ত্রিপুরায় গরুচোর সন্দেহে তিন মুসলিমকে পিটিয়ে হত্যা

ভারতের ত্রিপুরায় গাড়িতে করে গরু নিয়ে যাওয়ার সময় মুসলিম তিন যুবককে স্থানীয় গ্রামবাসীরা পিটিয়ে হত্যা করেছে। ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে খোয়াই জেলায় এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে। ওই এলাকা বাংলাদেশ সীমান্তেরও একেবারে কাছেই।
গরু বা গরুর মাংস বহন করার অভিযোগে মুসলিমদের পিটিয়ে মারার ঘটনা এর আগে ভারতের নানা প্রান্তে ঘটলেও উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যটিতে এই ধরনের ঘটনা একেবারেই বিরল। পুলিশ দাবি করেছে, গ্রামবাসীরা গরুচোর বলে সন্দেহ করেছিল নিহত তিন যুবককে। এই তিন যুবকের হত্যার ঘটনায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এখনও কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।
গণপিটুনিতে নিহত তিনজনকে জায়েদ হোসেইন (৩০), সাইফুল ইসলাম (১৮) ও বিল্লাল মিয়া (২৮) বলে শনাক্ত করা হয়েছে। স্থানীয় তেলিয়ামুড়া থানার একজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা বিবিসিকে জানিয়েছেন, রোববার ভোররাতে একটি ভ্যানে করে পাঁচটি গরু-মহিষ নিয়ে যাওয়ার সময় এই তিনজন ব্যক্তি গ্রামবাসীদের নজরে পড়ে যান।
পুলিশের ভাষ্য, তারা গরু-মহিষ চুরি করে পালাচ্ছে এই সন্দেহে স্থানীয় গ্রামবাসীরা গাড়িটি ধাওয়া দেয় এবং উত্তর মহারানিপুর নামে একটি গ্রামের কাছে সেটি আটক করে।
গরুচোর সন্দেহে গাড়ির আরোহীদের মধ্যে দুজনকে সেখানেই নৃশংসভাবে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়। একজন সেখান থেকে পালাতে সক্ষম হলেও প্রাণে বাঁচতে পারেননি। একটু দূরে মুঙ্গিয়াকামি নামে আর একটি গ্রামের কাছে স্থানীয় বাসিন্দারা তাকেও ধরে ফেলে পিটিয়ে মেরে ফেলে।
পরে ওই তিন যুবকের দেহ আগরতলা সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও জিবি পন্থ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাদের মৃত ঘোষণা করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, এই হত্যাকাণ্ডে দুটি আলাদা গণপিটুনির মামলা নথিভুক্ত করা হলেও সোমবার বিকেল পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে, নিহত জায়েদ হোসেইনের মা দাবি করেছেন, তার ছেলে কোনও গরু পাচার বা অপরাধের সঙ্গে কখনও যুক্ত ছিল না। রাজধানীর জিবি পন্থ হাসপাতালে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি জানান, শনিবার বিকেলে তার ছেলে বন্ধু বিল্লাল মিয়ার সঙ্গে কোনও একটা কাজে বেরিয়েছিল। কিন্তু কোথায় গিয়েছিল সে সম্পর্কে তার কোনও ধারণা নেই।
উত্তর বা মধ্য ভারতে তথাকথিত গোরক্ষক বাহিনীর তাণ্ডব এবং মুসলিমদের পিটিয়ে মারার বহু ঘটনা এর আগে শোনা গেলেও ত্রিপুরায় এ ধরনের ঘটনার কথা আগে তেমন শোনা যায়নি। ফলে তিন মুসলিম যুবককে পিটিয়ে মারার ঘটনা রাজ্যে ক্ষমতাসীন বিজেপি নেতৃত্বকেও বেশ অস্বস্তিতে ফেলেছে।
ত্রিপুরায় বিজেপির মুখপাত্র সুব্রত চক্রবর্তী বলেছেন, কোনও সন্দেহ নেই ঘটনাটা খুব দুর্ভাগ্যজনক। মানুষের কখনই আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া উচিত নয়। বিজেপি কখনওই এ ধরনের আচরণকে সমর্থন করবে না এবং সরকার এই হত্যার যথাযথ তদন্ত করবে বলেও তিনি কথা দিয়েছেন। বিবিসি বাংলা।
এসএস