আফগান শান্তি আলোচনা এগিয়ে নিতে বাইডেনকে পাকিস্তানের আহ্বান

চলমান আফগান শান্তি আলোচনা এগিয়ে নিতে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কোরেশি।
তিনি বলেন, আফগান শান্তি প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন সরকার আরও বেশি সম্পৃক্ত হবে বলে পাকিস্তান আশা করে। একইসঙ্গে শান্তি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার অব্যাহত রাখতেও জো বাইডেনের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারি) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে একথা বলেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
শান্তি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে কাতারের রাজধানী দোহায় আফগান সরকার ও তালেবান বিদ্রোহীরা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত এই আলোচনা অগ্রগতি খুব কমই দেখা গেছে।

আফগানিস্তানে গত প্রায় ২০ বছর ধরে তালেবান বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে আসছে মার্কিন বাহিনী। তালেবানদের ক্ষমতা থেকে সরানো গেলেও দেশটির অনেক অংশই এখনও এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হাতে রয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে আফগানিস্তানে হামলা ও সহিংসতার ঘটনা বেড়েছে। দেশজুড়ে বিভিন্ন টার্গেটে চালানো এই হামলার বিষয়ে তালেবান গোষ্ঠীকে দায়ী করেছে আফগান সরকার।
পাকিস্তান সবসময়ই যুক্তরাষ্ট্র-তালেবান এবং ইন্ট্রা-আফগান শান্তি আলোচনাকে সমর্থন জানিয়ে এসেছে। আর যুক্তরাষ্ট্রে নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর তালেবান-মার্কিন চুক্তি মেনে চলাসহ পুরো শান্তি প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে ওয়াশিংটনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দেশটি।

কোরেশি বলেন, ‘আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠার একটা সুযোগ রয়েছে। আমি মনে করি, তাদের (বাইডেন প্রশাসন) এটা উপলব্ধি করা উচিত। সুতরাং এর (শান্তি প্রক্রিয়ার) বিপরীত কিছু করা ঠিক হবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘শান্তি প্রক্রিয়াকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। কারণ, দীর্ঘ সময় পর আমরা সঠিক দিকে আমাদের যাত্রা শুরু করতে পেরেছি।’
গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে তালেবানের সঙ্গে চুক্তি করে যুক্তরাষ্ট্র। চুক্তিতে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে নির্দিষ্ট একটি টাইমলাইন উল্লেখ ছিল।

এখন বাইডেন প্রশাসন দায়িত্ব নেওয়ার সময় দেশটিতে আড়াই হাজার মার্কিন সেনা অবস্থান করছে।
গত বছরের যুক্তরাষ্ট্র-তালেবান ঐতিহাসিক চুক্তি অনুযায়ী, চলতি বছরের এপ্রিল মাসের মধ্যে সকল মার্কিন সেনাকে আফগানিস্তান ত্যাগ করতে হবে। কিন্তু সহিংসতা না কমলে সেনা প্রত্যাহার বিলম্বিত হতে পারে বলে সম্প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছে পেন্টাগন।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা উদ্বিগ্ন, কারণ সহিংসতা চলমান পরিবেশকে নষ্ট করে দিতে পারে।’
সাম্প্রতিক সময়ে আফগানিস্তানে রক্তক্ষয়ী হামলার সংখ্যা অনেক বেড়েছে। এজন্য তালেবানকে দায়ী করে আসছে দেশটির প্রশাসন। সম্প্রতি দেশটির গোয়েন্দা প্রধানের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে জঙ্গী গোষ্ঠিটি ১৮ হাজারের বেশি হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল।

গত ১৭ জানুয়ারি কর্মস্থলে যাওয়ার পথে দুই নারী বিচারককে গুলি করে হত্যা করে বন্দুকধারীরা। হামলায় আহত হয় আরও দুজন। এছাড়া দেশটিতে সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী ও সরকারপন্থী মানুষজনকে হত্যার চেষ্টা করা হচ্ছে।
এর আগে একজন প্রখ্যাত অভিনেত্রীকে লক্ষ্য করে তার বাড়ির সামনে থাকা গাড়িতে গুলি করে বন্দুকধারীরা।
এসব হামলা বা হত্যার বেশিরভাগের দায় কোনো জঙ্গি সংগঠনই স্বীকার করেনি। তবে দেশটির সরকারি কর্মকর্তারা এসব হত্যার জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিরোধীপক্ষ সশস্ত্র গোষ্ঠী তালেবানকে দায়ী করে থাকেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাম্প্রতিক এই হামলাগুলোর অধিকাংশই ঘটাচ্ছে তালেবান। চলমান সংলাপে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে এই পন্থা বেছে নিয়েছে উগ্র এই জঙ্গি গোষ্ঠীটি।
নাইন-ইলেভেনের হামলার পর তালেবান সরকারকে উৎখাত করতে আফগানিস্তানে হামলা করে মার্কিন সেনারা। তবে সেসময় তালেবান গোষ্ঠীকে ক্ষমতা থেকে সরানো গেলেও পুরোপুরি নির্মূল করতে পারেনি আমেরিকা।
আর তাই প্রায় ২০ বছর পর আফগানিস্তান থেকে ধীরে ধীরে নিজেদের সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে ওয়াশিংটন। এখন বাইডেন প্রশাসন কী করে সেটাই দেখার বিষয়।
সূত্র: আলজাজিরা
টিএম