ব্রিস্টলের দাসব্যবসায়ী কলস্টনের ভাস্কর্যের ভাগ্য পরীক্ষা

যুক্তরাজ্যের ব্রিস্টলে বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভের সময় টেনে নামিয়ে ফেলা সপ্তদশ শতাব্দীর একজন দাসব্যবসায়ীর ভাস্কর্যটি একটি জাদুঘরে প্রদর্শিত হবে। জাদুঘরে যারা পরিদর্শনে আসবেন তাদের কাছে এ ভাস্কর্যের ভবিষ্যত নিয়ে জানতে চাওয়া হবে। অর্থাৎ ভাস্কর্যটির ভাগ্য এখন নির্ধারিত হবে জাদুঘরটিতে আসা দর্শনার্থীদের মাধ্যমে।
বছরখানেক আগে এডওয়ার্ড কলস্টনের ব্রোঞ্জসদৃশ ভাস্কর্যটি নামিয়ে সেটি পানিতে ফেলে দেওয়া হয়। ব্রিটেনের দাসবাণিজ্যের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িতদের মধ্যে কাকে সম্মান দিতে হবে আর কাকে সম্মান দেওয়া যাবে না, এটা নিয়ে সেই সময় বেশ বিতর্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে ভাস্কর্যটি যেখানে ফেলে দেওয়া হয়েছিল, সেখান থেকে সেটি তুলে সংরক্ষণ করা হয়।
শুক্রবার থেকে ব্রিস্টলের এম শেড মিউজিয়ামে কলস্টনের ভাস্কর্যটি প্রদর্শিত হবে। এই ভাস্কর্যের সঙ্গে প্রদর্শিত হবে ২০২০ সালের ৭ জুন ব্রিস্টলে বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভের সময় প্রদর্শিত প্ল্যাকার্ড। জাদুঘর কর্তৃপক্ষ বলছে, সেপ্টেম্বরের ৫ তারিখ পর্যন্ত ভাস্কর্যটি প্রদর্শিত হবে এবং বিক্ষোভের দিন কী হয়েছিল আর এই ভাস্কর্যটির এখন কী করা উচিৎ, দর্শনার্থীদের এমন কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে বলা হবে।
যারা জবাব দেবেন তাদের জবাবগুলো উই আর ব্রিস্টল হিস্ট্রি কমিশনে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। ওই বিক্ষোভের পর এই কমিশন গঠিত হয়। ভাস্কর্যটি নিয়ে এখন যা কিছু করার সুযোগ রয়েছে সেগুলো হলো- ভাস্কর্যটি জনসম্মুখে না রাখা, ট্রান্স আটলান্টিক ক্রীতদাস বাণিজ্য নিয়ে একটি প্রদর্শন বা জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা অথবা ভাস্কর্যটি যেখানে ছিল সেখানেই আবার ফিরিয়ে নেওয়া।
ভাস্কর্যটি নামিয়ে ফেলার ঘটনাটির অনেকে প্রশংসা করলেও ব্রিস্টলের অনেকে আবার এটিকে ঐতিহাসিক স্থাপনার ক্ষতি বলে মনে করছেন।
কমিশনের সদস্য ও ইউনিভার্সিটি অব দ্য ওয়েস্ট ইংল্যান্ডের সহযোগী অধ্যাপক শন সোবার্স বলছেন, স্থানীয়রা বিষয়টিকে কিভাবে দেখছেন তা জানার এই সুযোগটা আমরা কাজে লাগাচ্ছি। কারণ, শেষ পর্যন্ত তো আমাদের একসাথে এই শহরে থাকতে হবে।
তিনি আরও বলেন, এই যে ভাস্কর্যটি দেখানো হচ্ছে এটি কোনো আদর্শিক অবস্থা থেকে নয়, বা কোনো উৎসব থেকে নয়।
২০২০ সালের মে মাসে যুক্তরাজ্যে পুলিশের হাতে জর্জ ফ্লয়েড নামে এক কৃষ্ণাঙ্গ নিহত হওয়ার পর বিশ্বজুড়ে যে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে তার হওয়া লাগে ক্রীতদাসব্যবসায়ী কলস্টনের ভাস্কর্যে।
কলস্টন সপ্তাদশ শতাব্দীর একজন বণিক ছিলেন। আফ্রিকা থেকে ব্রিস্টল-ভিত্তিক জাহাজে বন্দী আফ্রিকানদের যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়ে নিজের ভাগ্য খুলেছিলেন তিনি। লন্ডন থেকে ১২০ মাইল দূরের শহর ব্রিস্টলে তার নামে রাস্তা আছে। স্কুল এবং বিভিন্ন দাতব্য প্রতিষ্ঠানেও সম্পদ দান করেছিলেন তিনি। তবে ফ্লয়েডের মৃত্যুর পর তাকে নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরুর পরিপ্রেক্ষিতে এসবের অনেকগুলোরই নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।
অষ্টাদশ শতাব্দীর শুরুর দিকে ক্রীতাদাসদের নিয়ে আসা জাহাজের জন্য সবচেয়ে বড় বন্দর হয়ে উঠেছিল ব্রিস্টল। ১৮০৭ সালে ব্রিটেন ক্রীতদাসবাণিজ্য বন্ধ করার আগে অন্তত ৫ লাখ আফ্রিকানকে দাস বানিয়ে জাহাজে করে ব্রিস্টল বন্দর দিয়ে ঢোকানো হয়।
এনএফ