মেসেঞ্জারে নির্বাচনবিরোধী বার্তা পাঠানোর অভিযোগে মিয়ানমারে গ্রেপ্তার ১

ব্যক্তিগত ফেসবুক চ্যাটে নির্বাচনবিরোধী বার্তা পাঠানোর অভিযোগে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার। ফেসবুকে মেসেঞ্জারে ওই বার্তা পাঠানোর অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে বুধবার দেশটির সামরিক বাহিনী জানিয়েছে।
আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা বলছে, জান্তা যেসব আইন ব্যবহার করছে, সেসব আইন ব্যক্তিগত স্বাধীনতা খর্ব করছে এবং ভিন্নমত দমনে কাজে লাগানো হচ্ছে।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখলে নেয় দেশটির সামরিক জান্তা। এরপর থেকে দেশটিতে গৃহযুদ্ধ চলছে। তবে মিয়ানমারের সামরিক সরকার বলছে, ডিসেম্বরের শেষ দিকে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচন দেশটিকে শান্তি ও গণতন্ত্রের পথে এগিয়ে নেবে।
আসন্ন ভোট থেকে বাদ পড়া দেশটির ক্ষমতাচ্যুত আইনপ্রণেতা, মানবাধিকার পর্যবেক্ষক এবং জান্তাবিরোধী গেরিলারা নির্বাচনের সমালোচনা করেছেন। তারা জান্তার সামরিক শাসনকে আড়াল করার জন্য এই নির্বাচনকে নাটক বলে অভিহিত করেছেন।
নির্বাচনের আগে দেশটির সামরিক সরকার ব্যাপক নতুন আইন প্রণয়ন করেছে; যেখানে নির্বাচন নিয়ে প্রতিবাদ কিংবা সমালোচনার শাস্তি হিসেবে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। এক বিবৃতিতে জান্তা বলেছে, ইয়াঙ্গুনের কাছের বোগিওক গ্রামের ৫৮ বছর বয়সী খাইং সোয়েকে শুক্রবার নতুন আইনের আওতায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তিনি খাইং সোয়ে (Khaing Soe) নামের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে মেসেঞ্জারে নির্বাচনবিরোধী বার্তা পাঠিয়েছিলেন। যার উদ্দেশ্য ছিল নির্বাচনী প্রক্রিয়া ব্যাহত এবং জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করা। যে কারণে তাকে শনাক্ত করার পর আইনশৃঙ্খলাবাহিনী গ্রেপ্তার করেছে।
অভিযোগের বিস্তারিত কিংবা কর্তৃপক্ষ কীভাবে ব্যক্তিগত মেসেঞ্জার আলাপচারিতায় প্রবেশ করেছে; বিবৃতিতে সেই বিষয়ে কোনও তথ্য দেওয়া হয়নি। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কার্যকর শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এছাড়াও দেশটিতে নির্বাচনবিরোধী ফেসবুক পোস্ট ও নির্বাচনী বিলবোর্ড নষ্ট করার অভিযোগে অন্য দুই ব্যক্তিকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া একই ধরনের অভিযোগে বিভিন্ন ব্যক্তি কিংবা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আরও ১১টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির পরিসংখ্যান বলছে, চলতি মাসের শেষের দিকের জাতীয় নির্বাচন ব্যাহত করার অভিযোগে বিভিন্ন ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মিয়ানমারের জান্তা শতাধিক মামলা দায়ের করেছে।
এর মধ্যে কিছু মামলা এমন বিদ্রোহী যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে করা হয়েছে; যাদের এলাকায় সামরিক বাহিনীর প্রভাব নেই।
গত সপ্তাহে জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরের মুখপাত্র জেরেমি লরেন্স সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ব্যাপক সমালোচনা সত্ত্বেও মিয়ানমারে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনের আগে ভিন্নমতাবলম্বীদের শনাক্ত করতে ব্যাপক ইলেকট্রনিক নজরদারি জোরদার করেছে জান্তা।
মিয়ানমার ঐতিহাসিকভাবে সামরিক শাসনের অধীনে ছিল। ২০১০ সালের নির্বাচনে নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী অং সান সু চির ভূমিধস জয়ের মাধ্যমে দেশটির গণতান্ত্রিক যাত্রা শুরু হয়। কিন্তু এক যুগ যেতে না যেতেই ২০২১ সালে অভ্যুত্থানের মাধ্যমের সু চিকে ক্ষমতাচ্যুত করে মিয়ানমারের জান্তা। এর মধ্য দিয়ে দেশটিতে আবারও সামরিক শাসনের যাত্রা শুরু হয়।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানের পর থেকেই কারাগারে আছেন অং সান সু চি। তার রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসিকে (এনএলডি) বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে জান্তা। আগামী ২৮ ডিসেম্বরের ভোটে ব্যালটে এনএলডির প্রতীক থাকবে না। ধাপে ধাপে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচন প্রায় এক মাস ধরে চলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সূত্র: এএফপি।
এসএস