৩০ হাজার অভিবাসীকে ইইউ দেশগুলোতে স্থানান্তরের পরিকল্পনা

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নতুন আশ্রয় ও অভিবাসন নীতির আওতায় চলতি বছরের শেষ নাগাদ কমপক্ষে ৩০ হাজার আশ্রয়প্রার্থীকে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বণ্টন করতে হবে। এই উদ্যোগের লক্ষ্য হচ্ছে, ইতালি ও গ্রিসের মতো সম্মুখ সারির দেশগুলোর ওপর অভিবাসনের বাড়তি চাপ কমানো এবং আশ্রয়প্রার্থীদের দায়িত্ব ইউরোপজুড়ে ভাগ করে দেওয়া।
চুক্তি অনুযায়ী, প্রতি বছরই কমপক্ষে ৩০ হাজার আশ্রয়প্রার্থীকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। কোনো দেশ এতে অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানালে, প্রত্যেক আশ্রয়প্রার্থীর জন্য ২০ হাজার ইউরো জরিমানা দিতে হবে। তবে বিকল্প হিসেবে তারা মানবসম্পদ, লজিস্টিক বা আর্থিক সহায়তা দিয়ে সংহতিতে অংশ নিতে পারবে।
সংখ্যার হিসাবে, প্রত্যেক দেশের জন্য গড়ে এক হাজার অভিবাসী নেওয়া তেমন কঠিন নয়। একজন ইউরোপীয় কূটনীতিক বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, বাস, বিমান পাঠিয়ে এক হাজার মানুষকে অন্য দেশে নিয়ে যাওয়া লজিস্টিকের দিক থেকে খুব জটিল নয়। কিন্তু রাজনৈতিকভাবে এটি অত্যন্ত জটিল।
ইউরোপের ডানপন্থি রাজনৈতিক দলগুলো শুরু থেকেই এ পরিকল্পনার বিরোধিতা করছে। ফ্রান্সের অতি ডান ন্যাশনাল র্যালি (আরএন) দলের নেতা জর্ডান বারদেলা গত বছর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছিলেন, এই চুক্তি ইউরোপকে অভিবাসীদের বন্যায় ভাসিয়ে দেবে। ইউরোপের জনগণ প্রতিস্থাপিত বা ডুবে যেতে চায় না।
হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড, অস্ট্রিয়া ও স্লোভাকিয়ার মতো দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা সবচেয়ে কঠিন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টুস্ক চলতি বছরের শুরুতে স্পষ্ট করে বলেছেন, রিলোকেশন বা স্থানান্তর ব্যবস্থা অনুযায়ী চাপিয়ে দেওয়া কোনো বোঝা পোল্যান্ড বহন করবে না। আমরা আমাদের সীমান্তে অনিয়মিত অভিবাসনের চাপে রয়েছি।
অস্ট্রিয়া ইতোমধ্যে শরণার্থীদের পরিবার পুনর্মিলনের প্রক্রিয়া স্থগিত করেছে। দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, আমাদের ধারণক্ষমতার সীমা পূর্ণ হয়ে গেছে। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মধ্যপন্থি সদস্য ফাবিয়েন কেলার মনে করেন, সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে মনে করিয়ে দিতে হবে, তারাই এই চুক্তি নিয়ে আলোচনায় অংশ নিয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা চাই জনতুষ্টিমূলক রাজনীতির ফাঁদে না পড়ে সংখ্যাগুলোকে কাঠামোগত অবস্থান এবং এর মূল উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে বিষয়টি দেখা হয়।
ইইউর এই নীতি নিয়ে আটলান্টিকের ওপার থেকেও সমালোচনা এসেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জাতিসংঘে দেওয়া এক ভাষণে ইউরোপের এই অভিবাসন নীতির তীব্র সমালোচনা করেছেন।
আগামী কয়েক মাস কঠিন আলোচনা চলবে। প্রথম ধাপে, ইউরোপীয় কমিশন ১৫ অক্টোবরের মধ্যে নির্ধারণ করবে কোন কোন দেশ ‘‘অভিবাসন চাপের’’ মধ্যে রয়েছে। এ মানদণ্ড নির্ভর করবে আগত অভিবাসীর সংখ্যা, দেশটির আয়তন ইত্যাদির ওপর।
এরপর শুরু হবে বিতর্ক। প্রত্যেক দেশ কতজন অভিবাসী নিতে পারবে অথবা কী ধরনের অর্থনৈতিক সহায়তা দেবে। বড়দিনের আগেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর লক্ষ্য রয়েছে। আশ্রয়প্রার্থীদের ব্যবস্থাপনা ছাড়াও ইইউ দেশগুলো প্রত্যাখ্যাত অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া জোরদার করতে চায়। বর্তমানে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তের কমপক্ষে ২০ শতাংশ কার্যকর হয়। এই হার বাড়াতে ‘‘ডিরেক্টিভ রিটার্ন’’ আইন আরও কঠোর করার প্রস্তাব আলোচনায় রয়েছে।
এ সংক্রান্ত তিনটি প্রস্তাব বিবেচনায় নিয়েছে ইইউ। যার মধ্যে একটি হলো ইইউর বাইরে ‘‘রিটার্ন হাব’’ বা ফেরত পাঠানোর কেন্দ্র গড়ে তোলা। আলবেনিয়ার মতো দেশে আশ্রয়কেন্দ্রকে এমন হাবে রূপান্তরের উদ্যোগ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। সদস্য রাষ্ট্রগুলো আশা করছে, বড়দিনের আগেই এ নিয়েও একটি সমঝোতায় পৌঁছানো যাবে।
এসএস