কংগ্রেসে ট্রাম্পকে ক্ষমতাচ্যুত করার প্রস্তাব উত্থাপিত

• কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদে প্রস্তাব উত্থাপন করে ডেমোক্র্যাটরা
• প্রস্তাবে উন্মত্ত জনতাকে ‘অভ্যুত্থানে প্ররোচণা’ দেওয়ার অভিযোগ
• প্রক্রিয়া সফল হলে দেশটির ইতিহাসে দু’বার অভিশংসিত হওয়া একমাত্র প্রেসিডেন্ট হবেন ট্রাম্প
• প্রেসিডেন্ট হিসেবে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন বলেও আনা হয়েছে অভিযোগ
• ২০১৯ সালেও প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসিত হয়েছিলেন ট্রাম্প
হচ্ছে-হচ্ছে বলে অবশেষে উত্থাপিত হয়েই গেল। মার্কিন কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদের ডেমোক্র্যাট সদস্যরা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ক্ষমতাচ্যুত (ইমপিচ) করার প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় সোমবার (১১ জানুয়ারি) সকালে প্রস্তাবটি প্রতিনিধি পরিষদে উত্থাপন করা হয়।
ক্ষমতার মাত্র ৯ দিন বাকি থাকতে মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষে প্রস্তাবটি উত্থাপন করা হলো। প্রস্তাবে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে উন্মত্ত জনতাকে ‘অভ্যুত্থানে প্ররোচণা’ দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।
কংগ্রেসে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনা অভিশংসন প্রস্তাবের ওপর বুধবার (১৩ জানুয়ারি) ভোট হতে পারে। যদি ইমপিচমেন্ট বা অভিশংসনের এ প্রক্রিয়া সফল হয়, তাহলে ট্রাম্প হবেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে দু’বার অভিশংসিত হওয়া একমাত্র প্রেসিডেন্ট।
অভিশংসন প্রস্তাবে বলা হয়, ক্যাপিটল ভবনে হামলা ও সহিংসতা চালাতে সমর্থকদের উস্কে দেওয়ার মাধ্যমে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সংকটাপন্ন করেছেন। তিনি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অখণ্ডতাকে হুমকি দিয়েছেন, শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরে হস্তক্ষেপ করেছেন। এছাড়া প্রেসিডেন্ট হিসেবে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের প্রতীক বলে পরিচিত ক্যাপিটল ভবনের ভেতরে গত সপ্তাহে সমর্থকদের নজিরবিহীন হামলা ও সহিংসতা এবং হামলা চালাতে সমর্থকদের উস্কে দেওয়ার অভিযোগ ওঠার পর ট্রাম্পকে ক্ষমতাচ্যুত করার জোরালো দাবি ওঠে। প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসনের বিল পাস হওয়ার পর এটিকে কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ- সিনেটে পাঠাতে হবে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে অপসারণ করতে হলে সিনেটে দুই-তৃতীয়াংশ ভোট দরকার হবে। কিন্তু সিনেটে এই মুহূর্তে রিপাবলিকানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ বলে সেখানে দুই-তৃতীয়াংশ ভোট পাওয়া যাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে; যদিও রিপাবলিকানদেরও অনেকেই ক্যাপিটল ভবনের ঘটনায় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে তার সমর্থকদের উস্কে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন।
এর আগে, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরেও ডেমোক্র্যাট নিয়ন্ত্রিত প্রতিনিধি পরিষদে ট্রাম্পকে অভিশংসিত করা হয়েছিল। সে সময় প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জো বাইডেনের ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ন করতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের ওপর চাপ সৃষ্টি করার অভিযোগ আনা হয়েছিল ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। কিন্তু প্রতিনিধি পরিষদ ট্রাম্পকে অভিশংসন করলেও রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত সিনেটে সে যাত্রায় রক্ষা পান ট্রাম্প।
এদিকে মার্কিন পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটল হিলে নজিরবিহীন ও সহিংস হামলার পর করা এক জরিপে দেখা যাচ্ছে, জরিপে অংশ নেওয়া অর্ধেকের বেশি মানুষ ২০ জানুয়ারি মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ক্ষমতাচ্যুত করার পক্ষে।

গত রোববার প্রকাশিত এবিসি নিউজ/ইপসোসের জরিপে দেখা যাচ্ছে, আগামী ২০ জানুয়ারি নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অভিষেকের আগেই ট্রাম্পকে ক্ষমতা থেকে সরানোর পক্ষে জরিপে অংশ নেওয়া ৫৬ শতাংশ আমেরিকান।
তবে ওই জরিপে যারা মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ক্ষমতা থেকে সরানোর পক্ষে, তাদের মধ্যে ৯৪ শতাংশই ডেমোক্র্যাট সমর্থক। বাকিদের মধ্যে ৫৮ শতাংশ মানুষ নিরপেক্ষ এবং ১৩ শতাংশ ট্রাম্পের দল রিপাবলিকানের সমর্থক।
জরিপে আরও দেখা যাচ্ছে, গত ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলের ওই হামলার জন্য রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দায়ী করছেন ৬৭ শতাংশ মানুষ। যেই হামলায় পুলিশ কর্মকর্তাসহ পাঁচ জনের মৃত্যু হয়।

হামলার সময় বাইডেনের জয়ে স্বীকৃতি দিতে কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশন চলছিল। তার আগে ‘সেভ আমেরিকা র্যালির’ বা ‘আমেরিকা বাঁচাও র্যালির’ মাধ্যমে সমর্থকদের উস্কে দেওয়ার অভিযোগে দ্বিতীয় দফায় অভিশংসনের মুখে রয়েছেন ট্রাম্প।
কেবল ডেমোক্র্যাটরাই নয়, নিজ দল রিপাবলিকানদের অনেকেই ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ক্যাপিটল ভবনে হামলা চালাতে সমর্থকদের উস্কে দেওয়ার অভিযোগ করছেন।
রিপাবলিকান সিনেটর প্যাট টুমি তো সরাসরি ট্রাম্পের পদত্যাগই দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন,‘আমার মনে হয় দেশের জন্য এখন সবচেয়ে ভাল হবে যদি ডোনাল্ড ট্রাম্প পদত্যাগ করে দ্রুত বিদায় নেন। আমি জানি তা হয়তো হবে না। কিন্তু এটা হলেই ভাল হতো।’
এর আগে ট্রাম্পের পদত্যাগ দাবি করেছিলেন আলাস্কার রিপাবলিকান সিনেটর লিসা মারকাউস্কি। নেব্রাস্কার রিপাবলিকান সিনেটর বেন স্যাসেও ট্রাম্পের অভিশংসন নিয়ে কথা বলেছেন।

এছাড়া ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ‘সবচেয়ে জঘন্য প্রেসিডেন্ট’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন রিপাবলিকান নেতা ও ক্যালিফোর্নিয়ার সাবেক গভর্নর আর্নল্ড সোয়ার্জিনেগার।
এদিকে ট্রম্পের অভিশংসন প্রক্রিয়ার উদ্যোগকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে উল্লেখ করে হোয়াইট হাউস বলেছে, এতে দেশের মধ্যে বিভাজন আরও বৃদ্ধি পাবে।
টিএম