ইয়েমেনের হুথিকে ‘সন্ত্রাসী’ গোষ্ঠী ঘোষণা করছে যুক্তরাষ্ট্র

ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে ঘোষণা করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেছেন, কয়েকবছর ধরে চলা সংঘাতের কারণে বিশ্বের মানবিক বিপর্যয়ের শীর্ষে রয়েছে ইয়েমেন এবং এর জন্য দায়ী হুথি বিদ্রোহীরা।
দেশটিতে ত্রাণকার্য পরিচালনা করতে যাওয়া বিভিন্ন আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী গোষ্ঠীকে অব্যাহত হুমকি দিচ্ছে হুথিসহ সেখানকার বিবাদমান গোষ্ঠীগুলো।
এ সব বিষয় আমলে নিয়েই এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্র সরকার নিতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন পম্পেও।
রোববার এক বিবৃতিতে পম্পেও বলেন, ‘পুরো ইয়েমেন এবং এর সীমান্তজুড়ে হামলার ঘটনায় সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা হুমকির মুখে। কয়েকবছর ধরে সংঘাতের কারণে দেশটির অবকাঠামোগত ও বাণিজ্যিক নৌ-পরিবহন অবস্থা প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। দেশটির লাখ লাখ মানুষ খাদ্য ও অন্যান্য মৌলিক সামগ্রীর অভাবে ধুঁকছেন। ত্রাণ সংস্থাগুলোর কর্মীদের ভয়-ভীতি দেখানো হচ্ছে। এছাড়া দেশটিতে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহও সক্রিয় হয়ে উঠেছে।’
‘এই যাবতীয় সমস্যার জন্য দায়ী তারা (হুথি বিদ্রোহীরা)।’
গত ৩০ ডিসেম্বর ইয়েমেনের দ্বিতীয় প্রধান শহর এডেনের বিমানবন্দরে হামলার ঘটনাটিও বিবৃতিতে উল্লেখ করেন পম্পেও। ওই হামলায় ২৬ জন নিহত হয়েছিলেন। ইয়েমেনের সৌদি সমর্থিত সরকার এ হামলার জন্য হুথি বিদ্রোহীদের দায়ী করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার মধ্যে থাকা হুথি বিদ্রোহীরা অবশ্য ইতোমধ্যে দেশটির অধিকাংশ এলাকায় নিজেদের দখলে নিয়ে এসেছে।
তবে ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে আখ্যায়িত হলে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে হুথিদের বিষয়ে যে ভীতি দেখা দেবে তাতে ব্যাংকে আর্থিক লেনদেন, খাদ্য ও জ্বালানি ক্রয়সহ নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে হুথি বিদ্রোহীদের।
পরমাণু প্রকল্পের জন্য ইরানের প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের বৈরী মনোভাব সবার জানা। কয়েক সপ্তাহ আগে ইরানের ওপর আবারও নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের নব-নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের লক্ষ্য, ক্ষমতা গ্রহণের পর ইরানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে বৈরীতা কমানো এবং দেশটিকে আন্তর্জাতিক পরমাণু চুক্তির অন্তর্ভূক্ত করা।
রোববার পম্পেওর এ ঘোষণা ক্ষমতাগ্রহণের পর মধ্যপ্রাচ্যে বাইডেনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথ আরও কঠিন করে তুলবে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা।
তবে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত রায়ান ক্রোকার পম্পেওর এই ঘোষণার সমালোচনা করেছেন। বর্তমানে অবসরে যাওয়া মার্কিন এই পররাষ্ট্র কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইয়েমেনের উত্তরাঞ্চল থেকে আসা হুথিরাই আসলে দেশটির প্রকৃত কর্তৃপক্ষ এবং দেশের যে দুটি বন্দর দিয়ে ইয়েমেনের জনগণের কাছে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দিতে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ত্রাণ সংস্থা ও এনজিও কর্মীরা দেশের যে দু’টি বন্দর প্রধানত ব্যবহার করেন, সেই সানা বিমানবন্দর ও হুদাইদা বন্দর নিয়ন্ত্রণ করেন হুথিরা।
ক্রোকার বলেন, ‘এ ঘোষণায় কারও কোনো লাভ হবে না। হুথিরা উড়ে এসে জুড়ে বসা কোনো গোষ্ঠী নয়। তারা ইয়েমেনি সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থার অপরিহার্য অংশ এবং বরাবর তাই থাকবে। তাদেরকে সন্ত্রাসী ঘোষণা করা হলে সংকটকবলিত ইয়েমেনের সমস্যা আরও বাড়বে, কমবে না।’
কাতারভিত্তিক আরব সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি স্টাডিজের পলিসি বিশ্লেষণ বিভাগের প্রধান মারওয়ান কাবালান বলেন, ‘আমি তার (পম্পেও) এই বিবৃতিকে গুরুত্ব দেব এ কারণে যে, এর মধ্যে দিয়ে ইয়েমেনে শান্তিস্থাপন প্রক্রিয়ায় একটি বড় প্রতিবন্ধকতা তৈরি হলো। কারণ হুথিদের এখনও কেউ বৈধ শাসক হিসেবে স্বীকৃতি না দিলেও ইয়েমেনের রাজনৈতিক বাস্তবতায় বর্তমানে তারা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় রয়েছে।’
‘আপনি যখন কাউকে সন্ত্রাসী হিসেবে আখ্যা দেন, সেক্ষেত্রে তার সঙ্গে শান্তিপূর্ণ আলোচনার পথ বন্ধ হয়ে যায়।’
২০১৪ সালে ইয়েমেনের ক্ষমতাসীন সরকারকে হটিয়ে হুথি বিদ্রোহীরা দেশটির রাজধানী সানা দখল করে নেয়ার মধ্যে দিয়ে সংঘাত শুরু হয়। পরিস্থিতি আরও প্রকট হয় ২০১৫ সালের মার্চে, সৌদি সমর্থনপুষ্ট সরকারপন্থী মিলিশিয়া বাহিনী যখন হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে।
উভয়পক্ষের সংঘর্ষে বিধ্বস্ত ইয়েমেনে প্রয়োজনীয় খাবার ও সুপেয় পানির অভাবে ধুঁকছেন বর্তমানে আড়াই কোটি মানুষ, যা দেশটির মোট জনসংখ্যার ৮৪ শতাংশ।
চলমান সংঘাতের কারণে করোনা মহামারি দেখা দেয়ারও আগে ইয়েমেনের স্বাস্থ্যসেবা কাঠামো সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে। জাতিসংঘ বরাবরই বলে আসছে, মানবিক বিপর্যয়ের তালিকায় থাকা দেশগুলোর মধ্যে ইয়েমেনের অবস্থান শীর্ষে।
এসএমডব্লিউ