ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ চায় ইইউ

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মতামতের বাইরে গিয়ে উচ্চ মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার কাজ বন্ধ করে ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত পরমাণু সমঝোতাকে রক্ষা করতে ইরানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭টি দেশ।
তারা বলছে, কূটনৈতিক প্রচেষ্টাকে সুযোগ দিতে ইরানের উচিত ২০ শতাংশ হারে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার বিষয়টি আবারও বিবেচনা করা। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানায় ইইউভুক্ত ২৭টি দেশের সরকার।
বিবৃতিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত ২৭টি দেশের সরকার বলেছে, ‘ইরান ফোর্দো পরমাণু কেন্দ্রে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার পদক্ষেপ নিয়েছে এবং এটি ২০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করার কথা বলেছে। এটি খুবই গুরুতর বিষয় এবং এতে উদ্বেগ বাড়ছে।’
এর আগে সোমবার আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি জানিয়েছিলেন, ইরান অতি দ্রুত ২০ শতাংশ হারে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, পরমাণু সমঝোতাকে রক্ষা করার জন্য হাতে আর মাত্র কয়েক সপ্তাহ সময় আছে।
তার ওই বক্তব্যের একদিন পর তেহরানের প্রতি এই আহ্বান জানাল ইইউ। বিবৃতেতে উদ্বেগ প্রকাশ করে দাবি করা হয়েছে, ইরান ২০ মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করে পরমাণু অস্ত্রের দিকে ‘আরেক ধাপ’ এগিয়ে গেছে।
সংস্থাটির দাবি,‘এই গুরুতর পরিস্থিতিতে ইরানের নেওয়া পদক্ষেপ কূটনৈতিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করবে। আমরা চাই, ইরান যেন এ ক্ষেত্রে আর অগ্রসর না হয় এবং অবিলম্বে আগের অবস্থায় ফিরে যায়।’
এদিকে ২০ শতাংশ হারে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধি শুরু করায় ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত পরমাণু সমঝোতা চুক্তি সংকটে পড়বে বলে জানিয়েছেন ইইউ’র পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেল। তিনি বলেন, ইরানের ফোর্দো পরমাণু কেন্দ্রে মাটির নিচে ২০ শতাংশ হারে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের কাজ খুবই মারাত্মক ও উদ্বেগজনক বিষয়।

জোসেফ বোরেল বলেন, পরমাণু চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে আনার কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মধ্যে ইরানের এমন সিদ্ধান্ত ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত ওই চুক্তিকে হুমকির মুখে ফেলবে।
গত সপ্তাহে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি ২০ শতাংশে উন্নীত করার ঘোষণা দেয় ইরান।
পশ্চিমা বিশ্বের প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও ইরানের পার্বত্য অঞ্চলের ভূগর্ভস্থ স্থাপনা এবং পারমাণবিক প্রকল্পের গবেষণাগার ফোর্দো এজেন্সিতে গত কয়েক বছর ধরে প্রকল্প জারি রেখেছে দেশটির ক্ষমতাসীন সরকার।
পারমাণবিক প্রকল্প থেকে নিবৃত্ত করতে একাধিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে ইরানের বিরুদ্ধে। ২০১৫ সালে পারমাণবিক প্রকল্প বন্ধের বিষয়ে একটি আন্তর্জাতিক চুক্তিতেও স্বাক্ষর করেছিল দেশটি। তবে পাশ্চাত্যের অধিকাংশ বিশ্বনেতার অভিযোগ, নিষেধাজ্ঞা এবং চুক্তি অমান্য করেই ফার্ডো এজেন্সিতে প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিচ্ছে ইরান।

পারমাণবিক অস্ত্র প্রস্তুতের জন্য ব্যবহৃত ইউরেনিয়ামের বিশুদ্ধতার মাত্রা ৯০ শতাংশ হতে হয়। ইরান যে মাত্রার বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম সংগ্রহ করেছে, তা নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টরে ব্যবহারের উপযোগী।
তবে ২০ শতাংশ বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম ব্যবহার করে পারমাণবিক বোমা প্রস্তুত করা না গেলেও বিধ্বংসী মারণাস্ত্রও প্রস্তুত করা সম্ভব।
২০১৫ সালে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ক্ষমতায় থাকাকালে যুক্তরাষ্ট্রসহ ছয় পরাশক্তির সঙ্গে করা চুক্তি অনুযায়ী ইরানের এই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাত্রা ৪ শতাংশের নিচে রাখার কথা ছিল।
অবশ্য বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রকে এই চুক্তি থেকে সরিয়ে এনে পুনরায় ইরানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দেন। তারপর থেকেই ইরান এই চুক্তি লঙ্ঘন করতে শুরু করে।
তবে ওই চুক্তির অন্যান্য অংশীদার যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া, চীন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের আশা নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতায় আসলে যুক্তরাষ্ট্র ফের চুক্তিতে ফিরবে।
টিএম