মূল্যবৈষম্য: ইউরোপের দ্বিগুণ দামে টিকা কিনছে আফ্রিকা

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাসের টিকা প্রয়োগ শুরু হয়েছে। টিকাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে একেক দেশ একেক উদ্যোগ হাতে নিয়েছিল। অনেক দেশই টিকা আদান-প্রদানকে কূটনীতির কৌশল হিসেবে বেছে নিয়েছে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলো সহজেই নিজেদের টিকাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করলেও মধ্যম ও নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে ব্যাপকহারে টিকা প্রয়োগ নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। সেইসঙ্গে মাথাচারা দিচ্ছে দেশভেদে টিকার মূল্যবৈষম্য।
দক্ষিণ আফ্রিকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইউরোপীয় দেশগুলোর চেয়ে প্রায় আড়াইগুণ বেশি দামে তাদেরকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কিনতে হচ্ছে।
করোনায় আফ্রিকার সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ দেশটি ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে কমপক্ষে ১৫ লাখ ডোজ টিকার ক্রয়াদেশ দিয়েছে। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে যেগুলো হাতে পাওয়ার কথা রয়েছে।
দেশটির একজন জ্যেষ্ঠ স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার এএফপিকে বলেন, টিকা কিনতে তাদের ডোজপ্রতি পাঁচ দশমিক ২৫ ডলার গুনতে হচ্ছে। যা অধিকাংশ ইউরোপীয় দেশের তুলনায় প্রায় আড়াইগুণ বেশি।
টুইটারে বেলজিয়ান মন্ত্রীর ফাঁস করা তথ্যানুযায়ী, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কিনতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোকে ডোজপ্রতি দুই দশমিক ২৬ ডলার খরচ করতে হবে।
অ্যাস্ট্রাজেনেকা ফ্রান্স নভেম্বরে এএফপিকে জানিয়েছিল, বৃহৎ জনগোষ্ঠীর যথাসম্ভব টিকাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে প্রতি ডোজের দাম হতে পারে দুই দশমিক ৫০ ডলার।
দক্ষিণ আফ্রিকার মন্ত্রণালয়ের দাবি করা দামের বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাওয়া হলে অ্যাস্ট্রাজেনেকা তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেয়নি।
দক্ষিণ আফ্রিকার স্বাস্থ্য বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল আনবান পিলে জাতীয় স্বাস্থ্য বিভাগের পাঁচ দশমিক ২৫ ডলার দামে টিকা কেনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। পিলে স্থানীয় একটি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, উচ্চ আয়ের দেশগুলো গবেষণা ও উন্নয়নে অবদান রাখায় ছাড় হিসেবে তারা তুলনামূলক কম দামে টিকা পাচ্ছে।
দক্ষিণ আফ্রিকায় এখন পর্যন্ত ১৩ লাখের বেশি মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ৩৮ হাজার ৮০০ জনের। গত বছর প্রায় দুই হাজার দক্ষিন আফ্রিকান টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে অংশ নেন।
সম্পদশালী দেশ ও টিকা প্রস্তুতকারীদের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে টিকা সরবরাহে ঘাটতির আশংকা তৈরি করেছে।
যদিও ‘টিকা জাতীয়তাবাদ’ ও ‘উচ্চ মূল্য’ নিয়ে সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
দক্ষিণ আফ্রিকার অ্যাস্ট্রাজেন কার টিকার ক্রয়াদেশ ২০২১ সালের মধ্যে ২০ লাখ ডোজ হস্তান্তরের অংশ।
করোনা টিকার বৈশ্বিক উদ্যোগ ‘কোভ্যাক্স’ এর আওতায় এপ্রিল ও জুনে দেশটির ১০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনা সম্ভব হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
আফ্রিকান ইউনিয়ন ও দ্বি-পক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে বাকি টিকাগুলো বিতরণ করা হবে। যদিও এ সম্পর্কে এখনও কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।
রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট আফ্রিকান ইউনিয়নকে ১০ কোটি ডোজ টিকা হস্তান্তরে প্রস্তুত রয়েছে। যেগুলোর প্রতি ডোজের মূল্য তিন ডলার।
আফ্রিকার বিরোধী গ্রুপগুলো দেশটির টিকা নীতির সমালোচনা করেছে। দ্বিগুণ দামে টিকা কিনতে দূর্বল পরিকল্পনা ও বিলম্বিত আলোচনাকে দায়ী করছে ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স পার্টি।
দ্যা ট্রেড ইউনিয়ন সলিডারিটি এবং স্বনামধন্য অধিকার গ্রুপ ‘আফ্রিফেরাম’ আফ্রিকান সরকারে স্বচ্ছতা আনয়নে যৌথভাবে আইনি লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছে।
করোনার নতুন ধরনের আক্রমণে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ সামলাতে লড়ছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ২০২১ সালের মধ্যে হার্ড ইমিউনিটি অর্জনে দেশটির দুই তৃতীয়াংশ মানুষকে টিকার আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে আফ্রিকা সরকার।
সূত্র: দ্যা গার্ডিয়ান
এসআরএস