মিয়ানমারে যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়াতে সম্মত জান্তা ও জান্তাবিরোধীরা

সাম্প্রতিক ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর উদ্ধার তৎপরতা এবং জনগণের কাছে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দিতে ২ এপ্রিল যে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছিল মিয়ানমারে ক্ষমতাসীন জান্তা, তার মেয়াদ আরও বাড়াতে জান্তা ও দেশটির প্রধান বিরোধী দল ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট (নাগ) উভয়েই সম্মতি দিয়েছে।
শুক্রবার মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার ১০ দেশের জোট আসিয়ানের বর্তমান চেয়ারম্যান আনোয়ার ইব্রাহিম। মিয়ানমার ও মালয়েশিয়া ব্যাতীত এই জোটের অন্য আট সদস্যরাষ্ট্র হলো ব্রুনেই, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম।
সংবাদ সম্মেলনে আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে মিয়ানমারের জান্তাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লেইং এবং দেশটির প্রধান বিরোধী জোট ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্টের (নাগ) প্রতিনিধির সঙ্গে পৃথকভাবে বৈঠক করেছেন তিনি। বৈঠকে উভয়েই যুদ্ধবিরতির মেয়াদ আরও বাড়ানোর পক্ষে মত দিয়েছেন।
“মিয়ানমারের সরকারপ্রধান এবং বিরোধীদলীয় জোট নাগের সঙ্গে আমার গতকালের বৈঠক খুবই সফল হয়েছে। তারা উভয়েই মিয়ানমারে যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়াতে সম্মতি দিয়েছেন। তাই আমরা আশা করছি যে এখন থেকে আপাতত মিয়ানমারে কোনো অপ্রয়োজনীয় উসকানিমূলক পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে না। কারণ যদি তা ঘটে, তাহলে সেখানে সব ধরণের মানবিক তৎপরতা ব্যর্থ হবে,” বলেছেন আনোয়ার ইব্রাহিম।
আরও পড়ুন
২০২২ সালে ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন এনএলডি সরকারকে উচ্ছেদ করে মিয়ানমারের জাতীয় ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী। তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লেইং এ অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
অভ্যুত্থানের পর সামরিক শাসন বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে মিয়ানমারের শান্তিকামী জনতা। সেই বিক্ষোভ দমনে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেয় সামরিক সরকার। প্রায় ৬ মাস এই পরিস্থিতি চলার পর মিয়ানমারজুড়ে সক্রিয় হয়ে ওঠে জান্তাবিরোধী বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী। ফলশ্রুতিতে এক রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ শুরু হয় দেশটিতে। সামরিক সরকারের সঙ্গে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ঐকমত্যে পৌঁছানোর জন্য একাধিকবার চেষ্টা করেছে চীন, কিন্তু সেসব চেষ্টা সফল হয়নি।
এর মধ্যে গত ২৮ মার্চ ৭ দশমিক ৭ এবং ৬ দশমিক ৭ মাত্রার দু’টি শক্তিশালী ভূমিকম্প হয় মিয়ানমারে। এতে নিহত হন ৩৬ হাজারেও বেশি মানুষ। বিপর্যস্ত-বিধ্বস্ত মিয়ানমারে উদ্ধার তৎপরতা ও ত্রাণ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে ২ এপ্রিল ২০ দিনের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে জান্তা। সেই যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়াতেই বৃহস্পতিবার জান্তাপ্রধান ও জান্তাবিরোধীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন আসিয়ানের চেয়ারম্যান।
“আমরা মনে করি, আঞ্চলিক জোট হিসেবে মিয়ামনারের প্রতিটি ক্ষেত্রে আসিয়ানের সংযুক্তি থাকা উচিত। তবে এই সংযুক্তিকে যেন দেশটির সামরিক সরকার নিজেদের টিকিয়ে রাখার জন্য কোনোভাবেই ব্যবহার করতে না পারে, সেদিকেও আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে,” শুক্রবারের সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন আনোয়ার ইব্রাহিম।
সূত্র : রয়টার্স
এসএমডব্লিউ