বিশ্বে করোনায় মৃত্যু ২০ লাখের পথে

বিশ্বে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৯ কোটি ২০ লাখ ছাড়িয়েছে। অন্যদিকে, মৃত মানুষের সংখ্যা এখন ২০ লাখের পথে।
মহামারির শুরু থেকে বিশ্বের সব দেশ ও অঞ্চলের করোনা সংক্রমণের হালনাগাদ তথ্য সংরক্ষণ করছে ওয়ার্ল্ডোমিটারস নামের একটি ওয়েবসাইট। তাদের বুধবার সকাল সাড়ে ৮টার তথ্য বলছে, বিশ্বে এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৯ লাখ ৭০ হাজার ৩০ জন। ১১ জানুয়ারি একই সময়ের দিকে এই সংখ্যা ছিল ১৯ লাখ ৪৩ হাজার ৯০ জন।
ওয়ার্ল্ডোমিটারের সর্বশেষ তথ্য বলছে, এখন পর্যন্ত বিশ্বে করোনা থেকে সেরে ওঠা মানুষের সংখ্যা ৬ কোটি ৫৮ লাখ ১৮ হাজার ৬২৯ জন।
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে মারা গেছেন মোট ৩ লাখ ৮৯ হাজার ৫৯৯ জন। ১১ জানুয়ারির তথ্য অনুযায়ী এ সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৮৩ হাজার ২৭৫ জন।
এরপরেই বেশি মৃত্যু হয়েছে ব্রাজিলে, ২ লাখ ৪ হাজার ৭২৬; ৮ জানুয়ারি যা ছিল ২ লাখ ৩ হাজার ১৪০। মৃত্যুর তালিকায় তৃতীয় দেশ ভারত। সেখানে মৃত্যু হয়েছে ১ লাখ ৫১ হাজার ৫৬৪ জনের।
তালিকায় রাশিয়ার অবস্থান চতুর্থ। যুক্তরাজ্য পঞ্চম। ফ্রান্স ষষ্ঠ। তুরস্ক সপ্তম। ইতালি অষ্টম। স্পেন নবম। জার্মানি দশম। তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ২৭তম।
আজ বুধবার সকাল পর্যন্ত সারা বিশ্বে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন অন্তত ৯ কোটি ২০ লাখ ৬ হাজার ১৬৫ জন। ১১ জানুয়ারি এ সংখ্যা ছিল ৯ কোটি ৬ লাখ ৮৭ হাজার ৯৮৭ জন। তবে আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা এ হিসাবের চেয়ে বেশি হবে।
মৃত্যুর মতো আক্রান্তের তালিকারও শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে এ পর্যন্ত মোট আক্রান্ত হয়েছেন ২ কোটি ৩৩ লাখ ৬৮ হাজার ২২৫ জনের বেশি মানুষ। মৃত্যুর হিসাবে ব্রাজিলের অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রের পরই হলেও ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা ব্রাজিলের চেয়ে বেশি।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এরপর এক বছরের বেশি সময় পর প্রাণঘাতী এ ভাইরাসটি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ার পর এখন তার প্রতিষেধক টিকা বা ভ্যাকসিন জোগাড়ের জন্য সবাই মরিয়া। সংক্রামক রোগের টিকা উদ্ভাবন, পরীক্ষা ও উৎপাদনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সাধারণত কয়েক বছর লেগে যায়। তারপরেও সবসময় সেই টিকা যে সফল হয় তাও নয়। এ পর্যন্ত মাত্র একটি সংক্রামক রোগের টিকা সফল হয়েছে। সেটি হল গুটিবসন্ত, যেটি সম্পূর্ণ নির্মূল করা গেছে। কিন্তু তাতেও সময় লেগেছে ২০০ বছর।
বাকিগুলো- যেমন পোলিও, টিটেনাস, হাম, মাম্পস এবং যক্ষ্মা- এখনও মানুষের সঙ্গ ছাড়েনি। যদিও এসব রোগের টিকা আছে এবং টিকার কল্যাণে অন্তত এসব রোগের মহামারি ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে। তবে করোনা ভাইরাসের ক্ষেত্রে মাত্র এক বছরের মাথায়ই হাতে টিকা পাচ্ছে মানুষ।

