ইয়েমেনে আপাতত বিপদমুক্ত ভারতীয় নার্স নিমিশা, মুক্তির আশা

ইয়েমেনে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ভারতীয় নার্স নিমিশা প্রিয়া আপাতত বিপদমুক্ত আছেন। শিগগিরই তার দণ্ড কার্যকর হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই; এমনকি তার মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনাও সৃষ্টি হচ্ছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার ভারতের সুপ্রিম কোর্টকে এ তথ্য জানিয়েছে ইয়েমেনে নিমিশাকে আইনী সহায়তা প্রদানকারী আন্তর্জাতিক এনজিও ‘সেইভ নিমিশা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকশন কাউন্সিল’।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত নিমিশাকে বাঁচাতে ভারতের সরকারের কাছে কূটনৈতিক ও আইনী সহযোগিতা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে একটি পিটিশন জমা দিয়েছিল সেইভ নিমিশা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকশন কাউন্সিল। বৃহস্পতিবার সেই পিটিশনের ওপর শুনানি ছিল। বিচারপতি বিক্রম নাথ এবং বিচারপতি সন্দ্বীপ মেহতার বেঞ্চে হয় এই শুনানি।
আরও পড়ুন
শুনানিতে বিচারপতি বিক্রম নাথ এবং বিচারপতি সন্দ্বীপ মেহতা সেইভ নিমিশা ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিলের কাছে নিমিশা প্রিয়ার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চান। সংস্থাটির আইনজীবী আদালতকে বলেন, “ইয়েমেনের সরকার ও মামলার বাদিপক্ষের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ এবং আলোচনা চলছে। খানিকটা অগ্রগতিও হয়েছে। আপাতত নিমিশা প্রিয়া বিপদমুক্ত। আমরা আশা করছি আগামী ৪ কিংবা ৫ সপ্তাহের মধ্যেই আমরা ব্যাপারটি মীমাংসা করে ফেলতে পারব।”
“এ কারণে আমরা আগামী অন্তত ৪ সপ্তাহ এই পিটিশনের ওপর শুনানি মুলতবি রাখার জন্য আদালতকে অনুরোধ করছি।”
সেইভ নিমিশা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকশন কাউন্সিলের এ অনুরোধের পর সুপ্রিম কোর্ট এই পিটিশনের পরবর্তী শুনানির দিন আট সপ্তাহ পিছিয়ে দেন।
ভারতের সর্বদক্ষিণের রাজ্য কেরালার পালাক্কর জেলার বাসিন্দা নিমিশা নার্সের চাকরি নিয়ে ২০০৮ সালে ইয়েমেনে গিয়েছিলেন। সেখানে যাওয়ার পর স্বামী টমি থমাস এবং মেয়ের সঙ্গেই থাকছিলেন নিমিশা। পরে ২০১৪ সালে ইয়েমেনে গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তার স্বামী এবং ১১ বছরের মেয়ে ভারতে ফিরে এলেও নিমিশা সেখানেই থেকে যান। তার ইচ্ছা ছিল, ইয়েমেনে নিজের ক্লিনিক খুলবেন।
২০১৪ সালে ইয়েমেনি নাগরিক তালাল আব্দো মাহদির সঙ্গে যোগাযোগ হয় তার। মাহদি তাকে নতুন ক্লিনিক খুলতে সাহায্য করবেন বলে আশ্বাস দেন। কারণ আইন অনুযায়ী, ইয়েমেনে নতুন ব্যবসা শুরু করতে গেলে দেশীয় অংশীদার রাখা বাধ্যতামূলক। সেই মতো ২০১৫ সালে দু’জন মিলে নতুন ক্লিনিক খোলেন; কিন্তু এর পর থেকেই শুরু হয় দুই অংশীদারের মতবিরোধ।
অভিযোগ, নিমিশার অর্থ এবং পাসপোর্ট মাহদি কেড়ে নিয়েছিলেন মাহদি। মারধর করে নিমিশাকে মাদকসেবনেও বাধ্য করার অভিযোগ রয়েছে মাহদির বিরুদ্ধে। আইনি কাগজপত্রে নিমিশাকে স্ত্রী হিসাবে পরিচয় দিয়ে প্রশাসনিক সাহায্য পাওয়ার পথও প্রায় বন্ধ করে দিয়েছিলেন। পুলিশের দ্বারস্থ হয়েও লাভ হয়নি।
এমন পরিস্থিতিতে ২০১৭ সালের ২৫ জুলাই মাহদিকে ঘুমের ইঞ্জেকশন দেন ওই নার্স। নিমিশার দাবি, মাহদিকে ঘুম পাড়িয়ে নিজের পাসপোর্ট পুনরুদ্ধার করাই ছিল তার উদ্দেশ্য; কিন্তু ওভারডোজ়ের কারণে মৃত্যু হয় মাহদির। এর পর হানান নামে এক সহকর্মীর সঙ্গে মিলে মাহদির দেহ টুকরো করে কেটে পানির ট্যাঙ্কে ফেলে দেন ওই নার্স।
ওই মাসেই ইয়েমেন ছেড়ে পালানোর সময় ধরা পড়ে যান নিমিশা। সেই থেকে ইয়েমেনের কারাগারে বন্দি রয়েছেন এই ভারতীয় নারী। ২০২০ সালে ইয়েমেনের নিম্ন আদালত তার ফাঁসির আদেশ দেয়। পরে উচ্চ আদালতে আপিল করেন নিমিশার আইনজীবীরা, সেখানেও নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখা হলে ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট রাশেদ আল আলিমির কাছে ক্ষমাভিক্ষা চায় নিমিশার পরিবারের সদস্যরা এবং সেইভ নিমিশা ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল।
কিন্তু প্রেসিডেন্ট ক্ষমা করতে অপারাগতা জানালে তার মৃত্যুদণ্ড একপ্রকার নিশ্চিত হয়ে যায়। গত ১৬ জুলাই তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া কথা ছিল।
তবে এর মধ্যেই ইয়েমেনের সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ আলোচনা ও কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করা হয় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে। এসবের জেরে নিমিশার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা স্থগিত করে ইয়েমেন।
নিমিশার পরিবারের সদস্যরা বর্তমানে ইয়েমেনে অবস্থান করছেন। তার মা একজন দরিদ্র গৃহকর্মী। মেয়েকে রক্ষা করতে ২০২৪ সাল থেকে ইয়েমেনে আছেন তিনি।
সূত্র : পিটিআই
এসএমডব্লিউ