দেশীয় টিকা নিলেন ইরানের শীর্ষ আধ্যাত্মিক নেতা খামেনি

ইরানের সর্বোচ্চ আধ্যাত্মিক নেতা আলী হোসোইনি খামেনি (৮২) করোনা টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন। আজ শুক্রবার রাজধানী তেহরানে দেশীয়ভাবে প্রস্তুতকৃত করোনা টিকা কোভইরান বারেকাতের ডোজ নিয়েছেন তিনি।
কোভইরান বারেকাতকে ইরানের ‘জাতীয় গর্ব’ উল্লেখ করে টিকার ডোজ নেওয়ার পর উপস্থিত ইরানের সাংবাদকিদের খামেনি বলেন, ‘মানুষজনের অনুরোধেই টিকা নিতে হলো।’
‘আমি কখনও বিদেশী কোম্পানির টিকা নিতে চাইনি। বছরের শুরু থেকেই অনেকে আমাকে টিকা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে আসছিল, উত্তরে আমি বলেছিলাম- আমি আরও অপেক্ষা করতে চাই।’
‘সেই অপেক্ষার ফল অবশেষে পাওয়া গেল। আমরা নিজেরা টিকা প্রস্তুত করতে পেরেছি; ইনশাল্লাহ, এই টিকা দিয়ে আমরা মহামারির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাব।’
চলতি বছর জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের করোনা টিকা ফাইজার-বায়োএনটেক, অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও মডার্নার আমদানি ও ব্যবহার অবৈধ বলে ঘোষণা করেন খামেনি। কারণ হিসেবে তখন তিনি বলেছিলেন, ‘এসব টিকার ওপর আস্থা রাখা যায় না।’
তাই বলে বিদেশী টিকা যে দেশটি আমদানি করেনি- এমন নয়। রাশিয়া, চীন ও ভারত থেকে লাখ লাখ ডোজ করোনা টিকা আমদানি করেছে ইরান। পাশাপাশি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা(ডব্লিউিএইচও)-এর প্রকল্প কোভ্যাক্স ইনিশিয়েটিভ থেকেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ টিকা পেয়েছে দেশটি।
তবে তারপরও ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া গণটিকাদান কর্মসূচিতে নিজেদের করোনা টিকা কোভইরান বারেকাতকেই সামনে রেখেছে ইরান।
গত বছর ডিসেম্বরের শেষ থেকে কোভইরানের তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল শুরু হয়েছিল। প্রায় ২৪ হাজার স্বেচ্ছাসেবী এই ট্রায়ালে অংশ নেন।
আরও যেসব টিকা আসছে ইরানে
কোভইরান বারেকাত ছাড়াও আগামী কয়েক মাসের মধ্যে আরও কয়েকটি করোনা টিকা আনছে ইরান। এই টিকাগুলো বর্তমানে বিভিন্ন পর্যায়ের ট্রায়াল পার করছে। দেশটির প্যাস্টর ইনস্টিটিউট এবং কিউবার যৌথ উদ্যোগে প্রস্তুতকৃত একটি টিকার তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল চলছে ইরানে। ইতোমধ্যে করোনার বিরুদ্ধে এই টিকা ৬২ শতাংশ কার্যকর বলে প্রমাণিতও হয়েছে।
ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গেও যৌথভাবে রাজি কোভ-পার্স নামে একটি করোনা টিকা প্রস্তুত করছে ইরান। এটি বর্তমানে তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল পার করছে এবং ধারণা করা হচ্ছে, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এর অনুমোদন দেবে ইরানের স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্তৃপক্ষ।
ইরানের প্রতিরক্ষা বিভাগের আওতাধীন একটি সংস্থা দেশটির নিহত পরমাণু বিজ্ঞানী মহসিন ফকিরজাদেহ-এর নামে ফাখরাভ্যাক নামে একটি করোনা টিকা প্রস্তুত করছে। গত বছর নভেম্বরে গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছিলেন ফকিরজাদেহ।
দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাঈদ নামাকি সম্প্রতি জানিয়েছেন, রাশিয়ার করোনা টিকা স্পুটনিক ৫-এর ফর্মুলায় এর একটি ইরানি সংস্করণ ইতোমধ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে, খুব শিগগিরেই সেটি ইরানের জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে।
বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের যে কয়েকটি দেশ সবচেয়ে বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে, সেসবের মধ্যে শীর্ষে আছে ইরান। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, মহামারির শুরু থেকে এ পর্যন্ত ইরানে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৩১ লাখ ৫০ হাজার ৯৪৯ জন এবং মারা গেছেন মোট ৮৩ হাজার ৫৮৮ জন। বর্তমানে দেশটিতে সক্রিয় করোনা রোগী আছেন ২ লাখ ৫৭ হাজার ৫৬৬ জন।
গত ফেব্রুয়ারি থেকে যদিও গণটিকাদান শুরু করেছে দেশটি, কিন্তু বিভিন্ন জটিলতার কারণে বর্তমানে গতি প্রায় হারাতে বসেছে এই কর্মসূচি। ৮ কোটি ৩০ লাখ জনঅধ্যুষিত ইরানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত মোট জনসংখ্যার মাত্র ৫ শতাংশকে টিকার আওতায় আনা গেছে।
সূত্র: আল জাজিরা
এসএমডব্লিউ