যোদ্ধাদের তীব্র তিরস্কার, হুঁশিয়ারি আফগান প্রতিরক্ষামন্ত্রীর

গত ১৫ আগস্ট কাবুল দখলের পর থেকে রাজধানীসহ আফগানিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলে ক্ষমতাসীন তালেবান বাহিনীর যোদ্ধারা সহিংসতাসহ নানা অসদাচরণ করছেন বলে অভিযোগ আসছে। এসব অভিযোগের জেরে তালেবান যোদ্ধাদের তীব্র তিরস্কার করেছেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোহাম্মদ ইয়াকুব।
যেসব যোদ্ধা অসদাচরণের সঙ্গে যুক্ত, তাদের অবিলম্বে বাহিনী থেকে করে দেওয়া না হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তিনি।
শুক্রবার এক অডিও বার্তায় মোহাম্মদ ইয়াকুব বলেন, ‘তালেবান বাহিনীতে কিছু দুবৃর্ত্ত ও সাবেক সরকারের কুখ্যাত সেনাবাহিনীর কিছু সদস্য যোগ দিয়েছে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় তারা সহিংস কর্মকাণ্ড ও ক্ষমতার অপব্যবহার করছে বলে জানা গেছে।’
অভিযুক্ত ওইসব যোদ্ধাকে অবিলম্বে চিহ্নিত ও বাহিনী থেকে বের করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে তালেবান কমান্ডারদের উদ্দেশে মোহাম্মদ ইয়াকুব বলেন, ‘তালেবান নেতাদের অনুমতির তোয়াক্কা না করে তারা এসব সহিংসতা ও ক্ষতার যথেচ্ছ অপব্যবহার করে যাচ্ছে। বাহিনী থেকে অবিলম্বে তাদের বের করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। অন্যথায় তোমাদের (কমান্ডার) বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
দেশের সব প্রদেশ দখলের পর গত ১৫ আগস্ট কাবুল দখল করেছে তালেবান বাহিনী। একটি নতুন সরকার ও মন্ত্রিসভাও গঠন করেছে তারা।
কিন্তু ক্ষমতা দখলের পর থেকে বাহিনীর যোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণে সময়ে সময়ে সমস্যার মুখে পড়ছেন তালেবনা নেতারা-প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বার্তায় এই ব্যাপারটি আরেকবার স্পষ্ট হলো। এর আগে গত আগস্টে তালেবান মুখপাত্র সোহেল শাহিন যোদ্ধাদের অসদাচরণের বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন।
কাবুলের কিছু বাসিন্দা সম্প্রতি অভিযোগ করেছেন, শহরের রাস্তায় রাস্তায় টহলে থাকা তালেবান যোদ্ধারা তাদের সঙ্গে নিষ্ঠুর আচরণ করছে।
তালেবান নেতারা ক্ষমা ঘোষণা করার পরও সাবেক আফগান সরকারের সদস্য, সেনা ও নাগরিক সমাজের কর্মীদের ওপর তালেবান যোদ্ধাদের প্রতিশোধ হামলার খবর পাওয়া গেছে।
তালেবান সরকারের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়াকুব শুক্রবারের অডিওবার্তায় জানিয়েছেন, অবৈধভাবে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার বেশকিছু বিচ্ছিন্ন খবর পাওয়া গেছে।
এই ধরনের কর্মকাণ্ড সহ্য করা হবে না বলে আবারও সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেন, “আপনারা সবাই জানেন, আফগানিস্তানের নাগরিকদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়েছে। কাজেই, আক্রোশ মেটাতে কোনও মুজাহিদের কারও ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার অধিকার নেই।”
শুক্রবার ইয়াকুবের বার্তাটি তালেবানের টুইটার অ্যাকাউন্টে প্রকাশ করা হয় এবং এটি স্যোশাল মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে শেয়ার হয়েছে।
মোহাম্মদ ইয়াকুব তার বার্তায় কোনো নির্দিষ্ট ঘটনার উল্লেখ করেননি, তবে তালেবান গোষ্ঠীতে রাজনৈতিক যেসব বাইরের বিভিন্ন দেশের সরকারের সঙ্গে আপোস করার চেষ্টা চালাচ্ছেন তাদের সঙ্গে রণাঙ্গনের কট্টরপন্থি তালেবান যোদ্ধা ও কমান্ডারদের বনিবনা না হওয়ার বেশ কিছু খবর পাওয়া যাচ্ছে।
এদিকে, দেশের বিভিন্ন এলাকায় নিপীড়ণ ও সহিংসতা চালানোর পাশাপাশি তালেবানের অনেক সদস্যকে আফগানিস্তানের নানা সরকারি কার্যালয়ে অযথা ঘোরাফেরা করতে দেখা যাচ্ছে বলে অডিও বার্তায় জানান ইয়াকুব। সেসব কার্যালয়ে তাদের অনেককে সেলফি তুলতেও দেখা গেছে।
এ ধরনের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেছেন তালেবানের এই নেতা। অডিও বার্তায় এ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘কোনো কারণ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর মন্ত্রণালয়ের কার্যালয়ের সামনে ঘোরাঘুরি করা, সেলফি তোলা- এসব খুবই আপত্তিকর আচরণ। এ ধরনের ঘোরাঘুরি, ছবি তোলা বা ভিডিও করা ইহকাল কিংবা পরকাল-কোথাও কাজে আসবে না।’
সূত্র : রয়টার্স
এসএমডব্লিউ