২৯ শতাংশ কম।
পশ্চিম আফ্রিকান রুটের অবস্থান দ্বিতীয়। প্রথম প্রান্তিকে নয় হাজার দুইশ জন অভিবাসী এসেছেন এই পথ ধরে। ২০২৪ সালের প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় ৩০ শতাংশ কমেছে। এই পথে সংখ্যায় বেশি এসেছেন মালি, সেনেগাল ও গিনির অভিবাসীরা।
• শীর্ষে বাংলাদেশিরা
সেন্ট্রাল ভূমধ্যসাগরীয় রুট হয়ে ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে সাড়ে আট হাজার অভিবাসী এসেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে। এর বড় অংশটি ঢুকেছেন ইতালিতে। ২০২৪ সালের প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় অবশ্য এবার আসা অভিবাসীর সংখ্যা ২৬ ভাগ কম। ফ্রন্টেক্স বলছে, সংখ্যা কমার পেছনে আবহাওয়া ছিল বড় কারণ।
এই পথে আসা অভিবাসীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি এসেছেন বাংলাদেশিরা। এর পরই রয়েছেন পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের নাগরিকরা।
এই পথে অনেক অভিবাসী সমুদ্র পাড়ি দিতে মানবপাচারকারীদের ওপর নির্ভর করেন। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএম বলেছে, ২০২৫ সালের প্রথম তিন মাসে ৩৮৫ জন সমুদ্রে প্রাণ হারিয়েছেন।
ইতালির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যানও বলছে, চলতি বছরের ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত ১২ হাজার ৪ জন অভিবাসী ইতালি পৌঁছেছেন। এই সংখ্যা গত দুই বছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে। ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত দেশটিতে এসেছিলেন ৩৩ হাজার ৭২০ জন অভিবাসী। আর ২০২৪ সালের একই সময়ে এই সংখ্যা ছিল ১৬ হাজার ৯০।
চলতি বছর ইতালিতে আসা অভিবাসীদের মধ্যে সবার শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত চার হাজার ৩৯৫ জন বাংলাদেশি নাগরিক সমুদ্রপথে ইতালি পৌঁছেছেন। বাংলাদেশের পরই রয়েছে পাকিস্তান। দেশটির এক হাজার ৪৮৭ জন নাগরিক এই সময়ে ইতালি পৌঁছেছেন।
এসএস