এবার ত্রিপুরা হারানোর শঙ্কায় বিজেপি

পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে বড় ধাক্কার পর এবার ত্রিপুরা বিধানসভার নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে বিজেপিতে। গুঞ্জন উঠেছে, ত্রিপুরা রাজ্য সরকারের সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী সুদীপ রায় বর্মণের নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন বিজেপি বিধায়ক তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিচ্ছেন।
ত্রিপুরা রাজ্য বিজেপি সভাপতি ড. মানিক সাহা অবশ্য একে স্রেফ গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তবে বিজেপির একাধিক সূত্র ভারতের সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে নিশ্চিত করেছে, ত্রিপুরার নিয়ে স্বস্তিতে নেই বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব।
২০১৮ সালে ক্ষমতাসীন সিপিএমকে হটিয়ে ত্রিপুরা বিধানসভা নিজেদের দখলে আনতে সক্ষম হয় বিজেপি। কিন্তু নির্বাচনে জিতে রাজ্য সরকার গঠনের পর থেকেই সমস্যা শুরু হয় ত্রিপুরা বিজেপিতে।
ত্রিপুরা রাজ্য বিজেপি ও দলের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের একাধিক নেতা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানিয়েছেন, ত্রিপুরায় বিজেপির প্রধান সমস্যা হিসেবে উপস্থিত হয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব নিজে। মুখ্যমন্ত্রী পদে আসীন হওয়ার পর থেকে তার সংগঠনবিরোধী কথাবার্তা, আচরণ ও স্বজনপ্রীতির কারণে তার বিরুদ্ধে রাজ্যের অনেক বিধায়ক ক্ষুব্ধ। এই নিয়ে ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে একাধিকবার প্রতিবেদনও করা হয়েছে।
তবে এই সংকট আরো ঘনীভূত হয়েছে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি মুকুল রায় তার সাবেক দল তৃণমূল কংগ্রেসে ফেরার পর। বিজেপি ও তৃণমূল সূত্রে জানা গেছে, মুকুল দলে ফেরার পর থেকেই ত্রিপুরা বিজেপির বেশ কয়েকজন বিধায়কের সঙ্গে যোগাযোগ করা শুরু করেছে তৃণমূল কংগ্রেস।
এর প্রেক্ষিতেই গুঞ্জন উঠেছে, রাজ্যে বিপ্লব কুমার দেবের প্রধান বিরোধী হিসেবে পরিচিত সাবেক স্বাস্থমন্ত্রী সুদীপ রায় বর্মনের নেতৃত্বে তারা সবাই দল বদলে তৃণমূলে নাম লেখাতে পারেন। একসময় তিনিসহ অনেকেই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে এসেছিলেন। এবার তার উল্টো স্রোত দেখা দেওয়ার কারণেই চিন্তায় পড়েছে বিজেপি।
গত বছর বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডার সঙ্গে দিল্লিতে দেখা করতে গিয়েছিলেন সুদীপসহ ছয় বিজেপি বিধায়ক। মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবের বিরুদ্ধে নালিশ করতেই সেখানে গিয়েছিলেন তারা। কিন্তু নাড্ডা তখন তাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেননি।
নাড্ডার কাছে প্রত্যাখ্যাত হয়ে পরে তারা জনসমক্ষে জানিয়েছিলেন, সাংগঠনিক বৈঠক করতে গিয়েছিলেন দিল্লি গিয়েছিলেন তারা। গত বছর ত্রিপুরা রাজ্য বিজেপির পর্যবেক্ষক বিনোদ সোনকারের সামনেই ‘বিপ্লব হটাও, বিজেপি বাঁচাও’ স্লোগানও তুলেছিলেন বিজেপি নেতা-কর্মীরা।
তবে ত্রিপুরা বিজেপির সভাপতি ড. মানিক সাহা বুধবার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ত্রিপুরায় কোনো বিজেপি বিধায়কের দলবদলের কোনো ‘সম্ভাবনা নেই’। সব কিছু ‘ঠিক আছে’।
বুধবার সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘এমন(দলবদলের) কোনো সম্ভাবনাই নেই। সব বিধায়ক দলের সঙ্গেই আছেন। বিজেপি পরিবারের সবকিছুই ঠিক আছে।’
বিপ্লব কুমার দেবের বিরুদ্ধে বিজেপি বিধায়কদের বিক্ষোভ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘পরিবারে অনেক সময় মতানৈক্য হয়। তবে সেগুলি মিটিয়ে নেওয়া হবে।’
সম্প্রতি বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বি এল সন্তোষ ও ত্রিপুরা বিজেপির পর্যবেক্ষক বিনোদ সোনকার বৈঠক করেছেন ত্রিপুরা বিজেপি নেতাদের সঙ্গে। বুধবার বুধবার সকাল থেকে কয়েক দফায় রাজ্য সভাপতি ড. মানিক সাহা, দায়িত্বপ্রাপ্ত পর্যবেক্ষক ফণীন্দ্রনাথ শর্মা-সহ একাধিক রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করেন সন্তোষ।
সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিনোদ সোনকারও। তবে মানিক সাহার দাবি, এটি ছিল নিয়মিত সাংগঠনিক বৈঠক।
ভারতের রাজনীতি বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, বিজেপির পরিকল্পনা ছিল ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় তিন রাজ্য আসাম, পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরা- পুরো অঞ্চলকে গেরুয়া শিবিরের নেতৃত্বে নিয়ে আসা। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে সদ্য শেষ হওয়া বিধানসভা নির্বাচনে পরাজয়ের ধাক্কা এখনও সামাল দিয়ে উঠতে পারেনি বিজেপি।
তারা আরও বলেছেন, আগামী ২ বছর পর ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে যেন পশ্চিমবঙ্গের মতো পরিস্থিতি না হয়, সেজন্য এখন থেকেই সতর্ক হয়ে উঠেছে দলটি।
সূত্র” ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
এসএমডব্লিউ