পর্তুগালে নাগরিকত্ব আইনের কিছু ধারা আটকে দিল আদালত

পর্তুগালে নাগরিকত্ব পাওয়ার শর্ত আরো কঠোর করতে ডানপন্থি জোট সরকার ও অতি-ডানপন্থিদের সমর্থনে পাস হওয়া একটি আইনের একাধিক ধারা বাতিল করেছে দেশটির সাংবিধানিক আদালত।
আদালতের রায় অনুসারে আইনটি আবার পার্লামেন্টে ফেরত পাঠানো হচ্ছে এবং সংশোধনের পর নতুন করে ভোটাভুটির প্রয়োজন হবে।
সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) দেওয়া এক রায়ে পর্তুগালের সর্বোচ্চ আদালত জানায়, নাগরিকত্ব সংক্রান্ত ওই আইনের কয়েকটি ধারা সংবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়৷ এই রায়কে সরকারের জন্য বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
আদালত বিশেষ করে সেই ধারাটি বাতিল করেছে, যেখানে দুই বছর বা তার বেশি কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের জন্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে পর্তুগিজ নাগরিকত্ব পাওয়ার পথ বন্ধ করার কথা বলা হয়েছিল।
বিচারকদের মতে, এই বিধানটি ‘নাগরিকত্ব পাওয়ার মৌলিক অধিকারের ওপর অসমানুপাতিক বিধিনিষেধ’আরোপ করে।
এছাড়া গত ১০ বছরে গুরুতর অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে কারো নাগরিকত্ব বাতিলের যে সুযোগ রাখা হয়েছিল, সেটিকেও সংবিধানবিরোধী বলে রায় দিয়েছেন আদালত। বিচারকদের মতে, এতে জন্মসূত্রে পর্তুগিজ নাগরিক ও পরবর্তীতে নাগরিকত্বপ্রাপ্তদের মধ্যে বৈষম্য তৈরি হয়, যা সংবিধানের ‘সমতার নীতি’ লঙ্ঘন করে৷
আদালত আরো স্পষ্ট করেছে, এই নতুন আইন নাগরিকত্বের জন্য যেসব আবেদন বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে, সেগুলোর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না৷ কেবল আইন কার্যকর হওয়ার পর যারা আবেদন করবেন, তাদের ক্ষেত্রেই নতুন বিধান কার্যকর হতে পারে।
এই রায়ের পর পর্তুগালের প্রেসিডেন্টকে সংশ্লিষ্ট ডিক্রিতে ভেটো দিতে হবে এবং আইনটি সংশোধনের জন্য পার্লামেন্টে ফেরত পাঠাতে হবে বলে জানানো হয়েছে।
অতি ডানপন্থিদের সঙ্গে সমঝোতা
গত অক্টোবরের শেষ দিকে ডানপন্থি জোট সরকার ও অতি-ডানপন্থি দলের সমর্থনে এই আইনটি পাস হয়। এর মাধ্যমে নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য বসবাসের সময়সীমা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়।
প্রস্তাব অনুযায়ী, পর্তুগিজ ভাষাভাষী দেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের নাগরিকদের জন্য নূন্যতম বসবাসের শর্ত পাঁচ বছর থেকে বাড়িয়ে সাত বছর এবং অন্য সব দেশের নাগরিকদের জন্য তা সর্বোচ্চ ১০ বছর করার কথা ছিল।
আইনটিতে বিদেশি বাবা-মায়ের ঘরে জন্ম নেওয়া শিশুদের নাগরিকত্ব পাওয়ার শর্তও কঠোর করা হয়।
প্রস্তাবিত নতুন নিয়ম অনুযায়ী, শিশুদের বাবা-মাকে কমপক্ষে পাঁচ বছর বৈধভাবে পর্তুগালে বসবাস করতে হতো, যেখানে আগে যেকোন প্রশাসনিক অবস্থায় এক বছর থাকলেই যথেষ্ট ছিল। পাশাপাশি ভাষাজ্ঞানসহ বিভিন্ন একীভূতকরণ শর্ত আরও জোরদার করার প্রস্তাব ছিল।
এছাড়া মধ্যযুগে পর্তুগাল থেকে বিতাড়িত সেফারদি ইহুদিদের বংশধরদের জন্য ২০১৫ সাল থেকে চালু থাকা বিশেষ নাগরিকত্ব সুবিধা বাতিল করার কথাও আইনে অন্তর্ভুক্ত ছিল।
আগেও আদালতের বাধা
প্রধানমন্ত্রী লুইস মন্টেনেগ্রোর সরকার, গত মে মাসের সংসদ নির্বাচনে পুনর্নির্বাচিত হন। এর আগেও তার সরকার অভিবাসন নীতি কঠোর করতে অতি-ডানপন্থিদের সমর্থন পেয়েছিল।
জুলাইয়ে পার্লামেন্টে পারিবারিক পুনর্মিলনের সুযোগ সীমিত করার একটি আইন পাস হলেও সেটিও সাংবিধানিক আদালত বাতিল করে সংশোধনের নির্দেশ দেয়।
এরপর সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে নতুন একটি সংশোধিত বিল পার্লামেন্টে উপস্থাপন করা হয়। সেখানে পারিবারিক পুনর্মিলনের জন্য কমপক্ষে দুই বছর বৈধ বসবাসের শর্ত রাখা হলেও বিবাহিত দম্পতি বা অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশুদের ক্ষেত্রে ছাড়ের সুযোগ রাখা হয়।
এ বিষয়ে সরকারের মুখপাত্র ও মন্ত্রী আন্তোনিও লেইতাঁও আমারো বলেন, ‘এটি আমাদের প্রাথমিক প্রস্তাবের মতো নয়, তবে মানবিকভাবে অভিবাসন নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্য বজায় রাখে৷’
তার মতে, ‘নিয়ম ও নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন৷ এটি পর্তুগালের জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি বিদেশি নাগরিক ও অভিবাসীদের মর্যাদার সঙ্গে গ্রহণ করার ক্ষেত্রেও জরুরি।’
দীর্ঘদিন ইউরোপের তুলনামূলকভাবে উন্মুক্ত অভিবাসন নীতির দেশ হিসেবে পরিচিত ছিল পর্তুগাল৷ আগে নিয়মিত বা অনিয়মিতভাবে দেশে প্রবেশ করলেও কাজ, ব্যবসা বা ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে অভিবাসীরা বৈধতা পেতে পারতেন৷ তবে সেই সুযোগ ইতিমধ্যে বাতিল করা হয়েছে।
২০২৪ সালের মার্চে ক্ষমতায় আসার পর মধ্য-ডানপন্থি এই সরকার অভিবাসন ইস্যুতে ধারাবাহিকভাবে কঠোর অবস্থান নিয়েছে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ পর্তুগালে বিদেশি নাগরিকের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৫ লাখ ৫৫ হাজার, যা ২০১৭ সালের তুলনায় চার গুণ বেশি এবং দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৫ শতাংশ।
এসএমডব্লিউ