বাংলাদেশে ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার চায় ইসলামাবাদ

বাংলাদেশি নাগরিকদের ওপর থেকে ভিসা সম্পর্কিত সকল ধরনের নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে পাকিস্তান। এর বিনিময়ে বাংলাদেশেও পাকিস্তানি নাগরিকদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার চায় দেশটি।
বৃহস্পতিবার (৭ জানুয়ারি) পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে বৈঠকে এ কথা জানান ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানি হাইকমিশনার ইমরান আহমেদ সিদ্দিকী।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর দেওয়া এক বিবৃতিতে পাকিস্তানের হাইকমিশন জানায়,‘বাংলাদেশি নাগরিকদের ওপর থেকে ভিসা সংক্রান্ত সকল ধরনের নিষেধাজ্ঞা ইতোমধ্যেই তুলে নিয়েছে ইসলামাবাদ।’
সকল স্তরেই দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও জোরদার করতে দুই দেশ একমত হয়েছে বলেও বিবৃতিতে জানানো হয়।
এদিকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর তুর্কি বার্তাসংস্থা আনাদোলু এজেন্সি-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানের হাইকমিশনার ইমরান আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, বাংলাদেশিদের ওপর থেকে ভিসা নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পর এবার বাংলাদেশের নিকট থেকেও একই ধরনের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করছে পাকিস্তান।
তিনি বলেন,‘পাকিস্তানের নাগরিকদের ওপর বাংলাদেশের ভিসা নিষেধাজ্ঞা এখনও রয়েছে। আর এজন্যই পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে আমি বৈঠক করেছি এবং পাকিস্তানের পক্ষ থেকে ভিসা নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বিষয়টি তাকে জানিয়েছি।’
দীর্ঘ সংগ্রাম ও নয় মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের নিকট থেকে স্বাধীনতা লাভ করে বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশকে সার্বিকভাবে সহায়তা করে ভারত।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে ঢাকা-ইসলামাবাদের সম্পর্কে সব সময়ই উত্তেজনা বিদ্যমান ছিল। ২০০৯ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর উভয় দেশের সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে পৌঁছে।
বিশ্লেষকদের বরাত দিয়ে আলজাজিরা বলছে, ভারত-বাংলাদেশের মধ্যকার যৌথ নদীসমূহের পানি ভাগাভাগি, সীমান্তে বেসামরিক বাংলাদেশিদের হত্যা, বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইন পাস করাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে নয়াদিল্লির ‘পক্ষপাতদুষ্ট মনোভাবের’ কারণে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন করছে বাংলাদেশ।
গত বছরের জুলাই মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। আলজাজিরা বলছে- সাম্প্রতিক সময়ে এমন ফোনালাপের ঘটনা বিরল।
এদিকে হাইকমিশনারের সঙ্গে বৈঠকে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যার জন্য পাকিস্তানকে বাংলাদেশের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। প্রতিমন্ত্রী এসময় মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশে আটকা পড়া পাকিস্তানি নাগরিকদের প্রত্যাবাসন এবং দু’দেশের মধ্যে সম্পদ সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের তাগিদ দেন।
বৈঠকে সাফটার আওতায় পাকিস্তানে বাংলাদেশের আরও পণ্যের প্রবেশাধিকার চান শাহরিয়ার আলম। এছাড়া বাণিজ্য বাধা দূর করে পণ্যের নিষিদ্ধ তালিকা কমানোর তাগিদ দেন তিনি। বর্তমানে উভয় দেশের মধ্যকার আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পাকিস্তানের অনুকূলে রয়েছে বলে পাকিস্তানি দূতকে অভিহিত করেন প্রতিমন্ত্রী। সাক্ষাতে পাকিস্তানি দূত দু’দেশের মধ্যকার সম্পর্ক বাড়ানোর ওপর জোর দেন।
প্রতিমন্ত্রী ও হাইকমিশনার দুই দেশের ফরেন অফিস কনসুলেশন (এফওসি) সক্রিয় করতে একমত পোষণ করেন। ২০১০ সালের পর কোনো এফওসি অনুষ্ঠিত হয়নি। প্রতিমন্ত্রী হাইকমিশনারকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
এর আগে ডিসেম্বরের শুরুতে পাকিস্তানি দূত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। প্রধানমন্ত্রী সেদিন পাকিস্তানি দূতকে জানান, ১৯৭১ সালে পাকিস্তান যে নৃশংসতা চালিয়েছিল, বাংলাদেশ তা ভুলে যেতে পারে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একাত্তরের ঘটনাগুলো ভোলা যায় না। সেই ক্ষত চিরদিন রয়ে যাবে।
সূত্র: আলজাজিরা
টিএম