স্ত্রীর বিরুদ্ধে মানসিক হয়রানির অভিযোগ তুলে স্বামীর আত্মহত্যা

স্ত্রী এবং শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ তুলে আত্মহত্যা করেছেন এক যুবক। আত্মহত্যার আগে একটি সুইসাইড নোটও লিখে গেছেন তিনি। সেখানে তিনি তার স্ত্রী, শ্যালিকা-সহ শ্বশুরবাড়ির বেশ কয়েক জনের বিরুদ্ধে তাকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন।
চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদের মোদিনগর এলাকায়। এই ঘটনায় মামলা দায়ের করার পাশাপাশি তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। শনিবার (১৯ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদ জেলার মোদিনগরের বাসিন্দা ৩৪ বছর বয়সী মোহিত ত্যাগী বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন এবং দুই দিন পর স্থানীয় এক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন।
আত্মহত্যার আগে মোহিত একটি সুইসাইড নোটে নিজের স্ত্রী প্রিয়াঙ্কা ত্যাগী এবং তার আত্মীয়দের বিরুদ্ধে মানসিক হয়রানির অভিযোগ আনেন।
মোহিতের ভাই রাহুল ত্যাগী জানান, বিয়ের কিছু মাসের মধ্যেই মোহিত মানসিক চাপে পড়ে যান। মোহিত ও প্রিয়াঙ্কার বিয়ে হয়েছিল ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর, এটি ছিল মোহিতের দ্বিতীয় বিয়ে। ২০২১ সালের অক্টোবরে তাদের একটি ছেলে সন্তান হয়। যার নাম—চিকু।
পরিবারের দাবি, বিয়ের কিছু দিনের মধ্যেই মোহিত ও প্রিয়াঙ্কার সম্পর্ক খারাপ হতে থাকে। সুইসাইড নোটে মোহিত অভিযোগ করেছেন, প্রিয়াঙ্কা ও তার আত্মীয়রা পরিকল্পিতভাবে তাকে বিয়ে করেছিলেন এবং পরে মিথ্যা মামলার ভয় দেখিয়ে টাকা-পয়সা আদায়ের চেষ্টা করেন। এর মধ্যে মিথ্যা যৌতুক মামলা ও মানহানির হুমকিও ছিল।
২০২৪ সালের আগস্টে মোহিতের মা ব্ল্যাড ক্যান্সারে মারা যাওয়ার পর দাম্পত্যে টানাপোড়েন আরও বেড়ে যায়। অভিযোগ, মা মারা যাওয়ার তিন মাস পর প্রিয়াঙ্কা তার ভাই এবং এক অজ্ঞাত পরিচয়ের ব্যক্তিকে সঙ্গে নিয়ে মোহিতের বাসা থেকে প্রায় ১২–১৫ লাখ রুপির সোনার গয়না ও নগদ অর্থ নিয়ে চলে যান, সঙ্গে ছেলেকেও নিয়ে যান তারা।
মোহিতের ভাই রাহুলের অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই তার ভাইয়ের ওপর মানসিক নির্যাতন চালাতেন তার স্ত্রী এবং তার পরিবারের সদস্যরা। স্ত্রী প্রিয়াঙ্কা, শ্যালক পুনীত, শ্যালিকা নীতুসহ আরও দুই আত্মীয় অনিল এবং বিশেষ ত্যাগীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে মোহিতের পরিবার।
আরও পড়ুন
পুলিশ জানিয়েছে, চিঠিতে মোহিত অভিযোগ তুলেছেন, স্ত্রী প্রিয়াঙ্কা গর্ভপাত করানোর জন্য বার বার চাপ দিচ্ছিলেন তার ওপর। কারণ প্রিয়াঙ্কা সন্তান চাইতেন না বলেও দাবি করেছেন মোহিত। কিন্তু তাকে বাধা দিয়েছিলেন তিনি। সন্তান হওয়ার পরে প্রিয়াঙ্কার আচরণ আরও বদলে গিয়েছিল। প্রতিনিয়ত মোহিতকে গালাগালি করতেন।
শুধু তা-ই নয়, প্রিয়াঙ্কার পরিবার তাকে নানা রকম মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে জেল খাটানোর হুমকিও দিতেন বলেও সুইসাইড নোটে উল্লেখ করেছেন মোহিত। মোহিত লিখেছেন, “আমি মরে গেলেও ক্ষতি নেই। কিন্তু আমার ছেলে চিকুকে ওরা বাঁচতে দেবে না। ওকেও মেরে ফেলবে। এটা ভেবেই কষ্ট হচ্ছে।”
আত্মহত্যার আগে নিজের যাবতীয় অভিযোগ হোয়াটসঅ্যাপে আত্মীয়, পরিবার এবং বন্ধুদের পাঠিয়ে দেন মোহিত। সেই চিঠিই উদ্ধার করেছে পুলিশ।
মোদিনগর থানার পুলিশ জানিয়েছে, মোহিতের মৃত্যুর ঘটনায় একটি মামলা রুজু হয়েছে এবং বিষয়টি তদন্তাধীন। আত্মহত্যা নোটে উল্লিখিত ব্যক্তিদের নাম উল্লেখ করে প্রিয়াঙ্কা, তার ভাই পুনীত ত্যাগী, ভাবি নীতু ত্যাগী, মামা অনিল ও বিশেষ ত্যাগীর বিরুদ্ধেও অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
টিএম