নেপালে জেন-জি বিক্ষোভকারীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান নিয়োগ করা নিয়ে নেপালে জেন-জি বিক্ষোভকারীদের মাঝে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার দেশটির রাজধানী কাঠমান্ডুতে সেনাবাহিনীর সদরদপ্তরের সামনে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছেন জেন-জিরা।
দেশটির সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রীর পদে কে বসবেন তা নিয়ে আলোচনা চলার সময় সেনা সদরের বাইরে জেন-জিদের কয়েকটি গ্রুপের মাঝে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, নেপালের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে বড় এই বিক্ষোভের নেতৃত্ব দেওয়া তরুণরা প্রথমে সেনা সদরদপ্তরের সামনে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। পরে তাদের এই বাগবিতণ্ডা থেকে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এই সংঘর্ষের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলির পদত্যাগের পর দেশের নেতৃত্ব কে দেবেন, তা নিয়ে জেন-জি আন্দোলনকারীদের ক্রমবর্ধমান বিভাজন স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
বৃহস্পতিবার দেশটির সেনাবাহিনী অন্তর্বর্তীকালীন নেতৃত্ব নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানোর জন্য জেন-জি প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই কাঠমান্ডুর ভদ্রকালি এলাকায় অবস্থিত সেনাসদর দপ্তরের বাইরে বিক্ষোভকারীদের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। অন্তর্বর্তী সরকার গঠন নিয়ে আন্দোলনের মধ্যেই তীব্র মতপার্থক্য থেকে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েন তারা।
আন্দোলনকারীদের একটি পক্ষ দেশটির সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কির প্রতি সমর্থন জানায়। দুর্নীতি বিরোধী কর্মকাণ্ড এবং সৎ ও নির্ভীক হিসেবে আন্দোলনকারীদের বড় অংশের পছন্দের শীর্ষে আছেন কার্কি। অন্যদিকে, আরেকটি পক্ষ তার প্রার্থিতার বিরোধিতা করে এবং নেপাল বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের সাবেক প্রধান কুলমান ঘিসিংয়ের নাম প্রস্তাব করে। তাদের দাবি, কার্কিকে নিয়োগ দিলে অচলাবস্থা আরও বাড়বে। কারণ সংবিধান অনুযায়ী অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিরা প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন না।
এক বিবৃতিতে ঘিসিং-সমর্থিত জেন-জিরা বলেছেন, দেশের নেতৃত্ব নেওয়ার জন্য বালেন্দ্র শাহ আগ্রহ দেখাননি এবং হার্কা সাম্পাং সবার নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্য নন। আর সুশীলা কার্কি অযোগ্য এবং ৭০ বছরের বেশি বয়সী। তাই আমরা দেশপ্রেমিক ও সবার প্রিয় প্রকৌশলী কুলমান ঘিসিংকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি।
ভদ্রকালিতে সেনা সদরদপ্তরের ভেতরে প্রেসিডেন্ট রাম চন্দ্র পাউডেল, সেনাপ্রধান অশোক রাজ সিগদেল এবং জেন-জি প্রতিনিধিরা বৈঠকে বসেন। দেশটির সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্র ভারতীয় বার্তা সংস্থা পিটিআইকে বলেন, আমরা বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। আলোচনার মূল লক্ষ্য চলমান অচলাবস্থার নিরসন এবং একই সঙ্গে দেশের আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখা।
নেপালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবিতে সোমবার সকালের দিকে বিক্ষোভ শুরু করেন দেশটির হাজার হাজার তরুণ-তরুণী। মঙ্গলবার সেই বিক্ষোভ ব্যাপক সহিংস আকার ধারণ করে এবং প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি পদত্যাগ করে আত্মগোপনে যেতে বাধ্য হন।
দেশটিতে দুদিনের সহিংসতায় এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৩১ জন নিহত ও ১ হাজার ৪০০ জন আহত হয়েছেন। বিক্ষোভকারীরা সংসদ ভবন ও ঐতিহাসিক সিংহ দরবারে হামলা এবং সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ করেন।
বর্তমানে কাঠমান্ডুতে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা জারি আছে। সেনাবাহিনীর সদস্যরা রাস্তায় টহল দিচ্ছেন এবং কারফিউ জারি রয়েছে। দোকানপাট, স্কুল ও কলেজ বন্ধ থাকলেও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু রয়েছে।
সেনা সদরদপ্তরে বৈঠকে সুশীলা কার্কি, কুলমান ঘিসিং এবং রাজতন্ত্রপন্থী কর্মী দুর্গা প্রসাইয়ের নামও আলোচনায় এসেছে। কিন্তু সদরদপ্তরের বাইরে যে বিক্ষোভকারীরা নেপালের পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখছিলেন, তারাই এখন একে অপরের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছেন। এতে দেশের অন্তর্বর্তী নেতৃত্বের বিষয়ে আন্দোলনকারীরা ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারবেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
সূত্র: ইন্ডিয়া টুডে।
এসএস