শিগগিরই ডব্লিউএইচও’র অনুমোদন পাচ্ছে কোভ্যাক্সিন

আগামী ৪ থেকে ৬ সপ্তাহের মধ্যে জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) অনুমোদন পাবে ভারতের নিজস্ব করোনা টিকা কোভ্যাক্সিন। সংস্থার শীর্ষ বিজ্ঞানী ও গবেষক সৌম্য স্বামীনাথান শুক্রবার এক অনলাইন আলোচনাসভায় এ তথ্য জানিয়েছেন।
বিজ্ঞান ও পরিবেশ সংক্রান্ত দিল্লিভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়র্নমেন্ট আয়োজিত ওই আলোচনা সভায় এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে সৌম্য স্বামীনাথান বলেন, ‘কোনো টিকার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরি অনুমোদন পাওয়ার ক্ষেত্রে একটি সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া আছে।’
‘সেই প্রক্রিয়ার একটি অংশ হলো- সংশ্লিষ্ট কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানকে অবশ্যই তিনটি মেডিকেল ট্রায়াল সম্পূর্ণ করতে হবে এবং সেসব ট্রায়ালের পরিপূর্ণ তথ্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ন্ত্রক বিভাগ বরাবর জমা দিতে হবে। এর পাশাপাশি আরও যেসব তথ্য ওই কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানকে সরবরাহ করতে হবে তা হলো- তাদের উৎপাদিত টিকার নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা সংক্রান্ত তথ্য, টিকা প্রস্তুত প্রণালী সংক্রান্ত তথ্য এবং টিকার মান বিষয়ক তথ্য।’
‘এর মাধ্যমে এ প্রক্রিয়ার একটি অংশ শেষ হয়। অপর অংশটি হলো- বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ন্ত্রক বিভাগের বিশেষজ্ঞ প্যানেল সেসব তথ্য যথাযথ ভাবে পর্যালোচনার পর সিদ্ধান্ত নেয়- টিকার অনুমোদন দেওয়া হবে কি না অথবা আরও বিস্তৃত ট্রায়ালের প্রয়োজন আছে কি না কিংবা মান আরও উন্নত করতে হবে কি না ইত্যাদি।’
‘জরুরি প্রয়োজনে কোভ্যাক্সিন ব্যবহারের অনুমোদনের জন্য ডব্লিউএইচও-এর নিয়ন্ত্রক বিভাগকে যেসব তথ্য প্রদান করা প্রয়োজন ছিল- ভারত বায়োটেক ইতোমধ্যে তা সরবরাহ করেছে। আমরা বিষয়টি দেখছি এবং আমি আশা করছি, আগামী ৪-৬ সপ্তাহের মধ্যে কোভ্যাক্সিনকে জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহারে অনুমোদন দেবে ডব্লিউএইচও।’
২০২০ সালের শেষের দিকে ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের রাজধানী হায়দ্রাবাদভিত্তিক ওষুধ কোম্পানি ভারত বায়োটেক তাদের উদ্ভাবিত করোনা টিকা কোভ্যাক্সিন বাজারে আনে। এখন পর্যন্ত এটি ভারতের নিজস্ব প্রযুক্তিতে উৎপাদিত একমাত্র করোনা টিকা।
এই টিকাটি প্রস্তুত করা হয়েছে মৃত ও বিশেষভাবে প্রক্রিয়াজাত করোনাভাইরাস দিয়ে। করোনাভাইরাসের যে নমুনাটি এই টিকা তৈরির ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে- ভারত বায়োটেককে তা সরবরাহ করেছে দেশটির জীবাণুবিষয়ক গবেষণা সংস্থা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি।
কোভ্যক্সিন দুই ডোজের করোনা টিকা। এটি সংরক্ষণ করতে হয় ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়। গত ৩ জুলাই কোভ্যাক্সিনের তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালের তথ্য প্রকাশ করেছে ভারত বায়োটেক। সেখানে বলা হয়েছে, করোনা প্রতিরোধে প্রায় ৭৮ শতাংশ কার্যকর কোভ্যাক্সিন।
চলতি বছর ১৬ জানুয়ারি থেকে ভারতে গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু করেছে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার। এই কর্মসূচিতে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা করোনা টিকার ভারতীয় সংস্করণ কোভিশিল্ড, যেটি প্রস্তুত করেছে ভারতের টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সেরাম ইনস্টিটিউট এবং ভারত বায়োটেকের টিকা কোভ্যাক্সিনকে অনুমোদন দিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
ভারতের টিকাদান কর্মসূচিতে কোভ্যাক্সিন ও কোভিশিল্ড- দু’টি টিকাই ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এছাড়া ব্রাজিলসহ আরও কয়েকটি দেশও ইতোমধ্যে জরুরি প্রয়োজনে কোভ্যাক্সিন ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে।
করোনায় জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য এ পর্যন্ত ৬ টি টিকার অনুমোদন দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এগুলো হলো- ফাইজার-বায়োএনটেক, অ্যাস্ট্রাজেনেকা (সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত), অ্যস্ট্রাজেনেকা (ইউরোপে উৎপাদিত), জনসন অ্যান্ড জনসন বা জ্যানসেন, মডার্না ও সিনোফার্ম।
কোভ্যাক্সিন অনুমোদন পেলে এই সংখ্যা পৌঁছাবে সাতে।
সূত্র : পিটিআই, এনডিটিভি অনলাইন
এসএমডব্লিউ