ভারতে করোনার তৃতীয় ঢেউ অনিবার্য

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের বিপর্যয় এখনও পুরোপুরি কাটেনি, কিন্তু এর মধ্যেই ভারতে তৃতীয় আর একটি ঢেউ আসার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দেশটির চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, সরকার ও জনগণের উদাসীনতাই এই বিপর্যয় ডেকে আনবে।
ভারতের চিকিৎসকদের সর্ববৃহৎ সংগঠন ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ) মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত একটি বিবৃতি দিয়েছে। বিবৃতিতে সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে আমরা বলতে বাধ্য হচ্ছি যে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ থেকে ভারতের সরকার এবং জনগণ খুব অল্পই শিক্ষা নিয়েছে। মাস্ক বা কোনো প্রকার সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহারে জনগণের উদাসীনতা দিন দিন বাড়ছে এবং স্বাস্থ্যবিধি বা সামাজিক দূরত্ব না মানার প্রবণতা হ্রাস পাচ্ছে। বিভিন্ন রাজ্যের সরকারও লকডাউনসহ যাবতীয় করোনা বিধিনিষেধ শিথিল করছেন।’
‘ভ্রমণ, তীর্থযাত্রা, স্বাভবিক কর্মজীবন সবই জরুরি, কিন্তু আমরা যদি আরও কয়েক মাস একটু সংযত হয়ে চলি, তাহলে সব দিক থেকে সবার জন্য তা মঙ্গলকর হবে। বর্তমানে সাধারণ মানুষের মধ্যে যে উদাসীনতা দেখা যাচ্ছে, তাতে যদি লাগাম না টানা যায়, সেক্ষেত্রে খুব দ্রুতই ভারতে করোনার তৃতীয় আর একটি ঢেউ অনিবার্য ।’
চলতি বছর মার্চ থেকে ভারতে শুরু হয় করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। ফেব্রুয়ারিতে যেখানে ভারতে প্রতিদিন করোনায় আক্রান্ত হতেন বড়জোর ১২-১৫ হাজার, মৃত্যু হতো ১০০ বা তার কিছু বেশি, সেখানে মার্চের মাঝামাঝি থেকে দেশটিতে হু হু করে বাড়তে শুরু করে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা।
এই বিপর্যয় চুড়ান্ত অবস্থায় পৌঁছায় মে মাসে। ওই মাসে প্রায় প্রতিদিন ভারতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪ লাখ বা তার চেয়েও বেশিসংখ্যক মানুষ, মৃত্যু হয়েছে প্রতিদিন ৪ হাজারেরও বেশি করোনা রোগীর।
ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, মার্চের মাঝামাঝি থেকে মে- এই আড়াই মাসে ভারতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫ কোটিরও বেশি মানুষ, মৃত্যু হয়েছে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ জনের।
লাগমহীন এই সংক্রমণ পরিস্থিতিতে নিয়ন্ত্রণ আনতে এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে লকডাউনসহ কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা শুরু করে ভারতের বিভিন্ন রাজ্য সরকার। ফলে ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণে আসতে শুরু করোনার দ্বিতীয় ঢেউ।
বর্তমানে গত এক সপ্তাহ যাবৎ ভারতে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ৪০ হাজারের কম লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সংক্রমণ পুরোপুরি না হলেও অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসায় লকডাউনসহ অন্যান্য বিধিনিষেধসমূহও শিথিল করছে বিভিন্ন রাজ্য সরকার। এমন কি, ইতোমধ্যে উত্তর প্রদেশের রাজ্য সরকার ঘোষণা দিয়েছে, আগামী ২৫ জুলাই রাজ্যে কানওয়ার যাত্রা উৎসব আয়োজনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
এই বিষয়টির সমালোচনা করেছেন ভারতের অনেক চিকিৎসক। তারা বলছেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের আগমনের মুখে কুম্ভ মেলা যেমন ‘সুপার স্প্রেডারের’ ভূমিকা নিয়েছিল, এই উৎসবের পরও তেমন পরিস্থিতি দেখা দেওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।
গত ১৬ জানুয়ারি থেকে গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু টিকার ঘাটতি দেখা দেওয়ায় গতি হারিয়ে ফেলেছে সেই কর্মসূচি।
দেশটির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ভারতের মোট প্রাপ্তবয়স্কদের মাত্র ৬ শতাংশ করোনা টিকার দুই ডোজ সম্পূর্ণ করেছেন; আর অন্তত একটি ডোজ নিয়েছেন ২২ শতাংশ।
সূত্র : বিবিসি
এসএমডব্লিউ