মিয়ানমার থেকে ৪০০ কোটি টাকার চাল কিনছে বাংলাদেশ

১০ লাখেরও অধিক রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পরস্পরবিরোধী অবস্থানে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। বারবার বলার পরও সেই রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেয়নি দেশটি। তারপরও মিয়ানমারের নিকট থেকে বাংলাদেশ ৪০০ কোটি টাকার চাল কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে চালের ঘাটতি পূরণে রোহিঙ্গা সংকট আপাতত এক পাশে রেখে মিয়ানমারের নিকট থেকে এক লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ। এমনকি এই চালের মূল্যও চূড়ান্ত করা হয়েছে।
সে অনুযায়ী প্রতি মেট্রিক টন চালের দাম পড়বে ৪৮৫ মার্কিন ডলার বা ৪১ হাজার টাকা (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা দরে)। এই হিসাবে এক লাখ মেট্রিক টন চালের দাম পড়বে প্রায় ৪১২ কোটি ২৫ লাখ টাকা।
এদিকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানআরা খানমকে উদ্ধৃত করে রোববার বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, সরকার থেকে সরকার (জি টু জি) চুক্তিতে সব ধরনের খরচসহ প্রতি মেট্রিক টন চাল ৪৮৫ মার্কিন ডলার মূল্যে আমদানি করা হবে।
তিনি বলেন, দাম কমিয়ে রাখার বিষয়টিকে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। খুব দ্রুত এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে এবং আগামী এপ্রিল মাস থেকে ধাপে ধাপে চাল আসা শুরু হবে বলেও জানান তিনি।
এছাড়া জি-টু-জি পদ্ধতিতে ভারতের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠান এনএএফইডি থেকেও দেড় লাখ মেট্রিক টন চাল কিনছে বাংলাদেশ।
খাদ্য সচিব আরও বলেন, ‘সরকারের সঙ্গে সরকারের চুক্তির মাধ্যমে আমরা ভারত থেকে আরও চাল কিনতে পারি।’
এবিষয়ে ভারতের আরও বেশ কয়েকটি রাষ্ট্রীয় সংস্থার সঙ্গে খাদ্য মন্ত্রণালয় আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম চাল উৎপাদনকারী দেশ। বাংলাদেশে বার্ষিকভাবে মোট চাল উৎপাদন হয় প্রায় ৩৫০ লাখ মেট্রিক টন। এর পুরোটাই প্রায় দেশের মানুষের জন্য লেগে যায়। এছাড়া বন্যা ও খরার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সৃষ্ট ঘাটতি মেটাতে বাংলাদেশকে চাল আমদানি করতে হয়।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে সেনা অভিযান শুরুর কয়েক মাসের মধ্যে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। আগে থেকে বাংলাদেশে ছিল আরও চার লাখ রোহিঙ্গা।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মাঝে একটি চুক্তি হয়েছিল। ওই চুক্তি অনুযায়ী ২০১৮ সালের ২২ জানুয়ারি থেকে প্রত্যাবাসন শুরুর কথা ছিল। তবে চুক্তি করলেও সেই প্রত্যাবাসন আজও শুরু হয়নি। ২০১৯ সালে দুই দফা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও রাখাইন রাজ্যের নিরাপত্তা পরিবেশ নিয়ে শঙ্কার কথা তুলে ফিরতে রাজি হননি রোহিঙ্গারা।

মিয়ানমার থেকে সর্বশেষ তিন বছর আগে চাল আমদানি করেছিল বাংলাদেশ। রয়টার্স বলছে, রোহিঙ্গা সংকটের কোনো সমাধান না করেই এবার মিয়ানমার থেকে চাল আমদানি তথা বাণিজ্যিক সম্পর্ক শুরু করছে ১০ লাখের বেশি শরণার্থীর ভারে জর্জরিত এই দেশটি।
সূত্র: রয়টার্স
টিএম