ডেল্টায় হাসপাতালে ভর্তির ঝুঁকি বাড়ে দ্বিগুণ

করোনাভাইরাসের অভিযোজিত ধরন ডেল্টায় আক্রান্তদের হাসপাতালে ভর্তির ঝুঁকি বেশি থাকে। বিশ্বের প্রধান চিকিৎসাবিষয়ক গবেষণা সাময়িকী ল্যানসেটের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রচলিত করোনাভাইরাস ও তার অন্যান্য অভিযোজিত ধরনগুলোতে আক্রান্ত রোগীদের তুলনায় ডেল্টায় আক্রান্ত রোগীদের হাসপাতালে ভর্তির ঝুঁকি দ্বিগুণ থাকে।
যুক্তরাজ্যের স্কটল্যান্ডের স্ট্রেথক্লাইড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক গবেষণার বরাত দিয়ে করা ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, করোনা টিকার ডোজ গ্রহণ করলে এই ঝুঁকি হ্রাস পায় এবং এক ডোজের করোনা টিকার চেয়ে দুই ডোজের টিকা ডেল্টা প্রতিরোধে অধিক কার্যকর।
সম্প্রতি যুক্তরাজ্যজুড়ে বাড়ছে ডেল্টায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। ল্যানসেটের প্রতিবেদনে বলা হয়, সাম্প্রতিক গবেষণার জন্য স্কটল্যান্ডের করোনায় আক্রান্ত ১৯ হাজার ৫৪৩ জন মৃদু উপসর্গের করোনা রোগী এবং ৩৭৭ জন হাসপাতালে ভর্তি করোনা রোগীর তথ্য সংগ্রহ করেছিল স্ট্রেথক্লাইড বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্য ও মহামারিবিদ্যা বিভাগ।
সংগৃহীত তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, মৃদু উপসর্গ বহন করা করোনা রোগীদের মধ্যে ৭ হাজার ৭২৩ জন এবং হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদের মধ্যে ১৩৪ জন ডেল্টায় আক্রান্ত।
যুক্তরাজ্যের অপর রাজ্য ইংল্যান্ডে ডেল্টায় আক্রান্তের হার আরও বেশি। দেশটির সরকারি স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ এনএইচএস জানিয়েছে, ইংল্যান্ডে সম্প্রতি প্রতিদিনই করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে এবং এই রোগীদের শতকরা ৯০ ভাগই ডেল্টায় আক্রান্ত।
গবেষণায় দেখা গেছে, মূল করোনাভাইরাস এবং এর প্রধান চারটি অভিযোজিত ধরনের মধ্যে ডেল্টা সবচেয়ে উচ্চ সংক্রামক ও প্রাণঘাতী। মূল করোনাভাইরাসের চেয়ে ৬০ শতাংশ এবং এর অভিযোজিত ধরন আলফার চেয়ে ৩০ শতাংশ বেশি সংক্রামক ডেল্টা।
স্ট্রেথক্লাইড বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্য ও মহামারিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ক্রিস রবার্টসন ডেল্টার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে টিকার গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, ‘যদি আপনি পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হন, সেক্ষেত্রে যে কোনো করোনা টিকার দুই ডোজ আপনার হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ঝুঁকি ৭০ শতাংশ কমিয়ে দেবে। যদি আপনি টিকার এক ডোজ নেন, তাহলে এক মাস আপনি ঝুঁকিমুক্ত থাকবেন।’
রবার্টসন আরও জানান, ফাইজার-বায়োএনটেকের করোনা টিকা ডেল্টার বিপরীতে মানবদেহে ৭৯ শতাংশ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম। করোনার অপর অভিযোজিত ধরন আলফার বিপরীতে এই হার ৯২ শতাংশ।
অন্যদিকে, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার দুই ডোজের করোনা টিকা ডেল্টার বিরুদ্ধে ৬০ শতাংশ ও আলফার বিরুদ্ধে ৭৩ শতাংশ প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি তৈরিতে সক্ষম।
‘তবে শুধু এই শতাংশের হিসাবের ওপর ভিত্তি করে যদি টিকার ভালোমন্দ বিচার করা হয়, সেক্ষেত্রে ভুল হবে। কারণ শেষ পর্যন্ত করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করে আপনার দেহের অভ্যন্তরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। টিকার ডোজের কাজ হলো শুধু তাকে সহায়তা করা’- বলেন ক্রিস রবার্টসন।
সূত্র: রয়টার্স
এসএমডব্লিউ