বাংলাদেশে ডেঙ্গুর তীব্রতা বৃদ্ধির জন্য দায়ী জলবায়ু পরিবর্তন?

গতকাল রোববার বাংলাদেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৮ জনের। এর ফলে চলতি ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে ডেঙ্গুতে মোট নিহতের সংখ্যা পৌঁছেছে ৩৬৪ জনে।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরাতে জানা গেছে, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৯০ হাজার ২৬৪ জন এবং এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ৮৭ হাজার ৪৪২ জন।
আগের বছর ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন এবং প্রাণ হারিয়েছিলেন ৫৭৫ জন। তার আগের বছর ২০২৪ সালে ডেঙ্গুতে রেকর্ড ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন আক্রান্ত এবং তাদের মধ্যে ১ হাজার ৭০৫ জনের মৃত্যু দেখেছিল বাংলাদেশ। ইতিহাসে এর আগে কখনও ডেঙ্গুতে এত আক্রান্ত-মৃত্যু দেখেনি এই দেশ।
বর্তমানে বাংলাদেশে ডেঙ্গু সার্বজনীন রূপ নিয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে বরিশাল, বরিশাল থেকে ময়মনসিংহ সর্বত্র মিলছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার মনে করেন, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ডেঙ্গুর বাড়-বাড়ন্তের প্রধান কারণ জলবায়ু পরিবর্তন।
তুরস্কের সরকারি বার্তাসংস্থা আনাদোলু এজেন্সিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, বাংলাদেশে ডেঙ্গুর বিস্তার ঘটে প্রধানত গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে। তবে এ বছরই প্রথম নভেম্বরে উল্লেখযোগ্যসংখ্য আক্রান্ত-মৃত্যু দেখা যাচ্ছে।
“নভেম্বর মাসে ডেঙ্গুতে এই মাত্রায় আক্রান্ত-মৃত্যুর হার বিগত বছরগুলোতে দেখা যায়নি। এর প্রধান কারণ অতীতের তুলনায় দীর্ঘদিন ধরে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকা। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে গত অক্টোবর পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে। বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশে বর্ষাকাল দীর্ঘ এবং প্রলম্বিত হচ্ছে। ফলে ডেঙ্গুবাহী এডিস মশার বংশবিস্তার হচ্ছে ব্যাপকভাবে এবং এ রোগে আক্রান্ত-মৃতের হারও বাড়ছে।”
“বিগত দুই বছরের তুলনায় চলতি বছর যদিও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত-মৃত্যুর হার কম, কিন্তু এই নিয়ে স্বস্তিতে ভোগার কোনো কারণ নেই। কারণ এই হারে যে কোনো সময়ে উল্লম্ফণ ঘটতে পারে”, আনাদোলু এজেন্সিকে বলেছেন অধ্যাপক কবিরুল বাশার।
প্রসঙ্গত, ২০ ডিগ্রি থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে এডিস মশার ডিম পাড়া এবং তা ফোটার জন্য আদর্শ বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে প্রায় সারা বছরই এমন তাপমাত্রা থাকে। এমনকি শীতকালেও তাপমাত্রা থাকে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কোঠায়।
“জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বজুড়েই তাপমাত্রা বাড়ছে, বাংলাদেশও তার বাইরে নয়”, আনাদোলুকে বলেন অধ্যাপক বাশার।
সূত্র : আনাদোলু এজেন্সি
এসএমডব্লিউ