ট্রাম্পের হাতে পরমাণু বোমার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে উদ্বেগ

গত বছরের ৩ নভেম্বর থেকে নতুন বছরের ৬ জানুয়ারি। নির্বাচনে অনিয়ম, কারচুপি আর জালিয়াতি নিয়ে অবিরত প্রমাণহীন অভিযোগ প্রমাণে ট্রাম্প যে যুদ্ধে নেমেছিলেন, ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল ভবনের ঘটনায় প্রকৃতপক্ষে সেই যুদ্ধে পরাজিতই হলেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে নিজের পরাজয় মেনে নিতে অস্বীকার করা ট্রাম্প গত বুধবার ক্যাপিটল ভবনের ঘটনার পর পরাজয় মেনে নিয়েছেন। বলছেন শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের কথাও।
কিন্তু ট্রাম্পকে নিয়ে যেন টেনশনের শেষ নেই। কারণ পরাজয়ের গ্লানিতে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে ইচ্ছুক ট্রাম্প এই মুহূর্তে মানসিকভাবে খুবই অস্থির। যেকোন ধরনের বিধ্বংসী কাজ তিনি করে বসতে পারেন।
বিষয়টি সবচেয়ে বেশি অনুধাবন করেছেন ডেমোক্র্যাটরা। কারণ ট্রাম্পের এখনকার যেকোন বিধ্বংসী কাজের ফল ভোগ করতে হবে ২০ জানুয়ারি দায়িত্ব নিতে যাওয়া বাইডেন প্রশাসনকে।
আর তাই ট্রাম্পের হাতে পরমাণু অস্ত্রের নিয়ন্ত্রণ থাকা দিয়ে দারুণ উদ্বিগ্ন প্রবীণ ডেমোক্র্যাট নেতা ও মার্কিন কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি। ট্রাম্পের হাতে থাকা পরমাণু অস্ত্রের কোড নিয়ে মার্কিন সেনাপ্রধান মার্ক মিলির সঙ্গে আলোচনাও করেছেন তিনি।
ন্যান্সি পেলোসির মতে, ডোনাল্ড ট্রাম্প এই মুহূর্তে খুবই অস্থির অবস্থায় আছেন। তার কাছে কোনোভাবেই পরমাণু অস্ত্রের কোড থাকা ঠিক নয়।
ট্রাম্পকে ‘ভারসাম্যহীন’ আখ্যা দিয়ে ন্যান্সি পেলোসির আশঙ্কা, তিনি (ট্রাম্প) পরমাণু হামলাও চালাতে পারেন। বিদায়ী প্রেসিডেন্টকে যেকোন ধরনের বিধ্বংসী কাজ করা থেকে ‘ঠেকাতে’ আমেরিকার সেনাপ্রধানসহ শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
পাশাপাশি, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিংশনের (ইমপিচমেন্ট) প্রক্রিয়া শুরুর উদ্যোগও নিয়েছেন পেলোসি।
ক্যাপিটল ভবনে হামলার পেছনে বিদায়ী ট্রাম্পের উসকানি ছিল। এর কারণে ফেসবুক, ইন্সটাগ্রামে নিষিদ্ধ হয়েছেন তিনি। টুইটার তো ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট স্থায়ীভাবেই বন্ধ করে দিয়েছে। এতো কিছুর পরও প্রশাসনিকভাবে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
স্পিকার পেলোসির ভাষ্য,‘মেয়াদের শেষপর্যায়ে এসে ভারসাম্যহীন প্রেসিডেন্ট যেন দেশে সামরিক সংঘাত শুরু না করতে পারেন অথবা পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডারের কোড তার হাতে না আসে কিংবা পারমানবিক হামলা শুরুর নির্দেশ দিতে না পারেন, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় সতর্কতা নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করেছি।’
পরমাণু হামলা না হয় নাই বা চালাতে পারলেন, কিন্তু এখনও ১১ দিন তো হোয়াইট হাউসে আছেন ট্রাম্প। কিন্তু ডেমোক্র্যাটরা আর একদিনও ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট পদে রাখতে চান না। তারা চান অভিশংসন। এ নিয়ে ডেমোক্র্যাট নেতাদের ইতোমধ্যেই চিঠি দিয়েছেন পেলোসি।
ওই চিঠিতে পেলোসি জানিয়েছেন, বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্বেচ্ছায় পদত্যাগ না করলে তার বিরুদ্ধে অভিশংসনের প্রক্রিয়া শুরু করতে প্রস্তুত তারা। এমনকি, বিদায়ী ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স অভিশংসন প্রক্রিয়া শুরু না করলে সেই প্রক্রিয়া তিনিই শুরু করবেন বলেও জানান পেলোসি।
ক্ষমতার এই শেষপর্যায়ে এসে ট্রাম্প মনে হয় শান্তিতে একটু ঘুমাতেও পারবেন না। চাইলেও ডেমোক্র্যাটরা ঘুমাতে দেবে না।
সূত্র: এনডিটিভি
টিএম