কৃষি আইন স্থগিতে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ

বিতর্কিত ৩ কৃষি আইন স্থগিত করতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির সর্বোচ্চ আদালত। নির্দেশে আদালত বলেছেন, কেন্দ্রীয় সরকার যদি গড়িমসি করে সেক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট থেকে এ ব্যাপারে উদ্যোগী ভূমিকা নেয়া হবে।
সোমবার সুপ্রিম কোর্টে কৃষি আইনের ওপর শুনানি ছিল। শুনানিতে ভারতের প্রধান বিচারপতি এসএ বোবদে উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, ‘দিনের পর দিন দিল্লির রাজপথে বয়স্ক মানুষেরা বসে আছেন, মহিলারা বসে আছেন, কেন সরকার এই পরিস্থিতি দেখেও কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না?’
‘আগামী দিনে যদি কেন্দ্রীয় সরকার ৩টি আইন প্রয়োগে স্থগিতাদেশ না দেয়, তাহলে আদালতকে এগিয়ে আসতে হবে।’
কৃষক আন্দোলনে বেশ কয়েকজন কৃষকের মৃত্যু হয়েছে উল্লেখ করে কেন্দ্রীয় সরকারকে সতর্কবার্তা দিয়ে আদালত বলেন, ‘কোনওভাবে এই আন্দোলনের ফলে পরিস্থিতি যেন হাতের বাইরে না যায়। আমরা কেউ নিজেদের রক্তমাখা হাত দেখতে চাই না। কোনও মৃত্যু বা কোনও ক্ষত দেখতে চাই না আমরা।’
এর আগের শুনানিতে পরিস্থিতির কোনও উন্নতি হয়েছে কি না জানতে চেয়ে সরকারপক্ষের আইনজীবীকে প্রশ্ন করেছিলেন আদালত। জবাবে সরকারপক্ষের আইনজীবী অ্যাটর্নি জেনারেল কেকে বেনুগোপাল জানিয়েছিলেন, কৃষকদের সঙ্গে কেন্দ্রের গঠনমূলক আলোচনা চলছে।
২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভারতের আইনসভায় তিনটি কৃষি আইনসংক্রান্ত বিল উত্থাপন করা হয়। এরপর ২৭ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতির সাক্ষরের মাধ্যমে আইনে পরিণত হয় বিল তিনটি।
আইন পাশের পরই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর কৃষক সংগঠনগুলো। আইন বাতিলের দাবিতে ২৬ নভেম্বর থেকে ভারতের রাজধানী দিল্লির উপকণ্ঠে জড়ো হতে থাকেন লাখ লাখ কৃষক। ভারতের রাজধানীর সঙ্গে অন্যান্য প্রদেশ ও প্রাদেশিক শহরগুলোর সঙ্গে সংযোগকারী মহাসড়কগুলোতে প্রতিবাদী অবস্থান নেন তারা।
কৃষকদের আশঙ্কা, নতুন এ কৃষি সংস্কার আইনগুলো ভারতের নিয়ন্ত্রিত বাজারব্যবস্থাকে ভেঙে দেবে এবং সরকারও ধীরে ধীরে নির্ধারিত মূল্যে গম ও ধান কেনা বন্ধ করে দেবে; যার ফলশ্রুতিতে তাদেরকে ফসল বেচতে বেসরকারি ক্রেতাদের সঙ্গে দরকষাকষিতে নামতে হবে।
ইতোমধ্যে এ বিষয়ে কৃষকদের সঙ্গে টানা আটটি বৈঠক করেছে কেন্দ্রীয় সরকার, কিন্তু কোনো মীমাংসা হয়নি। ৩ কৃষি আইন বাতিল করার দাবিতে এখনও অনড় রয়েছেন কৃষকরা। অন্যদিকে, সরকার পক্ষ থেকে এখনও আইন বাতিল করার কথা বলা হয়নি।
ভারতের ২ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনীতির প্রায় ১৫ শতাংশই কৃষির উপর নির্ভরশীল; দেশটির ১৩০ কোটি জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি এ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।
সোমবারের শুনানিতে সরকারপক্ষের আইনজীবী কেকে বেনুগোপাল বলেন, ‘ ৩-৪ টি রাজ্যের কৃষকরা প্রতিবাদ করছেন, এখানে বৃহত্তর কৃষক সমাজের অংশগ্রহণ নেই। দক্ষিণ ভারত থেকে কোনও কৃষক এই আন্দোলনে অংশ নেননি।’
এর জবাবে প্রধান বিচারপতি বলেন,‘ আমরা আজ পর্যন্ত একাধিক প্রশ্নের সদুত্তর পাইনি; কিন্তু দেখতে পাচ্ছি পরিস্থিতি ক্রমে খারাপ থেকে আরও খারাপ হচ্ছে। কেন নারী, বয়স্করা আন্দোলনে অংশ নিচ্ছেন, সরকার জানে?’
সূত্র: আনন্দবাজার
এসএমডব্লিউ