একদিনে ইংলিশ চ্যানেল পেরিয়ে রেকর্ডসংখ্যক অভিবাসী যুক্তরাজ্যে

ইংলিশ চ্যানেল পেরিয়ে ফরাসি উপকূল থেকে মাত্র একদিনেই এক হাজার ১৯৪ জন অনিয়মিত অভিবাসী যুক্তরাজ্যে পৌঁছেছেন। স্থানীয় সময় শনিবার ১৮টি ছোট নৌকায় করে অভিবাসীরা ব্রিটিশ উপকূলে পৌঁছান। চলতি বছরে যুক্তরাজ্যে একদিনে এটিই সর্বোচ্চ সংখ্যক অভিবাসীর আগমন।
চলতি বছর এখন পর্যন্ত সমুদ্রপথে যুক্তরাজ্যে পৌঁছানো অভিবাসীর সংখ্যা ১৪ হাজার ৮০৮। যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স সরকার ইংলিশ চ্যানেলে ছোট নৌকা কমাতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। তারপরও এই সংখ্যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় অনেক বেশি।
ফরাসি উপকূলে দেশটির পুলিশের কিছু ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় সেগুলো বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এতে দেখা যায়, ফরাসি পুলিশের সদস্যরা সৈকতে অভিবাসীদের নৌকা ছাড়ার সময় উপস্থিত থাকলেও তাদের থামাতে চেষ্টা করেননি।
বিষয়টি নিয়ে ব্রিটেনে বিশেষ করে রক্ষণশীল গণমাধ্যম ও রাজনৈতিক মহলে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। ফরাসি কর্তৃপক্ষ বলেছে, সমুদ্র আইন অনুযায়ী তারা তখনই হস্তক্ষেপ করতে পারবে, যখন নৌকাগুলো পানিতে থাকে এবং তাদের জীবন রক্ষার প্রয়োজন হয়।
• লজ্জার দিন
ব্রিটিশ পার্লামেন্টে কনজারভেটিভ পার্টির এমপি এবং দলটির অভিবাসনবিষয়ক মুখপাত্র ক্রিস ফিলিপ এই দিনটিকে ‘‘লজ্জাজনক দিন’’ বলে অভিহিত করেছেন। কট্টর ডানপন্থি রিফর্ম ইউকে দলের নেতা নাইজেল ফারাজ সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, ‘‘আমাদের দেশ আজ হুমকির মুখে।’’
ব্রিটেনের লেবার দলীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী জন হিলি স্কাই নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ফরাসি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের একটি চুক্তি আছে, যাতে তারা চ্যানেলে মানবপাচার ঠেকাতে নিজেদের কৌশল পরিবর্তন করবে বলে শর্ত আছে। আমাদের এখন তাদের এ চুক্তি কার্যকর করতে বাধ্য করা দরকার।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স ২০২৭ সাল পর্যন্ত একটি চুক্তি নবায়ন করেছে। যার আওতায় যুক্তরাজ্য ফরাসি কর্তৃপক্ষের সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে অর্থায়ন করছে। ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রুনো রোতাইয়ো চ্যানেলে নতুন কৌশলের কথা উল্লেখ করে বলেন, আমরা চাই ফরাসি বাহিনী এখন থেকে পানিতে থাকা নৌকাও থামাবে। কারণ পাচারকারীরা এখন সরাসরি পানি থেকে অভিবাসীদের তুলে নিচ্ছে, যাতে সৈকতে পুলিশের নজরদারি এড়িয়ে যাওয়া যায়।
• রিটার্ন হাব গড়ার উদ্যোগ
যুক্তরাজ্য বিভিন্ন দেশে প্রত্যাখ্যাত আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য ‘রিটার্ন হাব’ বা প্রত্যাবাসন কেন্দ্র স্থাপন নিয়ে আলোচনা চালাচ্ছে। ইরাক, জার্মানি, সার্বিয়া, কসোভোসহ একাধিক দেশের সঙ্গে সহযোগিতা চুক্তিও করেছে লন্ডন।
দেশটির সরকারের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘‘এই সরকার অভিবাসন সমস্যার প্রতিটি ধাপে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়েছে।’’
২০২২ সালের ৩ সেপ্টেম্বর একদিনে সর্বোচ্চ এক হাজার ৩০৫ জন অভিবাসী চ্যানেল পেরিয়ে যুক্তরাজ্যে পৌঁছেছিলেন। ওই বছর মোট ৪৫ হাজার ৭৭৪ জন অভিবাসী যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান। ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে এই সংখ্যা বেড়ে ৩৬ হাজার ৮০০ জনে দাঁড়িয়েছিল। চলতি বছরের গতিপ্রকৃতি দেখে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নতুন রেকর্ড তৈরি হতে পারে।
চ্যানেল পাড়ি দিতে গিয়ে ২০২৫ সালে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ১৫ জন অভিবাসী প্রাণ হারিয়েছেন। ২০২৪ সালে এই সংখ্যা ছিল ৭৮ জন। এদিকে গত সপ্তাহে ফরাসি উপকূলে পৃথক চারটি অভিযানে ১৮৪ জন অভিবাসীকে উদ্ধার করা হয়।
ফ্রান্সের উপকূলরক্ষী বাহিনী বলেছে, শুক্রবার রাত থেকে শনিবার বিকেল পর্যন্ত ফোর্ট-মাহোঁর উপকূলে ৭৮ জন, উইমেরুর কাছে ইঞ্জিন বিকলের পর ৬১ জন, গ্র্যান্ড-ফোর্ট-ফিলিপ উপকূলে ৯ জন এবং ডানকির্ক উপকূলে ৩৬ জনকে উদ্ধার করা হয়।
এসএস