করোনায় প্রথম মৃত্যুর বছরপূর্তি, উৎস অধরা এখনও

ঠিক এক বছর আগে। ২০২০ সালের ১১ জানুয়ারি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চীনের উহানে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল। মারা গিয়েছিলেন ৬১ বছর বয়সী এক চীনা নাগরিক।
প্রথমে বলা হয়েছিল- উহানের একটি মাংসের বাজার থেকেই করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। মৃত ওই ব্যক্তি নিয়মিত উহানের ওই মাংস বাজারে যাতায়াত করতেন।
তবে বেইজিংয়ের দাবি, চীনে প্রথম এই সংক্রমণ শনাক্ত হলেও, দেশটি নভেল করোনাভাইরাসের উৎস নয়। তা হলে উৎস কোথায়! এ প্রশ্নের উত্তর অবশ্য ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যুর ঘটনার একবছর পরও অজানা।
ওয়ার্ল্ডোমিটারসের তথ্য অনুযায়ী, সারা বিশ্বে করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা সংখ্যা ৯ কোটি ছাড়িয়েছে। এছাড়া গত ৩ মাস ধরে চলছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। এসময়ে বিশ্বব্যাপী দ্বিগুণ গতিতে ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে। প্রাণ হারিয়েছেন ১৯ লাখেরও বেশি।

কিন্তু একবছর পরে এসেও করোনা মহামারির অনেক কিছুই এখনও অজানা। করোনাভাইরাসের উৎস নির্ধারণে উহানে বিশেষজ্ঞ দল পাঠাতে চায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। কিন্তু সংস্থাটির বিশেষজ্ঞদের চীনে প্রবেশের অনুমতি দেয়নি বেইজিং। এ নিয়ে হতাশাও জানায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থ।
শুধু উৎস নয়, ভাইরাসের চরিত্র নিয়েও সন্দিহান বিশেষজ্ঞেরা। মূল প্রশ্ন, ভাইরাসটি কী ভাবে প্রাণীর শরীর থেকে মানুষের শরীরে ছড়াল? প্রথমে দাবি করা হয়েছিল, ২০১৯ সালের শেষে উহানের মাংসের বাজার থেকে ভাইরাসটি ছড়িয়েছে। বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর মাংস বিক্রি হয় ওই বাজারে। বাদুড়ের মাংস নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন বিশেষজ্ঞেরা।
পরে ষড়যন্ত্রের তত্ত্বও উঠে আসে। আমেরিকার বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেন, উহানের গবেষণাগার থেকে ভাইরাসটি ছড়িয়েছে। অবশ্য তার দাবির সপক্ষে কোনো প্রমাণ হাজির করেননি ট্রাম্প।
মৃত্যু ও আক্রান্তের সঙ্গে সারা বিশ্বের অর্থনীতিতেও ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে এই ভাইরাস। শুরুতে চীন বেশ তৎপরতার সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করলেও, ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে বেশি সময় লাগেনি। তবে এই ভাইরাসের মূল উৎস কী এবং পশুর দেহ থেকে কী ভাবে মানুষের শরীরে এই ভাইরাস সংক্রমিত হল, সেই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়নি এখনও।
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে মারা গেছেন মোট ৩ লাখ ৮৩ হাজার ২৭৫ জন। ৮ জানুয়ারির তথ্য অনুযায়ী এ সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৭৪ হাজার ১২৪ জন।

এরপরেই বেশি মৃত্যু হয়েছে ভারতে, ১ লাখ ৫১ হাজার ১৯৮; ৮ জানুয়ারি যা ছিল ১ লাখ ৫০ হাজার ৬০৬। মৃত্যুর তালিকায় তৃতীয় দেশ ব্রাজিল। সেখানে মৃত্যু হয়েছে ২ লাখ ৩ হাজার ১৪০ জনের।
তালিকায় রাশিয়ার অবস্থান চতুর্থ। যুক্তরাজ্য পঞ্চম। ফ্রান্স ষষ্ঠ। তুরস্ক সপ্তম। ইতালি অষ্টম। স্পেন নবম। জার্মানি দশম। তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ২৭তম।
আজ সোমবার সকাল পর্যন্ত সারা বিশ্বে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন অন্তত ৯ কোটি ৬ লাখ ৮৭ হাজার ৯৮৭ জন। তবে আক্রান্তের আসল সংখ্যা এর চেয়ে বেশি হবে।
আক্রান্তের তালিকারও শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে এ পর্যন্ত মোট আক্রান্ত হয়েছেন ২ কোটি ২৯ লাখ ১৭ হাজার ৩৩৪ জনের বেশি মানুষ। মৃত্যুর মতো আক্রান্তের সংখ্যাতেও এর পরে রয়েছে ভারত ও ব্রাজিলের নাম।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্তের পর প্রাণঘাতী এ ভাইরাসটি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ার পর এখন তার প্রতিষেধক টিকা বা ভ্যাকসিন জোগাড়ের জন্য সবাই মরিয়া। টিকা তৈরির গবেষণা মূলত চলছে ধনী দেশগুলোতে। করোনার কার্যকর টিকা তৈরির পর এই দেশগুলো যে নিজের নাগরিকদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এই টিকা সরবরাহ করবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

ফলে এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকায় বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোকে এসব ধনী দেশের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে।
বৈশ্বিকভাবে ভ্যাকসিন তৈরির দৌড়ে নেমেছে ২শ টিরও বেশি প্রতিষ্ঠান। ভ্যাকসিন রাজনীতি, ভ্যাকসিন বাণিজ্য এসব বিষয়েও কথা হচ্ছে। কিন্তু ভ্যাকসিন কেন এতো গুরুত্বর্পূণ হয়ে উঠলো? এর কারণ হচ্ছে ভ্যাকসিন ছাড়া এই মহামারি মোকাবিলার আর কোনো বাস্তবসম্মত এবং আপাত কার্যকর উপায় নেই।
যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভ্যাকসিন নেয়া মানেই করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে নিরাপদ থাকার গ্যারান্টি নয়। টিকা মানুষের শরীরে কতদিন কার্যকর থাকবে সেটা নিশ্চিত নয় কেউই।
টিএম