ভারতের ভোপালে টিকা নেওয়া স্বেচ্ছাসেবকের মৃত্যু

ভারত বায়োটেকের টিকা কোভ্যাক্সিন নেয়ার ১০ দিনের মাথায় মৃত্যু হয়েছে ভারতের মধ্যপ্রদেশের শহর ভোপালের এক স্বেচ্ছাসেবকের। মৃত স্বেচ্ছাসেবক দীপক মারাবি(৪২) নামের ওই যুবক কোভ্যাক্সিনের তৃতীয় তথা শেষ ধাপের পরীক্ষামূলক প্রয়োগে (ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল) অংশ নিয়েছিলেন।
দীপকের মৃতদেহ ময়নাতদন্ত শেষে মধ্যপ্রদেশ মেডিকো লিগ্যাল ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর চিকিৎসক অশোক শর্মা বলেন, ‘ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে মনে করা হচ্ছে, ওই যুবকের বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হয়েছে। ভিসেরা রিপোর্ট পাওয়ার পরেই মৃত্যুর আরও সুনির্দিষ্ট কারণ জানা যেতে পারে।’
তবে ভারত বায়োটেকের দাবি, এই মৃত্যুর সঙ্গে টিকা নেওয়ার কোনও সম্পর্ক নেই।
হায়দরাবাদের ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থা ভারত বায়োটেকের তৈরি করোনার টিকা ‘কোভ্যাক্সিন’-এর তৃতীয় তথা শেষ ধাপের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ বা ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে ভারতজুড়ে। দেশের বেশ কয়েকটি হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজে এই ট্রায়াল চলছে। তার মধ্যে অন্যতম মধ্যপ্রদেশের পিপলস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, গত বছরের ১২ ডিসেম্বর স্বেচ্ছায় টিকা নেন ভোপালের যুবক দীপক মরাবি। এর পর ২১ ডিসেম্বর মৃত্যু হয় তাঁর।
পেশায় দিনমজুর দীপক জনজাতি সম্প্রদায়ের। তার বাড়ির এক সদস্য বলেন, টিকা নিয়ে বাড়ি ফেরার পরে সামান্য কিছু শারীরিক অসুস্থতার কথা বলেছিলেন। ১৭ ডিসেম্বর কাঁধে ব্যথা শুরু হয়। তার দু’দিন পর মুখ দিয়ে লালা বেরোনো শুরু করে। বাড়ির লোকেরা বললেও ডাক্তারের কাছে যেতে রাজি হননি দীপক। বলেছিলেন, দু’-এক দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যাব। কিন্তু অবস্থার আরও অবনতি হলে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই মারা যান দীপক।’
তবে ভারত বায়োটেকের দাবি, এই মৃত্যুর সঙ্গে টিকার কোনও সম্পর্ক নেই। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে সংস্থার পক্ষ থেকে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘টিকা নেওয়ার ৯ দিন পর ওই স্বেচ্ছাসেবকের মৃত্যু হয়েছে এবং প্রাথমিক পর্যালোচনা থেকে বোঝা যাচ্ছে যে এই মৃত্যুর সঙ্গে পরীক্ষামূলক ভাবে দেওয়া ডোজের কোনও সম্পর্ক নেই।’
দীপককে টিকা দেয়ার ক্ষেত্রে যাবতীয় প্রটোকল মানা হয়েছিল বলেও বিবৃতিতে জানিয়েছে ভারত বায়োটেক।
এদিকে, এই ঘটনা নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেঠন মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে এক বার্তায় তিনি বলেন, ‘ভিসেরা টেস্টের জন্য পাঠানো হয়েছে। সবাইকে আবেদন, বিষয়টা অত্যন্ত স্পর্শকাতর। টিকা নিয়ে অযথা কোনও ভুল তথ্য বা আতঙ্ক যেন না ছড়ায়, যাতে টিকাদান প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়।’
বার্তায় মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, ‘ভিসেরা রিপোর্ট পাওয়া যাবে। তবে আমি নিশ্চিত, টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। কারণ, সেটা হলে ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই বোঝা যায়। এত দিন পরে নয়।’
মধ্যপ্রদেশ মেডিকো লিগ্যাল ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর চিকিৎসক অশোক শর্মাও ভিসেরা রিপোর্টের ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, ‘ভিসেরা রিপোর্ট পাওয়ার আগে মৃত্যুর সঠিক কারণ সম্পর্কে কিছু বলা কঠিন।”
মধ্যপ্রদেশ পুলিশ গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।
সূত্র: আনন্দবাজার
এসএমডব্লিউ