‘তারা ব্যবহার করে ওয়াকি-টকি, ডাকাতির পর পালিয়ে যায় ট্রেনে’

ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ডাকাতির অভিযোগে সংঘবদ্ধ বাংলাদেশি ১১ সদস্যের এক চক্রের অন্তত তিনজনকে আটক করেছে দেশটির পুলিশ। রোববার এবং সোমবার রাতে উত্তরপ্রদেশের পুলিশের সঙ্গে এই চক্রের সদস্যদের গোলাগুলির পর তাদের আটক করা হয়।
দেশটির ইংরেজি দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশি তরুণদের একটি চক্র; যাদের প্রত্যেকের বয়স ২০ এর কোঠায়, রাজ্যে রাজ্যে দাপিয়ে বেড়াতো, গভীর রাতে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে ডাকাতির পর গ্রেফতার এড়াতে ট্রেনযোগে পালিয়ে যেতো। উত্তরপ্রদেশের লখনউয়ের পুলিশ অবশেষে এই চক্রের তিন সদস্যকে আটক করেছে।
১১ জনের এই চক্রের সদস্যরা দুর্বল সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারতে ঢুকে পড়ার পর দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে ট্রেনযোগে চলাচল করে। ডাকাতির সময় নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের জন্য ওয়াকি-টকি ব্যবহার করেছিল। যে কারণে রাজ্য পুলিশ তাদের ট্র্যাকিং করতে ব্যর্থ হয়।
লখনৌয়ের পুলিশ কমিশনার ধ্রুব কান্ত ঠাকুর বলেছেন, লখনৌয়ের মালহারে ওই চক্রের সদস্যরা ডাকাতির পরিকল্পনা করছিলেন। পুলিশের একটি টহল দলের সদস্যরা মালহার রেলওয়ে স্টেশনের কাছে তাদের দেখতে পায়।
‘সোমবার রাত ১টা ৪৫ মিনিটের দিকে পুলিশের টহল দলের সদস্যরা কয়েকজন মানুষকে অস্ত্রসহ গোমিতনগরের মালহার রেলওয়ে স্টেশনের ট্র্যাকে ঘোরাঘুরি করতে দেখেন। পরে পুলিশের সদস্যরা তাদের থামার আহ্বান জানান। কিন্তু তারা দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে এবং পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে।’
পুলিশ পাল্টা গুলি চালালে ওই চক্রের দুই সদস্য আহত হয় এবং তারা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। মোট তিনজনকে পুলিশ আটক করলেও বাকিরা পালিয়ে যায় বলে জানান লখনৌয়ের পূর্ব জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার সঞ্জীব সুমন।
আটক তিনজনই বাংলাদেশের বাগেরহাট জেলার বাসিন্দা। তারা হলেন, শেখ রুবেল (২৬), আলম (২৭) এবং রবিউল (২৩)। লখনৌ পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃতরা বলেছে, ভারতে ঢুকে ডাকাতি চালানোর আগে বাংলাদেশে তারা এক মাসের বিশেষ প্রশিক্ষণ নিয়েছে।
পুলিশ বলছে, অভিযুক্তরা অনায়াসে ১৫ ফুট উঁচু দেওয়াল থেকে লাফিয়ে পড়তে পারে। হ্যাক-স্য ব্লেড দিয়ে গ্রিল কাটা, স্ক্রু ড্রাইভার ব্যবহার করে দরজা খোলার বিশেষ প্রশিক্ষণও আছে তাদের।
দেশটির কর্মকর্তারা বলেছেন, যে কোনও ধরনের আকস্মিক হুমকি মোকাবিলায় তারা দেশীয় পিস্তলের ব্যবহার এবং নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের জন্য শুধুমাত্র বাংলায় কথা বলে।
পুলিশ বলছে, এই চক্রের সদস্যদের বাংলাদেশে প্রশিক্ষণ দেন হামজা নামের এক ব্যক্তি। তিনি বাংলাদেশে বসবাস করেন। চক্রের সদস্যরা ভারতে ডাকাতি শেষে অর্থ নিয়ে ফেরার পর ৩০ শতাংশ হামজাকে দেয়। পালিয়ে যাওয়া অন্য ৮ জনকে ধরতে পুলিশের অভিযান চলছে বলে জানানো হয়েছে।
জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃত তিনজনই উত্তরপ্রদেশের বিভূতিখণ্ড, চিনহাটে দু’টি ডাকাতি এবং বারাণসীর রোহানিয়া থানা এলাকায় তিনটি ডাকাতির সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। এছাড়াও তারা দেরাদুন, বেঙ্গালুরু, কাটনি, ভুবনেশ্বর এবং দিল্লির আনন্দ বিহারে ডাকাতির কথা স্বীকার করেছে। উত্তরপ্রদেশসহ দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে দায়েরকৃত মামলায় এই অভিযুক্তরা পুলিশের ওয়ান্টেড অপরাধীর তালিকায় আছে।
ঠাকুর বলেছেন, কিছু ডাকাতির পর চক্রটি বাংলাদেশে পালিয়ে যেত। যে কারণে তাদের আটক করা যায়নি। গত বছরের ৬ অক্টোবর কাঠৌটা ঝিল এলাকা এবং একই বছরের ডিসেম্বরে চিনহাট এলাকায় ডাকাতির ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল বলে জানিয়েছেন তিনি।
লখনৌ পুলিশ বলছে, এই চক্রটি বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশিকে নিয়ে গঠিত; যাদের অনেকেই একই সময়ে বিভিন্ন রাজ্যের ট্রেন স্টেশনে অবস্থান নেয়। বাংলাদেশে অবস্থানরত হামজাই তাদের পরিচালনা করে। এই হামজা ওই চক্রটির প্রধান।
তিনি বলেন, লখনৌ গত ৭ অক্টোবর রাতে এবং গোমতিনগরে ৮ অক্টোবর ডাকাতির চেষ্টা চালায় এই চক্রের সদস্যরা। তার আগে গত ১৫ সেপ্টেম্বর মাল পুলিশ স্টেশন এলাকায় ডাকাতি করে তারা। তাদের আটকের জন্য আমরা অভিযান জোরদার করেছিলাম। অবশেষে তাদের আটক করতে সফল হয়েছি।
উপ-পুলিশ কমিশনার সুমন বলেন, বাংলাদেশি এই চক্রটি পশ্চিমবঙ্গের ২৪ পরগনা জেলা হয়ে ভারতে প্রবেশ করে। তারপর তারা যেকোনও শহরের ট্রেনে উঠে পড়তো। ডাকাতির পর ট্রেনে করেই অন্য রাজ্যে পালিয়ে যায় তারা; সেখানে লুটের মালামাল ও স্বর্ণালঙ্কার বিক্রির পর নিজেদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা জমা করতো।
এসএস