চীনের বাইরে বিশ্বে ১ম সিনোভ্যাকের টিকার অনুমোদন ইন্দোনেশিয়ার

• গত শুক্রবার সিনোভ্যাক বায়োটেকের টিকা ‘হালাল’ ঘোষণা করে ইন্দোনেশিয়া
• চীনের বাইরে বিশ্বে প্রথম ইন্দোনেশিয়া এই ভ্যাকসিন অনুমোদন দিল
• প্রথম দফায় ইন্দোনেশিয়াকে ৩০ লাখ ডোজ দিচ্ছে সিনোভ্যাক বায়োটেক
• বুধবার প্রথম ব্যক্তি হিসেবে টিকা নেবেন প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো
চীনের সিনোভ্যাক বায়োটেকের তৈরি করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন করোনাভ্যাককে ‘হালাল’ ঘোষণার তিনদিন পর দেশজুড়ে এটি প্রয়োগের অনুমোদন দিয়েছে ইন্দোনেশিয়ার খাদ্য ও ওষুধ কর্তৃপক্ষ। চীনের বাইরে বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে সোমবার ইন্দোনেশিয়া সিনোভ্যাকের এই ভ্যাকসিনের জরুরি প্রয়োগের অনুমোদন দিয়েছে।
এর আগে, গত শুক্রবার ইন্দোনেশিয়ার ধর্মীয় সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী কর্তৃপক্ষ ইন্দোনেশীয় উলামা কাউন্সিল (এমইউআই) সিনোভ্যাক বায়োটেকের উদ্ভাবিত করোনা ভ্যাকসিন হালাল অথবা ইসলামের দৃষ্টিতে বৈধ বলে ঘোষণা দেয়।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের উর্ধ্বগতি ও মৃত্যুর লাগাম টানতে দেশজুড়ে সিনোভ্যাকের ভ্যাকসিনের জরুরি প্রয়োগের অনুমোদন দেয় বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম এই দেশ। জাকার্তা চীনা ভ্যাকসিনের অনুমোদন দিলেও অনেক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলছেন, সিনোভ্যাকের টিকা পরীক্ষার তথ্য-উপাত্তের ঘাটতি এবং ভিন্ন ভিন্ন দেশে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতার ভিন্ন হারের কারণে টিকাদানের প্রতি মানুষের আস্থা হ্রাস পেতে পারে।
ইন্দোনেশিয়ার খাদ্য ও ওষুধ কর্তৃপক্ষ (বিপিওএম) বলছে, সিনোভ্যাক বায়োটেকের করোনাভ্যাকের মানবদেহে শেষ ধাপের পরীক্ষার অন্তঃবর্তী ফলে ৬৫ দশমিক ৩ শতাংশ কার্যকারিতার প্রমাণ মিলেছে। ব্রাজিল এবং তুরস্কে চালানো পরীক্ষার কার্যকারিতার তুলনায় ইন্দোনেশিয়ায় এই কার্যকারিতার হার সামান্য কম। এ দু’টি দেশেও করোনাভ্যাকের গণহারে প্রয়োগ শুরুর কথা রয়েছে।
পরীক্ষার এই ফল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্ধারিত ন্যূনতম ৫০ কার্যকারিতার শর্ত পূরণ করে।
ইন্দোনেশিয়ার খাদ্য ও ওষুধ কর্তৃপক্ষ প্রধান পেনি কে. লুকিতো
বিশ্বের চতুর্থ সর্বাধিক জনবহুল ২৭ কোটি মানুষের এই দেশটিতে আগামী বুধবার করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের প্রয়োগ শুরু হবে। চীনের সিনোভ্যাক বায়োটেকের কাছ থেকে ৩০ লাখ ডোজ করোনা ভ্যাকসিন কিনেছে ইন্দোনেশিয়া। নাগরিকদের উৎসাহ দিতে ওইদিন প্রথম ব্যক্তি হিসেবে করোনাভাইরাসের এই ভ্যাকসিন নেবেন দেশটির প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় করোনাভাইরাসে সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করছে ইন্দোনেশিয়া। অর্থনীতি এবং জনস্বাস্থ্যের ক্ষয়ক্ষতি প্রশমনে একটি টিকার ওপর নির্ভর করছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। গত কয়েকদিন ধরে টানা করোনা সংক্রমণের রেকর্ড তৈরি হয়েছে এই দেশটিতে; দৈনিক গড়ে ১০ হাজারের বেশি করে মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন।
করোনার উত্থান এবং বৈশ্বিক মহামারি
• ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে প্রথম করোনা শনাক্ত হয়
• চীনে করোনায় প্রথম প্রাণহানি ঘটে ৯ জানুয়ারি
• ১৩ জানুয়ারি চীনের বাইরে প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয় থাইল্যান্ডে
• এই ভাইরাসে বিশ্বে প্রথম প্রাণহানি ঘটে ২ জানুয়ারি ফিলিপাইনে
• ১১ মার্চ ‘করোনা মহামারি’ ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
দক্ষিণ এশিয়ায় যে কয়েকটি দেশে করোনাভাইরাস মহামারি গুরুতর আকার ধারণ করছে ইন্দোনেশিয়া সেসবের একটি। দেশটিতে এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৮ লাখ ৩৬ হাজারের বেশি মানুষ এবং মৃত্যু ছাড়িয়েছে ২৪ হাজার ৩০০।
গত সপ্তাহে ব্রাজিলে সিনোভ্যাকের ভ্যাকসিনের পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়। এতে দেখা যায়, করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এই ভ্যাকসিনের কার্যকারিতার হার প্রায় ৭৮ শতাংশ। অন্যদিকে, গত ডিসেম্বরে চীনের গবেষকরা বলেন, সিনোভ্যাক বায়োটেকের ভ্যাকসিনের পরীক্ষার অন্তঃবর্তী ফলে ৯১ দশমিক ২৫ শতাংশ কার্যকারিতার প্রমাণিত হয়েছে।
চীনের সিনোভ্যাক বায়োটেকের ৩০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন পেয়েছে ইন্দোনেশিয়া। ইতোমধ্যে ১২ লাখ ডোজ দেশটির ৩৪টি অঙ্গরাজ্যে পৌঁছে গেছে।
করোনার বৈশ্বিক চিত্র
২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহানের একটি সামুদ্রিক খাবার বিক্রির বাজার থেকে প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ে। তখন থেকে এই ভাইরাস বিশ্বের ২১৮টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৯ কোটি ৭ লাখ ৬৮ হাজারের বেশি এবং মৃত্যু ছাড়িয়েছে ১৯ লাখ ৪৪ হাজার।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলেছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয়, তৃতীয় ঢেউয়ে বিশ্ব যখন ধুঁকছে; তখন অন্তত ৬০টি ভ্যাকসিন পরীক্ষার বিভিন্ন ধাপে রয়েছে। এরমধ্যে ব্রিটেনের অ্যাস্ট্রাজেনেকা-অক্সফোর্ড, মার্কিন ফাইজার ও জার্মানির বায়োএনটেক, মার্কিন মডার্না, রাশিয়ার স্পুটনিক-৫ ও চীনের সিনোফার্মের ভ্যাকসিনও রয়েছে।
এসএস