সংলাপ শেষেও মেলেনি ব্রেক্সিট অচলাবস্থার সমাধান

আলোচনার শেষদিন রাত গড়িয়ে গেলেও ব্রেক্সিট পরবর্তী বাণিজ্যবিষয়ক সংলাপ থেকে উল্লেখযোগ্য কোনো সাফল্য আসেনি। কার্যকর একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে অপারগতা প্রকাশ করেছে উভয়পক্ষই।
ব্রিটিশ সরকারের সূত্রের বরাতে দেশটির সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম বিবিসি এক অনলাইন প্রতিবেদনে জানিয়েছে, সংলাপে যে শর্তগুলো ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) আরোপ করেছে তা যুক্তরাজ্যের জন্য ‘অগ্রহণযোগ্য’।
উভয়পক্ষের মধ্যে সম্পর্ক নির্ধারণে চুক্তির জন্য শুরু হওয়া সংলাপের শেষ দিন ছিল রোববার।
আগামী বছরের শুরু অর্থাৎ ১ জানুয়ারি যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন আনুষ্ঠানিকভাবে ত্যাগ করলে উভয়পক্ষের মধ্যে সম্পর্ক নির্ধারণে চুক্তির জন্য শুরু হওয়া সংলাপের শেষ দিন ছিল রোববার।
সপ্তাহের শুরুতে পর্যবেক্ষকদের প্রত্যাশা ছিল এ সময়সীমার ভেতরেই মধ্যে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এবং ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেন এর মধ্যে ঐকমত্য পৌঁছানো সম্ভবপর হবে।
প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এই প্রক্রিয়ায় (ব্রেক্সিট) কোনো বিষয়ে একবিন্দু ছাড় দিতে প্রস্তুত নন। যুক্তরাজ্যের মৌলিক অবস্থান ও সার্বভৌমত্বের জন্য সম্মানজনক হয়— সে বিষয়ে তার অবস্থান স্পষ্ট।
সূত্র বলছে, ‘প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এই প্রক্রিয়ায় (ব্রেক্সিট) কোনো বিষয়ে একবিন্দু ছাড় দিতে প্রস্তুত নন। আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে (১ জানুয়ারির মধ্যে) যে চুক্তিই হোক না কেন তা যেন যুক্তরাজ্যের মৌলিক অবস্থান ও সার্বভৌমত্বের জন্য সম্মানজনক হয়— সে বিষয়ে তার অবস্থান স্পষ্ট’।
সংলাপে আলোচনার মূল বিষয়— ভবিষ্যতে অর্থাৎ ব্রেক্সিট পরবর্তী সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থনৈতিক নীতির সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সহাবস্থান প্রসঙ্গ এবং বাণিজ্য ও জলসীমায় মাছ ধরার অধিকারসহ বেশ কিছু প্রসঙ্গ।
ইইউভূক্ত দেশগুলোর বাজারে যুক্তরাজ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকারকে অন্যায় সুবিধা হিসেবে বিবেচনা করে তা রুখতে বদ্ধপরিকর ইউরোপীয় ইউনিয়ন
বিবিসি তাদের প্রতিবেদনে লিখেছে, ইইউভূক্ত দেশগুলোর বাজারে যুক্তরাজ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকারকে অন্যায় সুবিধা হিসেবে বিবেচনা করে তা রুখতে বদ্ধপরিকর ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এ ছাড়া বাজারে উৎপাদিত পণ্য, কর্মসংস্থান এবং বাণিজ্য ভর্তুকির বিষয়ে যুক্তরাজ্যের নিজস্ব মান নির্ধারণেও আপত্তি রয়েছে তাদের।
উভয়পক্ষ একমত হতে না পারার আর একটি কারণ মাছ ধরার অধিকার। যুক্তরাজ্যের জলসীমায় ইইউভূক্ত দেশগুলোর নৌযানের প্রবেশাধিকার না মিললে যুক্তরাজ্যের মৎসজীবীরা তাদের পণ্য বিক্রি করতে ইইউ এর বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে যে বিশেষ সুবিধা ভোগ করেন তা বাতিল করা হবে বলে জানিয়ে দিয়েছে ইইউ।
