সৌদিতে সংস্কার : বদল নাকি রাজকীয় ক্ষমতার খেলা?

চলতি মাসের শুরুর দিকে সৌদি আরবে একটি আইনে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়। এর ফলে এখন থেকে প্রাপ্তবয়স্ক কোনও নারী তার বাবা বা অন্য পুরুষ আত্মীয়ের অনুমতি না নিয়ে স্বাধীনভাবে বাস করতে পারবেন।
এর কিছুদিন পর আরেক ঘোষণায় বলা হয়, এখন থেকে মেয়েরা মক্কায় হজ করতে চাইলে নিবন্ধন করতে পারবেন। সেজন্য তাদের পুরুষ অভিভাবকের অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন পড়বে না। চাইলে অন্য মেয়েদেরও সঙ্গে নেয়া যাবে।
চলতি সপ্তাহে সৌদি আরব বিদেশ থেকে বই ও ম্যাগাজিন আমদানির নিয়ম সহজ করার ঘোষণা দিয়েছে। অর্থাৎ আমদানির অনুমতি দেয়ার ক্ষেত্রে সেন্সরশিপের যে নিয়ম ছিল সেটা কিছুটা শিথিল করা হয়েছে।
এর আগেও সৌদি আরবে নারী অধিকারসহ নানা বিষয়ে সংস্কার আনা হয়েছে। সৌদি আরবকে আরও আধুনিক, উদার এবং ব্যবসা ও পর্যটনবান্ধব করতে ২০১৬ সালে ‘ভিশন ২০৩০’ ঘোষণা করেছিলেন দেশটির যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। এরপর বেশ কিছু আইনে পরিবর্তন আনা হয়। ফলে দেশটির নারীরা এখন গাড়ি চালানো, একা সিনেমা হলে যাওয়া, ঘুরতে বের হওয়া-সহ নানা ধরনের কাজ করতে পারছেন।
সাম্প্রতিক পরিবর্তনগুলোও ভিশন ২০৩০-এর অংশ বলে বিবেচনা করা যেতে পারে। এমনও কথা শোনা যাচ্ছে, সেখানে অ্যালকোহল পানে সীমিত পরিসরে হলেও অনুমোদন দেয়া হতে পারে।
কোনও কিছু স্পর্শ নয়, সবকিছু পরিবর্তন
ওয়াশিংটনভিত্তিক ফরেন পলিসি থিংক ট্যাংক ‘দ্য কার্নেগি এনডাওমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ের ভিজিটিং ফেলো ইয়াসমিন ফারুক ও সিনিয়র ফেলো নাথান ব্রাউন সম্প্রতি একটি প্রবন্ধ লিখেছেন; যা তাদের প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে। শিরোনামে বলা হয়েছে, ‘সৌদি আরবের ধর্মীয় সংস্কার কিছু স্পর্শ করছে না, কিন্তু সবকিছু পরিবর্তন করছে।’
তারা বলছেন, এই যে পরিবর্তনগুলো আনা হয়েছে তার বেশিরভাগই অর্থপূর্ণ পরিবর্তন নয়। এগুলো আসলে প্রক্রিয়াগত, আমলাতান্ত্রিক ও আইনগত পরিবর্তন। তারা বলছেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি মনে রাখতে হবে তা হলো এই পরিবর্তনগুলো আবার বাতিল করে দেয়া যেতে পারে।
ফারুক ও ব্রাউন লিখেছেন, এই পরিবর্তনগুলো মোহাম্মদ বিন সালমানের ক্ষমতা বৃদ্ধি ও তার প্রতি সরকারি কর্মকর্তাদের আনুগত্য নিশ্চিত করার কেবল আরেকটি উপায় বলে কিছুটা সন্দেহ রয়েছে।
শুধুমাত্র প্রোপাগাণ্ডা?
সামাজিক কিছু বিষয়ে পরিবর্তন এলেও সৌদি শাসকেরা কীসের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেন সেই বিষয়ে এখনও অস্বচ্ছতা, অস্পষ্টতা থেকে গেছে। সৌদি সরকারের সমালোচকরা বলছেন, সামাজিক ও রাজনৈতিক উদারতার মধ্যে পার্থক্য এখনও একটি সমস্যা।
বেশ কিছু মানবাধিকার সংস্থা সৌদি আরবে চলা কয়েকটি ভণ্ডামির উদাহরণ তুলে ধরেছে। যেমন গাড়ি চালানোর অনুমতি পাওয়ার আন্দোলন করতে গিয়ে কারাগারে যাওয়া নারী অধিকার কর্মীদের এখনও জেলে রাখা হয়েছে। এছাড়া মৃত্যুদণ্ড কমানোর অঙ্গীকার করার পরও দেশটি এখনও মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ দেশ।
বার্লিনের ইউরোপিয়ান সৌদি অর্গানাইজেশন ফর হিউম্যান রাইটসের গবেষক দুয়া ঢায়নি বলছেন, সৌদি আরবে যে সংস্কারগুলো করা হচ্ছে তার প্রভাব আছে, তবে তা সীমিত।
তিনি বলেন, ‘কিছু পরিবর্তন হয়েছে, তবে রাজনৈতিক বন্দিদের সঙ্গে ব্যবহার কিংবা বাকস্বাধীনতা বিষয়ে প্রকৃত পরিবর্তন হয়নি। এই পরিবর্তন মানবাধিকার বিষয়ে অর্থপূর্ণ উপায়ে প্রভাব ফেলে না এবং যতক্ষণ পর্যন্ত না তা হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত এগুলো শুধুই প্রোপাগাণ্ডা।’ ডিডব্লিউ।
এসএস