যে করোনা ভাইরাস বিশ্ব ব্যাপী বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে সেই কোভিড-১৯এর সঠিক উৎস এখনও নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি। তবে বিজ্ঞানীদের একটা ব্যাপক অংশ এ বিষয়ে একমত হয়েছেন যে, এই ভাইরাস কোন প্রাণী প্রজাতি থেকে মানুষের শরীরে প্রবেশ করেছে এবং সেই প্রাণী খুব সম্ভবত বাদুড়। তবে এর মানে এই নয় যে এর জন্য বাদুড়রা দায়ী। বাদুড় বিশেষজ্ঞ এবং বাদুড় সংরক্ষণকে জরুরি বলে মনে করেন যেসব বিশেষজ্ঞ তারা বলছেন এর জন্য দায়ী মানুষের আচরণ। বাদুড় মানুষকে এই ভাইরাস দেয়নি, তারা বলছেন মানুষ যেভাবে বন্য প্রাণীর স্বাভাবিক জীবন যাপনে হস্তক্ষেপ করছে সেটাই এই ভাইরাস মানুষের শরীরে ঢোকার মূলে।
বাংলাদেশ পরিস্থিতি
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মঙ্গলবার সর্বশেষ যে তথ্য দিয়েছে তাতে দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও ১৬ জনের মৃত্যুর কথা জানানো হয়েছে। এ নিয়ে দেশে ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৭ হাজার ৮১৯ জনে। নতুন করে ৭১৮ জনের শরীরে প্রাণঘাতী এ ভাইরাস শনাক্ত হওয়ার কথাও জানানো হয়েছে। এর মাধ্যমে আক্রান্তের সংখ্যা ৫ লাখ ২৪ হাজার ২০ জনে বেড়ে দাঁড়িয়েছে।
আগের দিন ২২ জনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছিল অধিদপ্তর।
৪৩ দেশে প্রায় ৩ কোটি মানুষ ভ্যাকসিন নিয়েছেন
লাখ লাখ মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়া করোনাভাইরাস মহামারির অবসানে বিশ্বজুড়ে ইতিহাসের সর্ববৃহৎ টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে। এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এখন পর্যন্ত বিশ্বের ৪৩টি দেশের মানুশের শরীরে ২ কোটি ৯০ লাখ ডোজ করোনা টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে। বিশ্বের শত কোটি মানুষের কাছে এই ভ্যাকসিন পৌঁছে দেয়াই আধুনিক বিশ্বের অন্যতম চ্যালেঞ্জ হিসেবে হাজির হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বে করোনাভাইরাসের ২৩০টিরও বেশি ভ্যাকসিন পরীক্ষার বিভিন্ন ধাপে রয়েছে। শরীরে অ্যান্টিবডি এবং ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইকারী কোষকে উসকে দিতে বিভিন্ন ধরনের কৌশল অবলম্বন করে এসব ভ্যাকসিন তৈরি করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছয়টি ভ্যাকসিন অনুমোদন পেয়েছে এবং আরও কয়েকটি অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। কিছু দেশে ভ্যাকসিনের প্রয়োগও ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।
করোনাপ্রতিরোধী নাকের স্প্রে আবিষ্কারের দাবি বাংলােদেশি গবেষকদের
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সক্ষম নাক ও মুখের স্প্রে তৈরির দাবি করেছেন বাংলাদেশ রেফারেন্স ইনস্টিটিউট ফর কেমিকেল মেজারমেন্টসের (বিআরআইসিএম) একদল গবেষক। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘বঙ্গোসেইফ ওরো নেইজল স্প্রে।’ দেশে ২০০ রোগীর ওপর ইতোমধ্যে এই স্প্রে পরীক্ষা করা হয়েছে বলেও দাবি তাদের।
তাদের দাবি, এই ওষুধ নাক ও মুখে স্প্রে হিসেবে ব্যবহার করতে হয়। আর এ স্প্রে নাসারন্ধ্র, মুখ গহ্বর এবং শ্বাস ও খাদ্যনালীর মিলনস্থলে অবস্থান করা করোনাভাইরাস ধ্বংস করতে সক্ষম বঙ্গোসেইফ কোভিড-১৯ রোগীদের ‘ভাইরাল লোড কমিয়ে মৃত্যু ঝুঁকি হ্রাস’ করার পাশাপাশি ‘কমিউনিটি ট্রান্সমিশন নিয়ন্ত্রণে’ ভূমিকা রাখতে পারে বলেও দাবি বিআরআইসিেমের গবেষকদের।