জবাবে যুক্তরাজ্য বলেছে, জলসীমায় প্রবেশাধিকার বা বাণিজ্যনীতির বিষয়ে যুক্তরাজ্যের যে অবস্থান তা দেশটির সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং সমুন্নত রাখার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
শনিবার যুক্তরাজ্য সরকার নিশ্চিত করেছে, কোনো চুক্তি হয়নি এবং যুক্তরাজ্যের জলসীমায় ‘অবৈধ মৎস আহরণ’ বন্ধে দেশের নৌবাহিনী (রয়্যাল নেভি) প্রস্তুতি নিচ্ছে।
ব্রিটেনের কৃষকদের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক অংশীদার ইইউ। ব্রেক্সিটের পর অন্তর্বর্তীকালীন সময়সীমা ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে যদি ইইউ এর সঙ্গে কোনো চুক্তি সম্পাদন সম্ভব না হয়, সেক্ষেত্রে এক রাতের মধ্যেই ইউরোপের বাজারে প্রবেশাধিকার হারাবেন তারা।
ব্রেক্সিট পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হবে, সেগুলোর রূপরেখা ইতোমধ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে উল্লেখ করে যুক্তরাজ্য সরকারের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘দেশের সব সীমান্তে আমাদের আমাদের উৎপাদিত পণ্য এবং মাছ পৌঁছে যাবে এবং শিগগিরই সার্বভৌম হতে যাওয়া আমাদের জলসীমায় অবৈধ মৎস আহরণ বন্ধে রয়েল নেভির নৌযানগুলো একত্রিত করার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছি আমরা’।
ভবিষ্যতে যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যকার সম্পর্ককে একটি স্থায়ীরূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে ইউরোপীয় আদালত (ইউরোপিয়ান কোর্ট অব জাস্টিস) এর ভূমিকা পালনের কোনো সুযোগ থাকবে কিনা এ বিষয়েও কোনো মিমাংসা হয়নি চলমান ওই সংলাপে।
এ প্রসঙ্গে বিবিসির ইউরোপ প্রতিনিধি কেভিন কোনোলি বলেন, ‘এখনো এটা স্পষ্ট নয় যে সংলাপের কতখানি প্রকাশ্যে এসেছে। এ বিবেচনায় বলা যায়, রোববারের সময়সীমা শেষ হয়ে গেলেও রাজনীতিবিদদের জন্য আলোচনার সুযোগ থেকে যাবে।’
এদিকে যুক্তরাজ্যের কৃষকদের সংগঠন ন্যাশনাল ফার্মারস ইউনিয়ন এই মর্মে সতর্কবার্তা জানিয়েছে যে ইউ এর সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করতে ব্যর্থ হলে দেশের কৃষি ব্যবস্থায় বড় ধরণের বিপর্যয় নেমে আসবে।
ব্রিটেনের কৃষকদের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক অংশীদার ইইউ। ব্রেক্সিটের পর অন্তর্বর্তীকালীন সময়সীমা ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে যদি ইইউ এর সঙ্গে কোনো চুক্তি সম্পাদন সম্ভব না হয়, সেক্ষেত্রে এক রাতের মধ্যেই ইউরোপের বাজারে প্রবেশাধিকার হারাবেন তারা।
অন্যদিকে, বিরোধী দল লেবার পার্টি এই মর্মে সতর্ক করেছে যে ব্রেক্সিটের পর সরকারের রাজস্ব এবং কর সংস্থাগুলো সবেমাত্র কর ব্যবস্থাপনার কাজ শুরু করেছে। যদি যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন সরকার ইইউ এর সঙ্গে একটি কার্যকর চুক্তি করতে সক্ষম হয়, তাহলেও কর ও রাজস্বের হার পরিবর্তন নিয়ে ব্যাপক হারে কাজ করার অবকাশ থাকছে।
এসএমডব্লিউ/এএস