চীনা ভ্যাকসিন দিয়ে তুরস্কে টিকাদান শুরু

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে চীনা প্রতিষ্ঠান সিনোভ্যাক’র উদ্ভাবিত ভ্যাকসিনের মাধ্যমে টিকাদান কার্যক্রম শুরু করেছে তুরস্ক। বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) থেকে দেশটির ইস্তাম্বুল শহরে এ টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয় বলে জানিয়েছে বার্তাসংস্থা সিনহুয়া।
এদিকে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া এই টিকাদান কর্মসূচির প্রথম ধাপে দেশটির ১০ লাখেরও বেশি স্বাস্থ্যকর্মীকে টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে তুরস্কের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এরপর বৃদ্ধশ্রমে বসবাসকারী বয়স্ক নাগরিকদের টিকা দেওয়া হবে।
ফেরিহা ওজেড ইমারজেন্সি হাসপাতালের প্রধান চিকিৎসক নুরেত্তিন ইয়ায়িত জানান, তুরস্কের বৃহত্তম শহর ইস্তাম্বুলের স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের টিকাদান দুই দিনের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য ২০২০ সালে নির্মিত বিশেষায়িত এ হাসপাতালে দ্রুততম উপায়ে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য টিকা দেওয়ার ৩০ কক্ষ বরাদ্দ করা হয়েছে।
হাসপাতালের সব কক্ষে একযোগে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর ডা. নুরেত্তিন বার্তাসংস্থা সিনহুয়াকে বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন সর্বোচ্চ এক হাজার ৮০০ জনকে টিকা দিতে পারি। তবে প্রয়োজনে এ সংখ্যা আরও বাড়ানো যেতে পারে।’
টিকা নেওয়ার জন্য প্রথম দিনে হাসপাতালে এক হাজার অ্যপয়েন্টমেন্ট দেওয়া হয় বলেও জানান তিনি।
একই হাসপাতালে অ্যানেস্থেশিস্ট হিসেবে কাজ করছেন হেল এরিসির। অনলাইনে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়ার পর বৃহস্পতিবারই টিকা নেন তিনি।
সবাই টিকা পাবেন এমন প্রত্যাশা করে বার্তাসংস্থা সিনহুয়াকে তিনি বলেন, ‘আমি সব সময় বিশ্বাস করি ভ্যাকসিনের ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে এবং আমি নিশ্চিত, টিকাদান কর্মসূচিতে করোনা মহামারি শেষ করার শক্তি রয়েছে।’
টিকাদান কর্মসূচির সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি অনলাইন ও মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে দেশটির ৮১ প্রদেশে পরিচালিত হচ্ছে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে করোনা টিকার দীর্ঘমেয়াদি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলোও শনাক্ত করা সম্ভব।
এর আগে নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে বুধবার সিনোভ্যাকের উৎপাদিত কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দেয় তুরস্কের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

অনুমোদন পাওয়ার পর টিকার প্রথম ডোজ নেন দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী ফাহেরেটিন কোচা। অনুষ্ঠানটি টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। এসময় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর করোনাভাইরাস সংক্রান্ত বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টারাও টিকা নেন।
এসময় জনগণকে টিকা গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে কোচা বলেন, ‘আমাদের স্বাভাবিক, সাধারণ জীবনযাত্রায় ফিরে যেতে টিকাদান কার্যক্রমটি প্রয়োজন।’
এর আগে ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীন থেকে ৩০ লাখ ডোজ টিকার প্রথম চালান পায় তুরস্ক।
সিনোভ্যাক হলো বেইজিংভিত্তিক একটি জৈবপ্রযুক্তি কোম্পানি। তাদের তৈরি টিকার নাম করোনাভ্যাক। তুরস্ক ছাড়াও ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ আরও অনেক দেশ ইতোমধ্যে এই টিকা কেনার জন্য চুক্তি করে রেখেছে।
সিনোভ্যাকের তৈরি এই টিকার কার্যকারিতা একেক দেশের ট্রায়ালে একেক রকম দেখা যাচ্ছে। যেমন ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শেষে গত মাসে তুরস্কের গবেষকরা জানান, এই টিকার কার্যকারিতার হার ৯১ দশমিক ২৫ শতাংশ।
গত বুধবার গণহারে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হওয়া দেশ ইন্দোনেশিয়া জানিয়েছে, সিনোভ্যাকের তৈরি করোনা টিকা ৬৫ দশমিক ৩ শতাংশ কার্যকর। তবে দুই দেশই শেষ ধাপের ট্রায়ালের অন্তর্বর্তী ফলাফল বিশ্লেষণ শেষে এই কার্যকারিতার কথা জানিয়েছে।
এছাড়া ব্রাজিলে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালানোর পর সম্প্রতি দেশটির গবেষকদের প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, চীনা প্রতিষ্ঠান সিনোভ্যাকের উদ্ভাবিত করোনা টিকা ৫০ দশমিক ৪ শতাংশ কার্যকর।

এতে করে সমালোচনা আর উদ্বেগ আরও বেড়েছে যে, পশ্চিমা দেশগুলোতে যেভাবে স্বচ্ছতার সঙ্গে টিকার ট্রায়াল ও ট্রায়ালের পর পাওয়া ফলাফল জানানো হচ্ছে, সেই তুলনায় চীনের তৈরি টিকাগুলোর ক্ষেত্রে এ স্বচ্ছতা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
উল্লেখ্য, টিকা অনুমোদনের ক্ষেত্রে কমপক্ষে ৫০ শতাংশের বেশি কার্যকারিতার প্রয়োজন পড়ে।
টিএম