করোনার ডেল্টা ধরনকে নিষ্ক্রিয় করতে সক্ষম কোভ্যাক্সিন

ভারতীয় ওষুধ কোম্পানি ভারত বায়োটেক এবং দেশটির চিকিৎসা গবেষণা সংক্রান্ত জাতীয় পর্যায়ের প্রতিষ্ঠান ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চের উদ্ভাবিত টিকা কোভ্যাক্সিন করোনার পরিবর্তিত ধরন আলফা ও ডেল্টাকে নিষ্ক্রিয় করতে সক্ষম।
যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ চিকিৎসা গবেষণা প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ (এনআইএইচ)-এর সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এ তথ্য জানা গেছে।
বুধবার এক বিবৃতিতে এনআইএইচ জানিয়েছে, কোভ্যাক্সিনের ডোজ নিয়েছেন এমন কয়েকজন ব্যক্তির রক্তের নমুনা পরীক্ষা করে দেখা গেছে, এই টিকা কার্যকর ভাবে করোনাভাইরাসের পরিবর্তিত ধরন আলাফা ও ডেল্টাকে নিষ্ক্রিয় করতে পারে। টিকাটির মূল উপকরণ (অ্যাডজোভ্যান্ট) এক দিকে মানবদেহের প্রতিরোধী শক্তি বাড়িয়ে তোলে, অন্যদিকে টিকার কার্যকারিতাও বৃদ্ধি করে।
বিশেষভাবে প্রক্রিয়াজাত সার্স-কোভ-২ ভাইরাস (করোনাভাইরাস)-কে অ্যাডজোভ্যান্ট হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে কোভ্যাক্সিন টিকায়। প্রক্রিয়াজাত হওয়ার ফলে এই টিকার অ্যাডজোভ্যান্ট ভাইরাস মানবদেহে প্রবেশের পর বংশবিস্তার করতে পারেনা বটে, কিন্তু মানুষের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে তোলে এবং অ্যান্টিবডি প্রস্তুত করে পর্যাপ্ত পরিমাণে।
যুক্তরাষ্ট্রে কোভ্যাক্সিনের তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল শেষ হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, চলতি বছরেই এই ট্রায়ালের ফলাফল প্রকাশ করা হবে।
ভারতের চিকিৎসা বিষয়ক গবেষণার সঙ্গে যুক্ততার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে এনআইএইচ-এর। বুধবারের বিবৃতিতে এই টিকার তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল সম্পর্কিত কিছু তথ্য দেওয়া হয়েছে; বলা হয়েছে, ‘করোনায় আক্রান্তের পর যেসব রোগীর দেহে বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়, তাদের ক্ষেত্রে এই টিকা ৭৮ শতাংশ কার্যকর।’
‘যারা গুরুতর অসুস্থ, তাদের বেলায় এই টিকার কার্যকারিতা ১০০ ভাগ এবং উপসর্গবিহীন করোনা রোগীদের ৭০ শতাংশ সুরক্ষা দিতে সক্ষম কোভ্যাক্সিনের ডোজ।’
কোভ্যাক্সিন টিকায় যে অ্যাডজোভ্যান্ট ব্যবহার করা হয়েছে সেটি প্রস্তুত করেছে ভিরোভ্যাক্স নামের একটি মার্কিন ওষুধ কোম্পানি। কোম্পানিটির প্রতিষ্ঠাতা সুনীল ডেভিড একজন ভারতীয় বংশোদ্ভুত আমেরিকান।
এনআইএইচ এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান এনআইএআইডি (ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজ)-তে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন সুনীল। তারপর ২০০৯ সালে সেখান থেকে অবসর নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কানসাস অঙ্গরাজ্যের লরেন্স শহরে প্রতিষ্ঠা করেন নিজের কোম্পানি ভিরোভ্যাক্স।
এদিকে, কোভ্যাক্সিন টিকা বিষয়ক এনআইএইচ-এর সম্প্রতিক গবেষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ও এনআইএআইডি (ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজ)-এর পরিচালক ডা. অ্যান্থনি ফাউসি।
বুধবার এ বিষয়ক এক বার্তায় ডা. ফাউসি বলেন, ‘বৈশ্বিক এই মহামারিকে প্রতিহত করতে হলে প্রয়োজন বৈশ্বিক ও সমন্বিত উদ্যোগ। আমি খুবই আনন্দিত যে ভারত যে করোনা টিকা প্রস্তুত করেছে, তার অ্যাডজোভ্যান্ট যুক্তরাষ্ট্রে প্রস্তুত করা হয়েছে এবং যে প্রতিষ্ঠানটি এই অ্যাডজোভেন্ট প্রস্তুত করেছে, তার কর্ণধার একসময় এনআইএআইডির কর্মী ছিলেন।’
চলতি বছর ১৬ জানুয়ারি থেকে গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে ভারতে। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে প্রস্তুত করা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভারতীয় সংস্করণ কোভিশিল্ড ও ভারত বায়োটেকের করোনা টিকা কোভ্যাক্সিন ব্যবহার করা হয়েছে এই কর্মসূচিতে।
ব্রাজিলসহ বিশ্বের কয়েকটি দেশও তাদের টিকাদান কর্মসূচিতে এই টিকাটি ব্যবহার করছে। ভারত বায়োটেকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাদের হিসেব অনুযায়ী ভারত ও ভারতের বাইরে এ পর্যন্ত ২ কোটি ৫০ লাখ বা তার কিছু বেশি কোভ্যাক্সিন টিকার ডোজ ব্যবহার হয়েছে।
তবে এখনও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউিএইচও)-এর অনুমোদন পায়নি কোভ্যাক্সিন। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে কোম্পানির পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছে ডব্লিউএইচও বরাবর, এ সংক্রান্ত কাগজপত্রও পাঠানো হয়েছে। তবে সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তৃতীয় পর্যায়ের মেডিকেল ট্রায়ালের পরই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে ডব্লিউএইচও।
সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস, এনডিটিভি অনলাইন
এসএমডব্লিউ