সর্বোচ্চ দৈনিক সংক্রমণ, সামরিক সহায়তা চাইল সিডনি

করোনায় সর্বোচ্চ দৈনিক আক্রান্তের দিনে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সামরিক বাহিনীর সহযোগিতা চেয়েছে অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের রাজধানী শহর সিডনি কর্তৃপক্ষ। এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
বৃহস্পতিবার সিডনিতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২৩৯ জন রোগী। মহামারি শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত গত দেড় বছরে সিডনিতে এক দিনে এত বেশিসংখ্যক মানুষ করোনায় আক্রান্ত হননি বলে বলে জানিয়েছে নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্য প্রশাসন।
দৈনিক সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে গত জুনে সিডনিতে লকডাউন আরোপ করা হয়েছিল। কিন্তু কাঙ্খিত উন্নতি না হওয়ায় তার মেয়াদ আরও ৪ সপ্তাহ বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে লকডাউনের ৬ষ্ঠ সপ্তাহ পার করছে সিডনি। সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ২৮ আগস্ট লকডাউন শিথিল হবে সিডনিতে।
কিন্তু তারপরও কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না দৈনিক সংক্রমণ। নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ জানিয়েছে, করোনার অতি সংক্রামক ধরন ডেল্টার প্রভাবে সিডনিতে বাড়ছে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা।
নিউ সাউথ ওয়েলসের মুখ্যমন্ত্রী গ্ল্যাডিস বেরেজিক্লাইন সিডনিতে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘দৈনিক সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে যা যা করা সম্ভব, তার সবই করা হচ্ছে। ভালো কিছু হওয়ার আগে খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়, আমরা এখন সেই পরিস্থিতির মধ্যে আছি।’
নিউ সাউথ ওয়েলসের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সিডনির দক্ষিণপশ্চিম ও পশ্চিমাঞ্চলীয় এলাকাসমূহে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। ইতোমধ্যে এ বিষয়ক আটটি ‘হটস্পট’ চিহ্নিত করেছে নিউ সাউথ ওয়েলেসের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ।
সিডনি রাজ্য প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এসব ‘হটস্পট’ এলাকাসমূহের ২০ লাখেরও বেশি মানুষকে এখন থেকে লকডাউন শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত চার দেয়ালের বাইরে বাধ্যতামূলক মাস্ক পরতে হবে, থাকতে হবে বাড়ির ৫ কিলোমিটারের মধ্যে।
এদিকে, সম্প্রতি সিডনিতে বসবাসকারীদের লকডাউন বিরোধী মনোভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গত কয়েকদিনে শহরটিতে লকডাউন বিরোধী বিক্ষোভ মিছিল, ভাঙচুর এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ওপর হামলার ঘটনাও ঘটেছে।
তাই জনগণ যেন লকডাউন ও সরকারের যাবতীয় বিধিনিষেধ মেনে চলে তা তদারক করতে সামরিক সদস্যদের সহযোগিতা চেয়ে অস্ট্রেলিয়ার কেন্দ্রীয় সরকার বরাবর আবেদন করেছে নিউ সাউথ ওয়েলস পুলিশ বিভাগ।
বৃহস্পতিবার রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়ে নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের পুলিশ কমিশনার মাইক ফুলার বলেন, ‘পার্শ্ববর্তী রাজ্য ভিক্টোরিয়াতে যখন করোনা সংক্রমণ বাড়ছিল, তখনও লকডাউনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছিল লোকজন, পরে সামরিক বাহিনী টহল দেওয়া শুরু করলে তারা লকডাউনসহ যাবতীয় বিধিনিষেধ মেনে চলা শুরু করে।’
‘আমরা আশা করছি, সিডনিতেও যদি সেনা সদস্যরা পুলিশ সদস্যদের সহযোগিতা করেন, তাহলে জনগণ লকডাউন মেনে চলবে।’
এদিকে টিকা নিয়েও জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে সিডনিতে। শহরটির অধিকাংশ জনগণ ফাইজারের টিকা নিতে চান, কিন্তু সিডনিতে বর্তমানে এই টিকার ডোজের সংকট চলায় গণটিকাদান কর্মসূচী অনেক ধীরগতিতে চলছে।
সিডনির স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে এ সম্পর্কে বলেন, ‘আমাদের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার ডোজ আছে। জনগণকে তা নেওয়ার জন্য আহ্বানও জানানো হচ্ছে। কিন্তু তারা নিচ্ছে না।’
‘আগামী অক্টোবরে ফাইজারের টিকার চালান আসার কথা আছে। ওই চালান এলে টিকাদান কর্মসূচি আরও গতিশীল হবে।’
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, সিডনির মাত্র ১৭ শতাংশ মানুষ করোনা টিকার দুই ডোজ সম্পূর্ণ করেছেন।
সূত্র : রয়টার্স
এসএমডব্লিউ