বলা হচ্ছে এই স্প্রেতে দুটো সুবিধা হবে। এক, কেউ যদি সংক্রমিত ব্যক্তির কাছাকাছি যান এবং সংক্রমণ ঘটে, তাহলে এই স্প্রে ভাইরাস ধ্বংস করবে। আক্রান্ত ব্যক্তি যদি ব্যবহার করেন, তার ভাইরাল লোড (ভাইরাসের পরিমাণ) কমে যাবে।
হার্ড ইমিউনিটি এখনও অনেক দূরে: ডব্লিউএইচও
মহামারি আকারে করোনা ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়ার শুরু থেকেই আলোচনায় ছিল বেশিরভাগ মানুষের দেহে এই ভাইরাস প্রতিরোধী ক্ষমতা গড়ে ওঠা বা হার্ড ইমিউনিটির প্রসঙ্গটি। বিশ্বে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯ কোটি ১৪ লাখ ৭৮ হাজার ৭৬২ জন প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে হার্ড ইউমিটির পথে কতটা এগোলো বিশ্ব? বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ডব্লিউএইচও বলছে, ২০২১ সালের মধ্যে হার্ড ইমিউনিটি অর্জন অসম্ভব।
ডব্লিউএইচওর শীর্ষ বিজ্ঞানী ড. সৌম্য স্বামীনাথন বলছেন, ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, কানাডা, জার্মানি, ইসরায়েল, নেদারল্যান্ডসসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হলেও, এই রোগের সংক্রমণ রোধ করতে আরও কতদিন সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে- তা এখনই বলা যাচ্ছে না। সংক্রমণ ঠেকাতে যদিও বিভিন্ন দেশে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে, কিন্তু তার মানে এই নয় যে এর মধ্যে দিয়ে চলতি বছরই ব্যাপক সংখ্যক মানুষের মধ্যে এ রোগের প্রতিরোধী ক্ষমতা বা হার্ড ইমিউনিটি গড়ে উঠবে। কিছু এলাকায় বা দেশের মানুষদের মধ্যে প্রতিরোধী ক্ষমতা শক্তিশালী হয়ে উঠলেও যদি বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটের প্রসঙ্গে বলতে হয়, সেক্ষেত্রে আমরা বলব হার্ড ইমিউনিটি অর্জন এখনো অনেক দূরের ব্যাপার।
উন্নয়নশীল দেশগুলোর জনগণের জন্য টিকা নিশ্চিত করতে ‘কোভ্যাক্স’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা; কিন্তু পর্যাপ্ত সংখ্যক টিকা, অর্থ ও আনুষাঙ্গিক অন্যান্য সহযোগিতার অভাবে এই প্রকল্প কতখানি সফল হবে, তা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ৮টি গরিলা
যুক্তরাষ্ট্রের স্যান ডিয়েগো সাফারি পার্কে অন্তত ৮টি গরিলার দেহে কোভিড-১৯ সংক্রমণ ধরা পড়েছে। বন্দী অবস্থায় থাকা এপ বা বানর-জাতীয় প্রাণীর মধ্যে এই প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাস সংক্রমণের কথা জানা গেল। তবে এর আগে গরিলা ছাড়া বিড়াল ও কুকুরসহ অন্য কিছু প্রাণীর মধ্যেও করোনাভাইরাস সংক্রমণ হতে দেখা গেছে।
পার্ক কর্তৃপক্ষ বলছে, কয়েকটি গরিলার ক্ষেত্রে কাশিসহ কিছু উপসর্গ দেখা গেছে - তবে তাদের কেউই গুরুতর অসুস্থ হয়নি। মার্কিন দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে, মানুষ ও এপ বা বানরজাতীয় প্রাণীর মধ্যে বহু মিল আছে এবং সেকারণে করোনাভাইরাস গরিলার মত বিপন্ন প্রজাতির এপদের জন হুমকি হয়ে উঠতে পারে বলে এর আগেই বিজ্ঞানীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
এনএফ